ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমাচার – Electronic waste or E-waste: প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন অর্থাৎ মুনাফা যতটা সম্ভব বাড়ানো, এটি একটি ধ্বংসাত্মক এবং মারাত্মক আইডিয়া। ইলেকট্রনিক্স খাতে এই আইডিয়ার জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-ওয়েস্ট তৈরি হচ্ছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালে পৃথিবীতে ৬২ মিলিয়ন টন বা ৬২০০ কোটি কেজি ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৮২% বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে এই পরিমাণ বেড়ে ৮২ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কঠিন বর্জ্য হচ্ছে এই ই-ওয়েস্ট। যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের উপযোগী না থাকলে সেটি ই-ওয়েস্টে পরিণত হয়। ই-ওয়েস্টে লেড, ক্যাডমিয়াম, মার্কারি, আরসেনিকের মতো বিষাক্ত মেটাল থাকে, যা পরিবেশ এবং প্রাণী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। যার ফলে বর্তমানে প্লাস্টিকের মতোই নতুন আতঙ্কের নাম হচ্ছে এই ই-ওয়েস্ট।
ইলেকট্রনিক বর্জ্য
এখন প্রতিবছর যে এত বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, এর পেছনে আমাদের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি দায় রয়েছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের। বর্তমান সময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এমন বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যা ছাড়া জীবনযাপন কল্পনা করা সম্ভব নয়। এমন বাস্তবতায় ই-ওয়েস্টের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই।

আজকের আলোচনায় ই-ওয়েস্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। আমি জুম্মান আছি আপনাদের সাথে, আপনারা দেখছেন বিজ্ঞান পাইসি। পৃথিবীতে তৈরি হওয়া ই-ওয়েস্টের বড় একটি অংশ তৈরি হয় উন্নত দেশে। যেমন, ২০২২ সালে ইউরোপে মাথাপিছু ১৭.৬ কেজি, অস্ট্রেলিয়াতে ১৬.১ কেজি, আমেরিকাতে ১৪.১ কেজি, এশিয়াতে ৬.৪ কেজি এবং আফ্রিকাতে মাথাপিছু ২.৫ কেজি ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ নদী বিজ্ঞান River science, Erosion and Deposition
এখন এশিয়া কিংবা আফ্রিকাতে কেন কম ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়, তা সহজেই বলা যায়। যেমন, বাংলাদেশের কথাই বিবেচনা করা যাক। এখানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত। উন্নত দেশে প্রায় প্রতিক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার হলেও, আমাদের এখানে তা হয় না। যার ফলে ই-ওয়েস্ট কম তৈরি হয়। এছাড়া আমরা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্যবহার করি এবং নষ্ট হলে তা ঠিক করে ব্যবহারের চেষ্টা করি। ফলে ই-ওয়েস্ট কম উৎপন্ন হয়।
অন্যদিকে, উন্নত দেশে ইলেকট্রনিক ডিভাইস মেরামতের চর্চা কম। কারণ সেখানে মেরামত করার চেয়ে নতুন কেনা তুলনামূলক সস্তা। তার ওপর তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। ফলে উন্নত দেশে বেশি পরিমাণ ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়।
এখন উন্নত দেশে বেশি পরিমাণ ই-ওয়েস্ট তৈরি হলেও, ই-ওয়েস্টের ক্ষতিকর প্রভাব দ্বারা কিন্তু অন্যান্য দেশগুলো আক্রান্ত। এখন এটি কিভাবে হয়, তা বলার আগে ই-ওয়েস্ট কেন ক্ষতিকর, সেটি বলা যাক।
ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অনেক ধরনের মেটাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু কিছু মেটাল যেমন লেড, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম মানুষের স্নায়ুতন্ত্র এবং কিডনি ডিজিজ তৈরি করে। এমনকি এদের দ্বারা শরীরে ক্যান্সারও সৃষ্টি হয়।
আমরা যখন এই ইলেকট্রনিক বর্জ্য মাটিতে ফেলি, তখন তা মাটির আর্দ্রতার সংস্পর্শে এসে মাটি এবং ভোগ্যপণ্য পানি দূষিত করে। যার ফলে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। অন্যদিকে, ই-ওয়েস্ট পুড়ালে বা অ্যাসিডে রাখলে তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। তাছাড়া ই-ওয়েস্ট যখন সাধারণ বর্জ্যের সংস্পর্শে আসে, তখন তা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই বর্জ্য বিষাক্ততা ছড়িয়ে মানব শরীরকে আক্রান্ত করে।
অর্থাৎ, ই-ওয়েস্ট পরিবেশ এবং প্রাণী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এর বাইরে ই-ওয়েস্টের আরেকটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। পৃথিবী একটি ক্লোজ সিস্টেম। অর্থাৎ, পৃথিবীতে থাকা বিভিন্ন ধাতুর পরিমাণ নির্দিষ্ট। এখন ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের ধাতু প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন মেটাতে পৃথিবীতে মাইনিং বা খনি থেকে ধাতু আহরণের পরিমাণ প্রচুর বেড়ে গিয়েছে।
১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রয়োজনে খনি থেকে ধাতু আহরণের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যে সকল স্থানে এই খনন কাজ পরিচালনা করা হয়, সেসব স্থানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতি যে কতটা ব্যাপক, তা নিজে ভুক্তভোগী না হলে অনুধাবন করা কঠিন।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, নতুন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস মানেই কোনো না কোনোভাবে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এখন এমন বাস্তবতায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার হয়তো বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু কাজ করা যেতে পারে। যদিও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এই দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অবশ্য সেই ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর আচরণে দায়িত্বশীলতা দৃশ্যমান নয়, যার পেছনে রয়েছে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন।
এখন ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ের বিষয়গুলো বলার আগে ব্যক্তি পর্যায়ে ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমানোর ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে, তা বলা যাক। প্রথমত, যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামত করে ব্যবহারের চেষ্টা করা। তৃতীয়ত, নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ডিভাইস অল্প কিছুদিন ব্যবহারের পরেই নষ্ট হয়ে যায়, যা ই-ওয়েস্ট তৈরির একটি অন্যতম কারণ। তার মানে, আমাদের মানসম্মত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে এবং ডিভাইসটি যেন দীর্ঘদিন সার্ভিস দিতে পারে, সেজন্য যত্নসহকারে ব্যবহার করতে হবে।
যেমন, মনে করুন আপনি আইফোনের লেটেস্ট মডেল অর্থাৎ আইফোন সিক্সটিন ব্যবহার করছেন। এখন এই ডিভাইসটি থেকে দীর্ঘমেয়াদী সার্ভিস পেতে অবশ্যই অরিজিনাল লাইসেন্স ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অ্যাপলের অরিজিনাল অ্যাডাপ্টার, কেবলসহ যাবতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মাটির নিচে পানি বা ভূগর্ভস্থ পানি রহস্য – Groundwater and Aquifer
টিউটন মেইডে আপনি সরাসরি অ্যাপলের অরিজিনাল প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন। তারা নিজেরা সরাসরি অ্যাপলের অরিজিনাল প্রোডাক্ট বাংলাদেশে আমদানি করে থাকে। যার ফলে প্রত্যেকটি প্রোডাক্টে থাকে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি। ঢাকার আজমপুরে অবস্থিত আই কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলায় টিউটন মেইডের ফিজিক্যাল শোরুম রয়েছে। আপনি চাইলে তাদের শোরুম থেকে আপনার প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট সংগ্রহ করতে পারেন কিংবা অনলাইনেও অর্ডার করতে পারেন। টিউটন মেইডের লিংক ভিডিওর ডেসক্রিপশনে পেয়ে যাবেন।
সতর্কতা: ইলেকট্রনিক ডিভাইস একেবারে ব্যবহার উপযোগী না থাকলে তা যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে রিসাইকেল হবে এমন স্থানে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। অর্থাৎ ফেরি করে যারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনেন, তাদের কাছে দেওয়া। বড় ডিভাইস যেমন টিভি, ফ্রিজ এগুলো ফেরিওয়ালার কাছে দিলেও ছোটখাটো ডিভাইস যেমন ইয়ারপিস, অ্যাডাপ্টার, ওয়েবক্যাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমরা অবহেলা করে থাকি।
এক্ষেত্রেও আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার ক্ষেত্রেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
ভিডিওর শেষ অংশে এই বিষয়গুলো বিস্তারিত বলা হবে। এখন ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে দায়িত্বহীনতার কথা বলার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে বিষয়গুলো আলোচনা করা যাক। মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো অল্পস্বল্প পরিবর্তন করে অনেক মডেলের ফোন বাজারে নিয়ে আসে, যা গ্রাহকদের ফোন আপডেট করতে উৎসাহিত করে।
এছাড়া মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের পুরনো মোবাইলকে সফটওয়্যার আপডেটের নামে স্লো করে দেয়। এর বাইরে কিছু কিছু সফটওয়্যার পুরনো মোবাইলে সাপোর্ট করে না, যার ফলে একটি মোবাইল থাকার পরেও গ্রাহকরা নতুন মোবাইল কিনতে বাধ্য হয়। মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের মোবাইল এমনভাবে তৈরি করে, যা মেরামত করা সহজ হয় না। অর্থাৎ, মোবাইলের কোনো একটি পার্টস নষ্ট হলেই সম্পূর্ণ মোবাইল অকেজো হয়ে পড়ে।
আগের মোবাইলগুলোর ব্যাটারি রিমুভেবল ছিল। কিন্তু বর্তমানে, স্ট্রিমলাইন এবং গুড লুকিং ডিজাইনের মোবাইল তৈরি করতে গিয়ে ব্যাটারিকে নন-রিমুভেবল করে মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত করে রাখা হয়। যা ব্যাটারি রিমুভ করাকে কঠিন করে তুলেছে।
সর্বোপরি, মোবাইলগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তারা দীর্ঘদিন সার্ভিস না দেয়। বিশেষ করে ব্যাটারি, যা একটি ফোনের অন্যান্য পার্টস ঠিক থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর ডাউন হয়ে যায়। এরকম বিভিন্ন কারণে নতুন ফোন কেনার চাহিদা বজায় থাকে, যার ফলাফল হিসেবে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বৃদ্ধি পায়।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করা কোম্পানিগুলো শুধু ডিভাইস তৈরির বিষয়টি লক্ষ্য রাখে। কিন্তু সেই ডিভাইসের শেষ পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে খুব একটা ভাবে না। অবশ্য বড় দুই-একটি কোম্পানি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রিসাইকেলের ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এটি মোটেও যথেষ্ট নয়।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির কোম্পানিগুলোকে রিসাইকেলড ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ডিভাইস তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে, কোম্পানিগুলোকে তাদের ডিভাইস নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা কাস্টমার থেকে সংগ্রহ করার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। অর্থাৎ, একটি ফোন যেমন সহজে কেনা যায়, ঠিক একইভাবে নষ্ট ফোন তাদের স্টোরে নির্দিষ্ট মূল্যে ফেরত দিতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে।
এমন ক্ষেত্রে বিক্রি হওয়া ফোনের বড় একটি অংশ মোবাইল কোম্পানির কাছে ফিরে যাবে। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো সেই ফোনগুলো রিসাইকেল করে পুনরায় ফোন তৈরি করবে। এক্ষেত্রে অবশ্য ফোন তৈরির খরচ কিছুটা বাড়বে। কারণ, রিসাইকেল করার বিপরীতে মাইনিংয়ের মাধ্যমে ধাতু আহরণ করা তুলনামূলক সাশ্রয়ী।
এখন মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশগত দিকগুলো বিবেচনা না করার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন। অর্থাৎ, যেকোনোভাবেই হোক মুনাফা বৃদ্ধি করা, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবকে অগুরুত্বপূর্ণ করে দেয়।
যাইহোক, এবার উন্নত দেশের ইলেকট্রনিক বর্জ্য কীভাবে গরিব দেশগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার ক্ষেত্রে পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অর্থাৎ, ইলেকট্রনিক বর্জ্য থাকা উপাদানগুলো আলাদা করার ক্ষেত্রে পরিবেশগত এবং যারা এই কাজ করবে, তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে। যার ফলে উন্নত দেশে ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
এর ফলে দেখা যায়, সব ধরনের গাইডলাইনস মেনে ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়ে যায়। যার ফলে উন্নত দেশের ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল হাউসগুলো তাদের সংগ্রহ করা ইলেকট্রনিক বর্জ্য বৈধ এবং অবৈধ পথে আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়।
এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ই-ওয়েস্টের ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ হয় না। ফলে সেসব দেশের মানুষ যথাযথ সুরক্ষা ছাড়াই স্বল্প মূল্যে নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার কাজ করে। এখন রিসাইকেলের মাধ্যমে পাওয়া কাঁচামাল আবার উন্নত দেশ কিনে নিচ্ছে।
এতে একদিকে তাদের দেশ বা দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে না, অন্যদিকে তারা রিসাইকেল করলে যে খরচ করত, তার চেয়ে কম খরচে কাজ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই উন্নত দেশের ইলেকট্রনিক বর্জ্য গরিব দেশগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
উন্নত দেশের বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক বর্জ্য শেষ গন্তব্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ঘানার মতো দেশ। এ ক্ষেত্রে ঘানার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ঘানায় প্রচুর পরিমাণ ই-ওয়েস্ট অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। সেখানে কোনোপ্রকার সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই খোলা পরিবেশে ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করা হয়, যা সেখানকার বাতাসকে বিষাক্ত করছে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ বৃষ্টি সমাচার – Rainfall, Hailstorm, Lightning and Artificial rain
ঘানায় ইলেকট্রনিক বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ হলেও ঘানার সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিষয়ে বাধা দেয় না। কারণ সেখানে ই-ওয়েস্টের বিষয়টি উপসংকটের মতো। মানুষ ই-ওয়েস্ট রিসাইকেলের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এমনিতেই তাদের দেশে বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তার ওপর ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল বন্ধ করে দেওয়া মানে বেকারের সংখ্যা বাড়ানো। যার ফলে ঘানার সরকার বিষয়টি দেখেও না দেখার মতো আচরণ করে।
এক টন আকরিক থেকে সাধারণত ৫ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, এক টন ই-ওয়েস্ট থেকে স্বর্ণ পাওয়া যায় ২৫০ গ্রাম, কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। এখন ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইকেল করে এতটা লাভজনক হওয়ার পরেও উন্নত দেশ নিজেরা কেন এটা করে না? কারণ সেই পরিবেশ দূষণ এবং শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
আমাদের দেশেও ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। এখন তারা কতটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করছে, তা আমার জানা নেই। আসলে ই-ওয়েস্ট রিসাইকেল করার ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করা কোম্পানিগুলোকেই গুরুদায়িত্ব নিতে হবে।
পৃথিবীতে যত ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার বেশিরভাগই হচ্ছে ছোট সাইজের। যেমন, ২০২২ সালে পৃথিবীতে ২০.৪ বিলিয়ন কেজি ছোট সাইজের ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্যামেরা, খেলনা, ই-সিগারেট ইত্যাদি। এরপর ১৫.১ মিলিয়ন কেজি বড় সাইজের ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস যেমন ফ্রিজ, এসির মতো ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে ১৩.৩ মিলিয়ন কেজি। স্ক্রিন মনিটর, এদের পরিমাণ ছিল ৫.৯ মিলিয়ন কেজি। আইটি প্রোডাক্ট যেমন মোবাইল, রাউটার, জিপিএস, কম্পিউটার—এই ধরনের ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়েছে ৪.৯ মিলিয়ন কেজি। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ ক্রমাগত বাড়বে, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
এখন ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমস্যার সমাধানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, তা হলো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো এবং যা ব্যবহার করছেন, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এরপর করণীয় হচ্ছে রিসাইকেল। বর্তমানে যে পরিমাণ ইলেকট্রনিক্স তৈরি হচ্ছে, তার চার ভাগের একভাগও রিসাইকেল হচ্ছে না, যা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়।
আরও পড়ুনঃ ঋতু পরিবর্তন এবং মরুভূমি Season change on earth and Desert
পৃথিবীতে খনিজ সম্পদের পরিমাণ নির্দিষ্ট। ফলে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদকে রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহারের বিকল্প নেই। পরিশেষে, কোনো একটি পুরনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্যবহার করায় সামাজিক মর্যাদা কমে না, বরং ই-ওয়েস্ট কম তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়।
স্পেসে যাত্রা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয়। তবে এই ব্যয় বহুলাংশে কমানো সম্ভব একই রকেট বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে। যার একটি সফল টেস্টিং হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, একটি রকেট বুস্টারকে বাতাসে থাকা অবস্থায় ক্যাচ করা হয়েছে। এভাবে সম্পূর্ণ রকেট পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে মানুষের মঙ্গলে পা রাখার স্বপ্ন যে একদিন সত্য হতে পারে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
স্পেসএক্সের রকেট বুস্টার ক্যাচ করা এবং মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা চলছে, এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞানপ্রেমী পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন।
Comments ২