আদালতের নিকট স্বামীসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আকুতি জানিয়েছেন ৭১ টিভির সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা। তার স্বামী ৭১ টিভি থেকে চাকরিচ্যুত বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের আদালতে মিরপুর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে তিনি এই আকুতি জানান।
আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান ফারজানা রুপা। বিচারক তাকে আইনের ভেতরে থেকেই কথা বলতে অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে ফারজানা রুপা কাঠগড়ার সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, “আমার ছোট্ট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনই কারাগারে। ছয় মাস হয়ে গেছে। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চাই।”
ফারজানা রুপা দপ্ততির আকুতি
শুনানির শেষে আদালত ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। এর আগে এদিন সকালে প্রিজন ভ্যানে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয় ফারজানা রুপাকে। এরপর তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় নারীদের সেলে রাখা হয়। একইভাবে সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে রুপার স্বামী শাকিল আহমেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর হাজতখানার পুরুষ সেলে তাকে রাখা হয় আলাদা।

সেলে রাখায় দেখা হয় না এই সাংবাদিক দম্পতির। কিছুক্ষণ পর মিরপুর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে হাজির করতে প্রস্তুত করা হয় রুপাকে। হাতে হাতকড়া, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো হয় তাকে।
এরপর রুপাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আরিফ হাসানের সঙ্গে সারি সারি করে ইজলাসে তোলা হয়।
ইজলাসে ঢোকার পর কাঠগড়ায় ওঠার পরেই রুপা তার স্বামী শাকিল আহমেদকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু দেখা না মেলায় উদ্বিগ্ন দেখা যায় তাকে। কয়েক মিনিট পর সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের সঙ্গে হাজতখানা থেকে সাংবাদিক শাকিলকে ইজলাসে তোলা হয়।
আরও পড়ুনঃ মেজর ডালিম এর ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার
আদালতে ফারজানা রুপা দম্পতির আকুতি বিশ্লেষণ
দর্শক, আজকে একটা রিপোর্ট পড়ে আসলে একটু খারাপই লাগলো। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতে যে আকুতি জানালেন সাংবাদিক ফারজানা রুপা, সেটা পড়ে খারাপ লাগছে। খারাপ লাগছে এই কারণে যে, আমার অনেক রাগ আছে, অনেক ক্ষোভও আছে। কেননা গত ১৫ বছরে সাংবাদিকরা যেই ধরণের আচরণ করেছে টেলিভিশনগুলোতে, যেভাবে সাংবাদিকতা করেছে, তা একধরনের ক্যাডারভিত্তিক কর্মকাণ্ড। অর্থাৎ, তারা আসলে সাংবাদিক না, বরং আওয়ামী লীগের ক্যাডার হয়ে কাজ করেছে এবং মানুষকে খুবই হতাশ করেছে।
বিশেষ করে এর শীর্ষে ছিল ৭১ টিভি। তো সেই টিভির ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ, কারোরই ভূমিকা ভালো না। যাইহোক, এটা হয়তো রাজনৈতিক বিতর্ক থাকতে পারে। তাদের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সেটারও তো একটা মাত্রা থাকা উচিত। আপনার কাছে আমি এখন কথা বলছি, ধরুন, আমি কি যা খুশি তাই বলবো? গালিগালাজ করবো ইচ্ছামতো? না, আমাকে যুক্তির মধ্যে থেকেই কথা বলতে হবে।
যে কারণে খারাপ লাগলো, সেটা হচ্ছে—রুপার কথাটা। দেখুন, সে বলেছেন, “আমার ছোট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনেই কারাগারে। ছয় মাস হয়ে গেছে। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।”
এখন আদালতের ব্যাপারে আমি তো বলবো না যে এই আবেদনটা মঞ্জুর করুক। কারণ এখন সরকারের মানবিক দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত। কিন্তু যারা অমানবিক একটি শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য কাজ করেছে, তাদের প্রতি মানবিক হওয়া কঠিন। তবে সন্তানের জন্য আমি আবেদন করতেই পারি। কারণ আমি জানি, সন্তানের জন্য এটা কষ্টের।
কিন্তু আমি জানি না, গত ১৫ বছরে কতজন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ছাত্র, শ্রমিক, কত মানুষ মারা গেছে। তাদেরও তো সন্তান আছে। কত বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে, কত বাবা-মার সন্তান পঙ্গু হয়ে গেছে।
এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি কি একটা মানবিক কথা বলতে পারি? যে ফারজানা রুপাকে ছেড়ে দেয়া হোক? তার সন্তানের কথা চিন্তা করে? এটা বলা কঠিন। কারণ যখনই বলবো, তখন প্রশ্ন উঠবে যে, অন্যদের কী হবে?
আমাদের রাজনীতি কত নিষ্ঠুর হয়ে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো যদি অন্তত একটু দায়িত্বশীল আচরণ করতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
৭১ টিভির মোজাম্মেল বাবুর হাবভাব কি সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালার মধ্যে পড়ে? তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই যদি পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতো, তাহলে কি এমন হতো?
আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, ধরুন আমি চরম হাসিনা-বিরোধী। আমাকে দিন অনুমতি। আমি বিরোধিতা করবো, কিন্তু সত্য ঘটনা বলবো। সরকারের সমর্থক হলেও সত্য বলবো। কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা কি গত ১৫ বছরে এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছে? করেনি।
বরং আমরা যারা স্বাধীনভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছি, আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা বেকার ছিলাম। আমাদের গ্রেফতার করার ভয়ে অসুস্থ থাকতাম।
আরও জানুন- পিলখানা হত্যাযজ্ঞ যেভাবে কারণে ঘটানো হয়
কিন্তু তারা (৭১ টিভি) সবকিছু বিষাক্ত করে গেছে। বিএনপি-জামাতকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নির্বাচনের সময় চুপ থেকেছে।
স্বামীসহ পাঁচ মাস ধরে কারাগারে বন্দি সাংবাদিক ফারজানা রুপা আদালতে দাঁড়িয়ে তার শিশু কন্যার কথা বিচারককে বললেন। সন্তানের জন্য হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় চাইলেন জামিন। তবে তার সেই আর্জিতে সাড়া দেননি মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান। তিনি রুপা ও তার স্বামী শাকিল আহমেদকে মিরপুর থানার একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন।
রুপা ও শাকিল আহমেদ ৭১ টিভির সাবেক কর্মী। ক্ষমতার পালাবদলের পথে দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদাবর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সোমবার কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় ফারজানা রুপাকে। আর শাকিল আহমেদকে কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে আনা হয়। তাদের আদালতে হাজির করা হয় হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে।
রুপা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, “আমার ছোট্ট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনই কারাগারে। ছয় মাস হয়ে গেছে। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।”
এই দম্পতির এই স্মৃতি কখনো ভুলবে না। তাদের জীবনে এই ঘটনা চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রুপা তার স্বামী শাকিল আহমেদকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু দেখা না মেলায় তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর শাকিল আহমেদকে আদালতে আনা হয়। কাঠগড়ায় ওঠার পর তারা একে অপরকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এই দম্পতি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন। কখনো কানে কানে ফিসফিস করেন, কখনো মৃদু হাসেন। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যতক্ষণ ছিলেন, নিজেদের মধ্যে আলাপ চলতেই থাকে।
রুপা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিচারকের সামনে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমার ছোট্ট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনই কারাগারে ছয় মাস ধরে বন্দি। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।”
বিচারক তার আবেদন শোনেন, কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি। মিরপুর থানার একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
এই ঘটনা শুধু রুপা ও শাকিল আহমেদের জন্য নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য একটি বড় ধাক্কা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পেশাগত জীবনে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু আজ তারা কারাগারে বন্দি।
এই দম্পতির জীবন এখন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের ছোট্ট সন্তানও বাবা-মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জীবন কতটা কঠিন হয়ে উঠেছে, তা কেবল তারাই বুঝতে পারছেন।
মানবিকতার দিক থেকে দেখলে, একজন মা ও বাবার জন্য সন্তান থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু আইন তার নিজস্ব পথে চলে। আদালত মানবিক আবেদন শোনেন, কিন্তু বিচার আইনের মধ্যে থেকেই করেন।
এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ বলছেন, এটা তাদের পেশাগত দায়িত্বে অবহেলার ফল। আবার কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
যাই হোক, এই ঘটনা সাংবাদিকতার নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবনার জায়গা তৈরি করেছে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের মতো সাংবাদিকরা যদি তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতেন, তাহলে হয়তো আজ তারা এই পরিস্থিতিতে পড়তেন না।
সাংবাদিকতার নীতিমালা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখা শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য নয়, বরং সমাজের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের মাধ্যমে সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করেন।
Comments ২