আয় বাড়াতে চান না এমন মানুষ কি আছে? নিশ্চয়ই উত্তর হবে না। এই দুনিয়ায় টাকাকে বলা হয় সেকেন্ড গড। এটি দিয়ে করা যায়না এমন কাজের সংখ্যা খুবই কম। তাই নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে অবশ্যই সময়ের সেরা স্কীলগুলো শিখে নিতে হবে। তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।
তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে গতানুগতিক কাজের জনবলের প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে। ছোট বড় সকল প্রতিষ্ঠানই অটোমেটেড টুলস ব্যবহার করে ম্যানেজমেন্ট কষ্ট কমিয়ে আনার প্রয়াস চালাচ্ছে। আগে যদি ১০০ জনকে কাজে নেওয়া হতো এখন নেওয়া হয় ১০ জন। এর অন্যতম কারন, প্রযুক্তিগত টুলস্ ব্যবহার। আর এই প্রযুক্তি হলো এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স।
২০২৫ সালের ভবিষ্যৎ
আপনি যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের টুল ব্যবহার করা না শিখেন, ২০২৫ সালে আপনি বুঝতেও পারবেন না কত বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হবে, চায়না জিতবে। ইজিপ্টের সিসি পতনের ভালো সম্ভাবনা আছে। নেতানিয়াহুর ফল ইসরাইলে খারাপ হবে, কারণ এটি তাদের অফিসিয়াল রিটেন প্রেডিকশন।

এখন নরওয়ের জিডিপির চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, আপনি কি ঐ দশজনের মধ্যে একজন হতে পারবেন? এটি নির্ভর করবে আপনি কতোটা এফেক্টিভলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে পারেন তার ওপর।
২০২৩ সালের শুরুতে আমি যে প্রেডিকশনগুলো করেছিলাম, এখন দেখলে বোঝা যাবে যে তার প্রায় সবগুলোই সঠিক ছিল। তাহলে ২০২৫ সালে কী হতে যাচ্ছে?
আয় বাড়াতে ক্যারিয়ার প্রেডিকশন
প্রথমে বলব আন্তর্জাতিক মহলে, তারপর বলব জাতীয় আঙ্গিনায়। এরপর আমি ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে বলব, যা যে কেউ প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৪ ঘণ্টা ব্যয় করলেই অসাধারণ ক্যারিয়ার ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অর্জন করতে পারবে।
অনেকে বলে, আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, আমি জ্যোতিষী নই! আমার উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা, কারণ কেউই নিশ্চিতভাবে জানে না ভবিষ্যতে কী হবে। তবে, যত বেশি প্রেডিকশন ও প্রস্তুতি থাকবে, তত বেশি আমরা ঝুঁকি কমাতে পারব।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক মহলের প্রসঙ্গে আসি—ব্ল্যাকরক ও ভ্যানগার্ডের মতো হেজ ফান্ড কোম্পানিগুলো, যারা সম্মিলিতভাবে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ২০২৫ সংক্রান্ত প্রেডিকশন প্রকাশ করেছে।
তাদের মতে, বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানিগুলো (ফেসবুক, মাইক্রোসফট, গুগল ইত্যাদি) এখন এমন পরিমাণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে বিনিয়োগ করছে, যা নরওয়ের সম্পূর্ণ জিডিপির চেয়েও বেশি! এর মানে, ২০২৫ সালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অস্বাভাবিক উন্নতি ও নতুন আবিষ্কার আসবে, যা বিশ্বকে চমকে দেবে।

এই প্রযুক্তিগুলো যখন বাস্তব জীবনে ব্যবহৃত হবে, তখন পৃথিবীর বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে—এটি শুধুই একটি অনুমান নয়, বরং বিনিয়োগের বিশাল পরিমাণ থেকে এটি স্পষ্ট। পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মানুষ এবং বিশাল মূলধন এখন এই প্রযুক্তির পেছনে ব্যয় হচ্ছে। ফলে, ২০২৫ সালে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নতুন যুগ দেখতে পাব।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ফিরে এসেছেন, এবং এবার তার দলে সিনেট ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশাল গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। ফলে, তিনি ক্ষমতার বিশাল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফিরে আসবেন।
তো, সে এমন কিছু পলিসি বা এমন কিছু প্রপোজাল আনবে, যেটা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের টেনশন অনেক বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখনই টেনশন বাড়বে, তখন সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে একটি নতুন জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হবে। অলরেডি তাদের মধ্যে কিছু টেনশন আছে, কিন্তু সেই টেনশনটা আরও বাড়বে।
ব্ল্যাক রকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেডিকশন
এটা হচ্ছে ব্ল্যাক রকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেডিকশন। এবার আমি বলি, আমি কী মনে করি।
প্রথমত, আমি মনে করি, যদি পার্টি করা হয়, তাহলে মুসলিমদের পয়েন্ট থেকে ইউরোপিয়ানদের যুদ্ধ বন্ধ হবে। এই বছর, ইনশাআল্লাহ। ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কারণ হবে, যখন ট্রাম্প ইউক্রেনে ফান্ডিং বন্ধ করে দেবে।
তখন রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনকে আলোচনায় বসতে বাধ্য হতে হবে। যখনই ইউক্রেন আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে, তখনই ইউক্রেন ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাবে। এটি হবে আমেরিকার একটি বিশাল ভূ-রাজনৈতিক পরাজয়।
আমেরিকা তাইওয়ানে আরও বেশি হস্তক্ষেপের চেষ্টা করবে। তাইওয়ান হলো চীনের সীমান্তবর্তী দেশ, যেমন ইউক্রেন রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ। চীন কোনোভাবেই তাইওয়ান ছাড়তে পারবে না।
তাই, আমেরিকা যত বেশি তাইওয়ানকে পাওয়ার চেষ্টা করবে, বাস্তবে তত বেশি চীনের কাছে পরাজিত হবে। একইভাবে, আমেরিকা যত বেশি চীনের বিরুদ্ধে যাবে, তারই ফলে চীন থেকে যা কিছু আমেরিকায় যাবে, তার দাম বাড়বে।
সাময়িকভাবে এতে চীন কিছুটা সমস্যায় পড়বে, কিন্তু বাস্তবে চীন এসব পণ্য আফ্রিকা, এশিয়া এবং অন্যান্য বাজারে বিক্রি করবে। ফলে চীনই বিজয়ী হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব যত বাড়বে, চীন তত বেশি লাভবান হবে এবং আমেরিকা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমেরিকা যদি অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে মনোযোগ দেয়, তাহলে তাদের বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে। আমেরিকায় যখনই মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তখনই সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। এটি আমেরিকা, ইউরোপ এবং কানাডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমেরিকায় ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বর্ণবাদ বৃদ্ধি পাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ট্রাম্প মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিতে শুরু করবে এবং অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতি গ্রহণ করবে। তিনি প্রচারণাতেও বলেছেন যে তিনি অভিবাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
অনেক অভিবাসীকে আটক করে জেলখানায় পাঠানো হবে, আবার অনেককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। যারা বহু বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হবে না, কিন্তু তারা বর্ণবাদের শিকার হতে পারেন। বিশেষ করে হিজাব পরা নারীরা কিংবা যারা ধর্মীয় চর্চায় সক্রিয়, তারা বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন।
ইউরোপের অনেক দেশেও ট্রাম্পের প্রভাব পড়বে, এবং বর্ণবাদ বৃদ্ধি পাবে। এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নেতানিয়াহুর জন্য পরিস্থিতি কী হবে? ট্রাম্প ইসরায়েলের ফান্ডিং বন্ধ করবে না, তবে হয়তো যুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত ফান্ডিং দিতে চাইবে না। কারণ, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল যে তিনি আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চান এবং যুদ্ধ ব্যয় কমাতে চান।
আমরা চাই, অন্তত আমেরিকার যুদ্ধনীতি কিছুটা কমে আসুক। যদি ট্রাম্প ইসরায়েলকে ফান্ডিং করেও, তবে তিনি নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতিতে সরাসরি সমর্থন নাও দিতে পারেন। বরং তিনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য কৌশল গ্রহণ করতে পারেন।
আমার মনে হয়, মধ্যপ্রাচ্যে যদি আরব লীগের উত্থান এবং ব্রিকসের বিস্তার হয়, তাহলে আগামী ৫-১০ বছরে আমেরিকা খুব ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে।
সিরিয়ায় যা ঘটেছে, সেটা আমেরিকা চায়নি। ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইসরায়েলের জন্য বড় হতাশার কারণ। যদিও ইসরায়েল সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সেই সামর্থ্য নেই।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি
আজ থেকে ২০ বছর আগে আমেরিকার যে অর্থনৈতিক শক্তি ছিল, এখন তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। চীন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমেরিকা সেভাবে এগোতে পারছে না। আমেরিকার অর্থনীতি ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।
খুব ভালো করছে না—এটা আমেরিকান অর্থনীতিবিদদের কথা, এটা আমার কথা না। সে জায়গা থেকে ট্রাম্পের মতো একজন আস্তে আস্তে মধ্যপ্রাচ্যে ফান্ডিং কমানোর দিকে চেষ্টা করবে। অবশ্যই সে ইসরায়েলকে কখনোই ছাড়বে না, কারণ আমেরিকা ও ইসরায়েলের সম্পর্কটা শরীরের মতো।

সে ইসরায়েলকে ফান্ডিং করবে, তবে হয়তো ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ নীতিগুলোতে কম ফান্ডিং করবে। কারণ এটি যে এক্সপেরিমেন্টাল ধ্বংস হতে পারে, সেটা হয়তো সে করবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, সিরিয়ায় যা ঘটেছে, আমি মনে করি নেতানিয়াহুর পতন যেমন হবে, তেমনি ইউক্রেনে জেলেনস্কিরও পতন হতে পারে। যদিও জেলেনস্কি থাকতে পারে, তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, মিসরের সিসির পতন হওয়ারও ভালো সম্ভাবনা আছে।
কারণ, সিরিয়ার পরবর্তী ধাক্কা হতে পারে মিসর। সিরিয়ার মতো সেখানে সরাসরি গণবিপ্লব হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু সিসির পতন হওয়ার সম্ভাবনা বেশ উঁচু। যদি সিসির পতন ঘটে, ঠিক যেভাবে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছিল, সেটাও মুসলমানদের জন্য বিজয় হবে।
এটা ২০২৫ সালে হবে নাকি ২০২৬ সালে, তা বলা কঠিন। তবে আমার ধারণা, এটা ঘটার বড় সম্ভাবনা আছে। কারণ, যদি আমরা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তি কাঠামো দেখি, তাহলে চারটি শক্তি স্পষ্টভাবে দেখা যায়—একটি তুরস্ক, একটি মূলত সৌদি আরব, একটি ইসরায়েল এবং একটি ইরান।
ইরান ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে গেছে, বিশেষ করে সিরিয়া হারানোর পর। ইসরায়েলও আস্তে আস্তে দুর্বল হবে, কারণ আমেরিকার ফান্ডিং সেইভাবে আগের মতো পাবে না। তখন সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি দেশ হবে সৌদি আরব ও তুরস্ক। সৌদি আরব ও তুরস্ক যখন ঐক্যবদ্ধ হবে, তখন তারা প্রথমেই যে কাজটা করতে পারে, তা হলো সিসিকে অপসারণের চেষ্টা করা।
যদি সিসি অপসারিত হয়, তাহলে মিসরের একটি বড় অংশ ফিলিস্তিনপন্থী হয়ে যাবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি মুসলমানদের জন্য ভালো হবে, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সংকট তৈরি করবে। যেমন, সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে, ঠিক তেমনই মিসরেও সাময়িকভাবে অস্থিতিশীলতা আসতে পারে।
তবে এটা মুসলমানদের জন্য ভালো দিক হবে, কারণ একনায়ক শাসনের পরিবর্তে মুসলিম-সমর্থিত শক্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা
মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র যদি আমরা দেখি, তাহলে আমার আশা ও দোয়া থাকবে যে সৌদি আরব ও তুরস্ক একসঙ্গে কাজ করবে। কারণ, মুসলমানদের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী নেতৃত্ব সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যেই বিদ্যমান।

সৌদি আরব ও তুরস্কের বিরুদ্ধে সমালোচনা অবশ্যই থাকতে পারে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে মুসলিমদের জন্য তাদের চেয়ে ভালো কোনো নেতৃত্ব নেই। কারণ, অন্য বিকল্প দুটি হলো ইরান ও ইসরায়েল, যাদের সমর্থন করা মুসলমানদের জন্য কঠিন।
এখন যদি জাতীয় রাজনীতির প্রসঙ্গে আসি, তাহলে আমি মনে করি, বাংলাদেশে ২০২৫ সালে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব ভালো করবে—এমন কোনো সম্ভাবনাও আমি দেখি না। গত এক বছরে অর্থনীতি যেমন ছিল, ২০২৫ সালেও তেমনই থাকবে বলে আমার ধারণা। খুব দ্রুত উন্নতি হবে, এমন কিছু আশা করা যায় না।
বর্তমান সরকার খুব বেশি কঠোর নীতিতে যাবে বলে মনে হয় না। তবে বাংলাদেশে জননিরাপত্তার একটা সংকট আছে, যা গত তিন মাসে স্পষ্ট হয়েছে। এই সংকট হয়তো চলমান থাকবে। কারণ, যারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, তারা রমজানের পর বা কোরবানির ঈদের পর হরতাল দিতে পারে এবং আন্দোলন জোরদার করতে পারে।
২০২৬ সালে হয়তো নির্বাচন হতে পারে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে নির্বাচন আরও পরে হওয়া উচিত। তবে আমি যা মনে করি, তা সবসময় বাস্তবায়িত হবে, এমন নয়।
আমার ধারণা, ২০২৫ সালের জুনের পর যারা দ্রুত নির্বাচন চায়, তারা আন্দোলন বাড়াবে এবং হরতাল দিতে পারে। এই বছরের শেষ ছয় মাসে আমরা হয়তো অনেক হরতাল ও সংঘর্ষ দেখতে পাব। কারণ, একটি পক্ষ জোরালোভাবে চাইবে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক এবং তারা তাদের যুক্তি তুলে ধরবে যে বর্তমান সরকার অনির্বাচিত।
এটা নিয়ে হয়তো আমি ভিন্ন একটি পর্ব বা আলোচনার আয়োজন করতে পারি, যেখানে অন্য একজন বিশেষজ্ঞের মতামতও নেওয়া যেতে পারে।
যে ইলেকশন কবে হওয়া উচিত, আমি ইত্যাদি সংস্কার ভার্সেস ইলেকশনে আনসার—সেটা আলাদা পরের কথা। কিন্তু আমি যেটা মনে করছি, সেটা হলো—এই বছর ইলেকশন হবে না। এছাড়া, এই বছর বাংলাদেশের ইকোনমি খুব ভালো করবে—এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না।
আমি যতজনের সঙ্গে বাংলাদেশের ফিন্যান্স অথবা ইকোনমিকস নিয়ে হাই লেভেলের কাজ করি, তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তারা কেউই আমাকে এরকম কোনো আশার আলো দেখায়নি। সবার কাছেই মনে হয়েছে, এই বছর খুব বেশি ভালো কিছু হবে না। এটা একটা বড় বাস্তবতা। তার মানে চাকরির বাজার খুব বেশি ভালো থাকবে না। এই বছরের শেষের দিকে যেরকম ছিল, সেরকমই থাকবে।
তবে হ্যাঁ, আমরা সরকারি পর্যায়ে করা অপশন কম দেখবো। অর্থাৎ, আশা করা যায় টাকা পাচার কম হবে। যেটা আমরা আগের ৫-১০ বছরে দেখেছি, সেটা হয়তো কমতে পারে, বা আমরা আশা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি খুব দ্রুত ভালো হবে—এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা খুবই নাজুক। আমাদের চাকরির বাজার হঠাৎ করে খুব ভালো হয়ে যাবে, কিংবা বিদেশ থেকে বিশাল ইনভেস্টমেন্ট আসবে—সেটার সম্ভাবনাও কম।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আইএমএফ অথবা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে কিছু ইনভেস্টমেন্ট আসতে পারে। তবে সেই ইনভেস্টমেন্টগুলো আসলেও, আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল কোনো পরিবর্তন আনবে—তা নিশ্চিত নয়। তবে কিছুটা সহায়তা দিতে পারে।
ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব স্টেবল হবে—এমন সম্ভাবনা কম। আবার, মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান টেনশনেরও খুব দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে হয় না। বরং সীমান্ত এলাকায় ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আরও কিছু সমস্যা বাড়তে পারে। এটা আমার আশঙ্কা।
অর্থাৎ, জাতীয় ক্ষেত্রে আমি বলব—এই বছর বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা খুব ভালো হবে বলে মনে হয় না। জমির দাম খুব বেশি বাড়বে না। যেরকম আছে, সেরকমই থাকবে। কারণ, খুব বেশি ইনভেস্টমেন্ট আসবে না, মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত আশাবাদ আসবে না। ফলে, তারা জমি কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারও এই বছর খুব ভালো করবে বলে মনে হয় না। এটি বর্তমান গতিতেই চলতে পারে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, জুনের পর থেকে শেয়ারবাজার উন্নতি করতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই। আমার কাছে মনে হয়, শেয়ারবাজার খুব বেশি ভালো করবে না।
এখন যদি আমি একদম শেষ বিষয়ের দিকে আসি—এই বছরে আমরা কী করতে পারি, যা আমাদের ক্যারিয়ারে, ব্যবসায়, চাকরিতে বা ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে?
যে স্কিল শিখতে হবে
আমার পরামর্শ হলো—আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) টুলগুলোর সঙ্গে পরিচিত হন, শিখুন, ব্যবহার করুন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে AI টুলগুলোর সঙ্গে কাজ করুন। প্রতিদিন যদি আপনি ৩০ মিনিট সময় দেন, সপ্তাহে অন্তত ৪ ঘণ্টা AI টুল ব্যবহার করেন, তাহলে আগামী ২-৩ বছরে আপনার ক্যারিয়ারে বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে।

যদি আপনি AI টুল ব্যবহার করতে না জানেন, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে আপনি বড় সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ, আপনার আশেপাশের মানুষ যারা AI ভালোভাবে চালাতে পারবে, তারা আপনাকে অনেক পেছনে ফেলে দেবে। ইতমধ্যেই ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি এবং অন্যন্য টুল নিয়ে তোরজোর আলোচনা চলছে।
আপনি যদি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চান, নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান, বা যেকোনো ক্ষেত্রেই এগিয়ে যেতে চান—তাহলে AI আপনাকে অনেক এগিয়ে নিতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে AI ব্যবহার করা শুরু করেন, তাহলে আপনার দক্ষতা অনেক বেশি বাড়বে।
প্রথমে চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনো ফ্রি AI টুল দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে AI এর অন্যান্য টুল সম্পর্কে জানুন। এতে আপনার ক্যারিয়ারে বিশাল উন্নতি হতে পারে। শিখে নিতে পারেন এআই দিয়ে কার্টুন ভিডিও তৈরি ও ইনকাম করার কৌশল।
তারপর আস্তে আস্তে ক্যানভাসে যান। আস্তে আস্তে আপনি অন্যান্য টুল ব্যবহার করতে পারেন। আস্তে আস্তে আপনি ফেসবুকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন, অনেক কিছু ইউজ করতে পারেন। আপনি শুধু শুরু করেন।
এআই ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা
আমি এখনো দেখি যে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ এখনো শুরুই করছে না। আমরা এটাকে খুব অবহেলা করছি। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা দেখব যে কোম্পানিগুলো খুব বেশি মানুষকে নিয়োগ করছে না। আমি যখন অনেক জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করি, তখন দেখি অনেক কিছু বুঝতে পারছি না।
কারণ, চ্যাটজিপিটির কারণে সবকিছু এত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেছে যে আমি পিছিয়ে পড়ছি। কিছু বোঝার আগেই দেখছি, আমি পেছনে পড়ে যাচ্ছি।
আপনি ডাক্তার হন, ইঞ্জিনিয়ার হন, যেই পেশাতেই থাকুন—চ্যাটজিপিটি বা এআই-এর বিভিন্ন টুল শেখাটা এখন আমাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি মৌলিক কাজ হয়ে গেছে।
আমরা এটি বিনামূল্যেই করতে পারি, কিন্তু আমরা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। একসময় কান্নাকাটি করলেও লাভ হবে না, কারণ তখন দেখা যাবে আপনার আশেপাশের মানুষ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ছোট সফটওয়্যার কোম্পানির মালিকের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, এই বছর তিনি ছয়জনকে চাকরিতে নিয়োগ দিতেন, কিন্তু নেননি। কারণ, তার প্রয়োজন হয়নি। কেন? কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
এই ছয়জন কর্মীকে নিয়োগ না দেওয়ার ফলে ছয়টি পরিবার একটি নির্দিষ্ট আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো। আগে যেখানে তাদের মোট বেতন হতো ৩,০০,০০০ টাকা, এখন তিনি মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে এআই টুল দিয়ে সেই কাজ করিয়ে ফেলছেন।
এটাই বাস্তবতা। এটি মাত্র ২০২৪ সালের বাস্তবতা। তাহলে ২০২৬-২৭ সালে কী হবে? এআই-এর যে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে, তাতে দেখা যাবে কিছু মানুষ হঠাৎ করেই অনেক বেশি আয় করছে, বৈধভাবেই আয় করছে। আপনি তাদের দোষ দিতে পারবেন না। কারণ, এআই-এর সাহায্যে এখন ১০ জনের কাজ মাত্র একজন করিয়ে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন হলো, আপনি কি সেই ১০ জনের একজন হতে পারবেন? সেটা নির্ভর করছে আপনি কতটা দক্ষতার সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে পারেন, কত অপারেশন সেটার মাধ্যমে করতে পারেন এবং কতটা স্কিল আপ করতে পারেন।
২০২৫ সালেই যারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে সময় দেবে, ইনভেস্ট করবে, শেখার জন্য চেষ্টা করবে, তারা অবশ্যই জিতবে। কারণ, প্রযুক্তি তাদের সহায়তা করবেই। আর যারা ভাববে, “এগুলোর দরকার নেই, আমি যেভাবে এত বছর জীবন চালিয়েছি, সেভাবেই চালাব”—তারা সময়ের সঙ্গে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বিশেষ করে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের জন্য আমার পরামর্শ—প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করুন। টুলগুলো জানার চেষ্টা করুন, বুঝুন এআই কোথায় যাচ্ছে, কতটা আপডেট হচ্ছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি দৌড়ের ঘোড়ার মতো। আপনি যদি এই ঘোড়ায় চড়তে পারেন, তাহলে আপনি প্রযুক্তির গতির সঙ্গে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারবেন। সবাইকে ২০২৫ সালের জন্য শুভকামনা!