রেডিয়েশন শব্দটি শুনলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তবে এই রেডিয়েশনের কারণেই কিন্তু পৃথিবীতে প্রাণ টিকে আছে। পৃথিবীর যে কোনো প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য রেডিয়েশন অত্যাবশ্যক। তাছাড়া বর্তমান প্রযুক্তির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে রেডিয়েশন। রেডিয়েশন ছাড়া মোবাইল, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটের মতো প্রযুক্তিগত কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
অর্থাৎ, আমাদের চারপাশ বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশনে পরিপূর্ণ। এমনকি আমাদের শরীরও রেডিয়েশন নির্গত করে। সুতরাং, রেডিয়েশন শব্দটি শুনলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে রেডিয়েশন আসলেই কী এবং রেডিয়েশন কিভাবে আমাদের জীবনের সাথে অত্যন্তভাবে জড়িত। যদি বলি রেডিয়েশন হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ, তাহলে একটু জটিল মনে হবে। কিন্তু যদি বলি রেডিয়েশন হচ্ছে আলো, তাহলে আর বুঝতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু আবার এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসবে। আলোই যদি রেডিয়েশন হয়ে থাকে, তবে রেডিয়েশন মানেই ক্ষতিকর এমন ধারণার জন্ম হলো কেন? সেই সাথে আলো কিভাবে প্রাণ এবং প্রযুক্তির চালিকা শক্তি। আজকের ভিডিওতে আলো, অর্থাৎ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ সম্পর্কে বলা হবে।
আমি জুম্মান আছি আপনাদের সাথে। আপনারা দেখছেন বিজ্ঞান পাইছি। মনে করুন, আপনি একটি স্পিকারের সামনে একটি হালকা কাগজ ধরে আছেন। এখন স্পিকার যদি অফ থাকে, তবে কাগজটি স্থির থাকবে। কিন্তু স্পিকার অন করলে কাগজটি কাঁপতে শুরু করবে। এখানে কেন কাগজটি কাঁপছে, এই বিষয়টি স্পষ্ট। স্পিকারের কম্পনের ফলে স্পিকারের সামনে থাকা বায়ুতে কম্পন তৈরি হয়েছে এবং এই বায়ুর কম্পন কাগজে আসার ফলে কাগজটি কাঁপছে। অর্থাৎ, স্পিকারের সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে কাগজটিকে প্রভাবিত করছে। তার মানে, সাউন্ডের মাধ্যমে এনার্জি ট্রান্সফার হচ্ছে।
এবার ভিন্ন একটি সিচুয়েশন কল্পনা করুন। আপনি দুটি তারের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে তার দুইটিতে যদি হাই ভোল্টেজ স্ট্যান্ড এপ্লাই করেন, তবে তার দুইটির ফাঁকা স্থানের মধ্যে স্পার্ক দেখা যাবে। এবার কিছুটা দূরে সামান্য ফাঁকা রেখে একটি কয়েল বসানো হয়। তবে প্রথম সেটআপে স্পার্ক হলে দ্বিতীয় সেটআপেও দেখা যাবে। এখন দ্বিতীয় সেটআপের ফাঁকা স্থানের ২ প্রান্তের সাথে যদি একটি এলইডি বাল্ব যুক্ত করা হয়, তবে প্রথম সেটআপে স্পার্ক হলে দ্বিতীয় সেটআপে থাকা বাল্বটি জ্বলে উঠবে।
এখন এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কিভাবে সম্ভব? এখানে বায়ুতে কম্পন হচ্ছে না। সেটআপ দুইটি তারের মাধ্যমে সংযুক্তও নেই। তাহলে কিভাবে প্রথম সেটআপের স্পার্ক দ্বিতীয় সেটআপকে প্রভাবিত করছে? এর একটি উত্তর হচ্ছে, এখানে কোনো না কোনো ফর্মে প্রথম সেটআপের এনার্জি মধ্যবর্তী স্পেসকে অতিক্রম করে দ্বিতীয় সেটআপে আসছে। এবং যেই ফর্মে এনার্জি ট্রান্সফার হচ্ছে, সেটাই হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ, অর্থাৎ আলো। এই গুরুত্বপূর্ণ এক্সপেরিমেন্টটি করেছিলেন হেইনরিখ হার্টজ ১৮৮৬ সালে। এই এক্সপেরিমেন্টেই হচ্ছে প্রথমবারের মতো রেডিও ওয়েভ পাঠিয়ে তা আবার রিসিভ করা, যা বর্তমান সময়ের তথ্য প্রযুক্তির মূল ভিত্তি।
তাছাড়া এই এক্সপেরিমেন্ট ছিল জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের ইকুয়েশনগুলোর বাস্তব প্রমাণ। ম্যাক্সওয়েলই প্রথম বলেছিলেন, আলো হচ্ছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ। এই ইকুয়েশনগুলো মূলত ইলেকট্রিসিটি এবং ম্যাগনেটিজম এই দুটি বিষয়ের মধ্যবর্তী সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। এই ভিডিওতে ম্যাক্সওয়েলের ইকুয়েশনগুলো কিছুটা বিস্তারিত বলা হয়েছে। যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্য ডেসক্রিপশন বক্সে লিংক দেওয়া থাকবে।
এখন বলা যাক, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এই বিষয়টি আসলে কী। যেকোনো চার্জ তার চারপাশে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি করে। এখন মনে করি, একটি ধাতব পাতের মধ্যে একটি মুক্ত ইলেকট্রন রয়েছে। তাহলে এই ইলেকট্রনটির চারপাশে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ইলেকট্রনটি একটি স্থানে স্থির রয়েছে। ফলে ইলেকট্রিক ফিল্ডও স্থির রয়েছে। এখনই ধাতব পাতে যদি এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট সোর্স যুক্ত করি, তাহলে ধাতব পাতের মধ্যে থাকা ইলেকট্রনটি উপরে-নিচে কম্পিত হতে থাকবে। এর কারণ হচ্ছে এসি কারেন্ট প্রতিনিয়ত তার প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে, যার ফলে ধাতব পাতের থাকা ইলেকট্রনও তার গতির দিক পরিবর্তন করে।
এখন এখানে ইলেকট্রন মুভ করছে। সেই সাথে নির্দিষ্ট সময় পরপর দিক পরিবর্তন করছে। এর ফলে সৃষ্ট ইলেকট্রিক ফিল্ডও তার দিক নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করবে, যাকে আমরা সাইন ওয়েভের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারি। অর্থাৎ, এই সাইন ওয়েভ হচ্ছে ইলেকট্রিক।
এই নতুন টেক্সটটি বানান ও যতি-বিরাম সংশোধন করে প্যারাগ্রাফ আকারে সাজানো হলো:
এখানে চমৎকার বিষয় হচ্ছে পরিবর্তনশীল ইলেকট্রিক ফিল্ডের ফলে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। আবার পরিবর্তনশীল ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ফলে ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হয়। যা ম্যাক্সওয়েল এই দুইটি ইকুয়েশনের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ইলেকট্রনের মুভমেন্টের ফলে যে পরিবর্তনশীল ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হবে, তার প্রভাবে সাথে সাথে সম্মুখে ম্যাগনেটিক ফিল্ডও তৈরি হবে। এবং এই দুইটি ওয়েভকে একসাথে বলা হয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ।
এবার প্রথম ধাতব পাতের কিছুটা দূরে অন্য একটি ধাতব পাত বিবেচনা করি। সেই সাথে এটাও বিবেচনা করি যে দ্বিতীয় ধাতব পাতেও একটি মুক্ত ইলেকট্রন রয়েছে। এখন প্রথম ধাতব পাতা থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ যখন দ্বিতীয় পাতকে অতিক্রম করবে, তখন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের প্রভাবে দ্বিতীয় পাতের ইলেকট্রন উপরে-নিচে কম্পিত হতে থাকবে। অর্থাৎ, প্রথম পাতায় যে রেটে ইলেকট্রন কম্পিত হচ্ছিল, দ্বিতীয় পাতার ইলেকট্রনটিও একই রেটে কম্পিত হতে থাকবে।
এখন দ্বিতীয় পাতায় যদি একটি ভোল্টমিটার সংযুক্ত করি, তবে সেখানে ভোল্টেজের ওঠানামা দেখা যাবে। আবার ভোল্টমিটারের পরিবর্তে যদি একটি এলইডি বাল্ব সংযুক্ত করি, তবে বাল্বটি জ্বলে উঠবে। ঠিক যেমনটা হার্টজের এক্সপেরিমেন্টে দেখা গিয়েছিল। এখানে খেয়াল করুন, আপনি যে রেটে ইলেকট্রনকে কম্পিত করেছিলেন, দূরে থাকা দ্বিতীয় পাতায় একই রেটে ইলেকট্রনের কম্পন পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, আপনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য (ইনফরমেশন) ট্রান্সফার করেছেন।
ঠিক এই প্রক্রিয়াতেই বর্তমানে সব ধরনের সিগন্যাল বা ইনফরমেশন আদান-প্রদান করা হয়, হোক সেটা রেডিও সিগন্যাল, মোবাইলে কথা বলা, কিংবা ইন্টারনেটে ডেটা আদান-প্রদান। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ যদি আলো হয়ে থাকে এবং মোবাইলে বলা কথা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ হিসেবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, তবে কেন আমরা মোবাইলে কথা বলার সময় আলো বের হতে দেখি না? কিংবা রেডিও শোনার সময় কেন কোনো প্রকার আলো রেডিওতে আসতে দেখি না?
এ বিষয়টি বোঝার জন্য আবার ধাতব পাতের উদাহরণে যেতে হবে। ধাতব পাতের ইলেকট্রন কতটা দ্রুত কিংবা কতটা ধীরে কম্পিত হচ্ছে, এর উপর নির্ভর করবে তা থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি। যেমন, ইলেকট্রনটি যদি প্রতি সেকেন্ডে ৩০,০০০ বার কম্পিত হয়, তবে এখান থেকে যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গত হবে, তাকে বলে রেডিও ওয়েভ। কিন্তু ইলেকট্রনটি যদি প্রতি সেকেন্ডে ৫৪০,০০০,০০০ কোটি বার কম্পিত হয়, তবে ধাতব পাতা থেকে সবুজ আলো নির্গত হবে। অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গত হবে, তা আমরা দেখতে পাবো।
আবার ইলেকট্রনটি যদি প্রতি সেকেন্ডে 102010^{20} বার কম্পিত হয়, তবে তা থেকে এক্স-রে নির্গত হবে। এই আলো আমরা দেখতে পাবো না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, সব ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ আমরা দেখতে পাই না। শব্দের ক্ষেত্রে যেমন আমরা ২০ থেকে ২০,০০০ হার্টজ রেঞ্জের শব্দ শুনতে পাই, এর বাইরে শব্দ শুনতে পাই না। ঠিক একইভাবে আলোর ক্ষেত্রেও আমরা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের মধ্যে খুবই ছোট একটি অংশ দেখতে পাই, যাকে বলে ভিজিবল লাইট বা দৃশ্যমান আলো।
এই দৃশ্যমান আলোর রেঞ্জ হচ্ছে ৩৮০ ন্যানোমিটার থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো। এই রেঞ্জের বাইরের আলো আমরা দেখতে পাই না। এখন যেই আলো আমরা দেখতে পাই না, সেই সকল আলোই প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। রেডিও এবং স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়, যার ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকে। মাইক্রোওভেনে ব্যবহার করা হয় মাইক্রোওয়েভ। টিভি রিমোটের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ইনফ্রারেড।
হাত-পায়ের হাড় কতটা ভেঙেছে কিংবা সিকিউরিটি পারপাসে ব্যবহার করা হয় এক্স-রে। আবার ক্যান্সার ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় গামা রে। এখন আমরা যদি এই নির্দিষ্ট রেঞ্জের বাইরের আলো দেখতে পেতাম, তবে আমাদের চারপাশ সবসময় আলোকিত দেখাত। অন্ধকার বলতে আমাদের জীবনে কিছুই থাকতো না। কারণ, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ব্যবহার হচ্ছে, যার ফলে সবকিছু আলোকিত দেখা যেত।
এখন আপনার মনে একটি কৌতূহল তৈরি হতে পারে, সেটা হচ্ছে: ধরে নিলাম, আমরা সব ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ দেখতে পাই, তবে আমরা প্রযুক্তিগত কোনো ক্ষেত্রে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ব্যবহার না করলেও কি আমাদের চারপাশ আলোকিত দেখাবে? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। কারণ, সবকিছুই বাদ দিলাম, আপনার শরীর থেকেও প্রতিনিয়ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গত হচ্ছে, এবং সেটাকে বলা হয় থার্মাল রেডিয়েশন।
ইলেকট্রনের মুভমেন্টের ফলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি হয়। আমাদের শরীরে থাকা পরমাণুর ইলেকট্রন প্রতিনিয়ত কম্পিত হয়। শুধুমাত্র পরম শূন্য তাপমাত্রা (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অবস্থায় থাকা পরমাণুর ইলেকট্রন স্থির থাকে। কিন্তু কোনো বস্তু যদি এই তাপমাত্রা থেকে সামান্য বেশি উষ্ণ হয়, তবে সেই বস্তুর পরমাণুর ইলেকট্রন কম্পিত হবে।
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা পরম শূন্য তাপমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি, প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণেই আমাদের শরীরের ইলেকট্রন প্রতিনিয়ত কম্পিত হয় এবং এই কম্পনের ফলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গত হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরম শূন্য তাপমাত্রা অর্জন করা কি সম্ভব? তাত্ত্বিকভাবে এটি সম্ভব, তবে বাস্তবে এটি অত্যন্ত জটিল।
সুতরাং, প্রত্যেকটি বস্তু থেকেই কোনো না কোনো ফ্রিকোয়েন্সিতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নির্গত হয়। যখন কোনো বস্তুর তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, তখন তার ভেতরের ইলেকট্রনের কম্পন বাড়তে থাকে। যদি এই কম্পন একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে সেই বস্তু দৃশ্যমান আলো নির্গত করতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি লোহার রডকে উত্তপ্ত করলে তা একসময় গ্লো করতে শুরু করে, অর্থাৎ, তা থেকে দৃশ্যমান আলো নির্গত হয়।
পৃথিবীতে থাকা বস্তুর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বোঝা যায়। তবে, যদি আমরা সব ধরনের আলো দেখতে পেতাম, তাহলে রাতের আকাশ কখনোই অন্ধকার দেখাত না। কারণ, দূরবর্তী তারা বা মহাজাগতিক বস্তু থেকে বিভিন্ন রেঞ্জের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। এই কারণে আমরা সীমিত আলো দেখার ক্ষমতার জন্যই “অন্ধকার” অনুভব করি।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে অন্যভাবে বলা হয় “ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন”। আলোর সব রকম ফর্মই রেডিয়েশন। তবে রেডিয়েশন আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে কি না, তা নির্ভর করে তার ফ্রিকোয়েন্সির উপর। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন যেমন গামা রে বা এক্স-রে বেশি শক্তি বহন করে এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, দৃশ্যমান আলো কিংবা তার চেয়ে কম ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন খুব বেশি শক্তি বহন করে না এবং সাধারণত ক্ষতিকর নয়।
উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন সাধারণত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক বোমা, বা বিশেষ গবেষণাগারে তৈরি হয়। তবে স্বাভাবিক পরিবেশে এগুলো পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোন বা মোবাইল টাওয়ারের ব্যবহৃত মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন দৃশ্যমান আলোর চেয়েও কম শক্তি বহন করে, তাই এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়।
সূর্য পৃথিবীর শক্তির মূল উৎস। সূর্যের আলো বা রেডিয়েশন পৃথিবীতে এসে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। গাছ সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, যা অন্যান্য প্রাণী গ্রহণ করে। সূর্যের হাই ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে না কারণ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং ওজোন স্তর এগুলো আটকে দেয়।
বর্তমান প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট পরিষেবা যেমন স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রসারের জন্য রেডিয়েশনের ভূমিকা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, স্টারলিংক প্রকল্প, যা স্পেসে হাজার হাজার স্যাটেলাইট স্থাপন করে বিশ্বের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের পরিকল্পনা করছে।
ভিডিও ভালো লাগলে “বিজ্ঞান পাইসি” পরিবারে যুক্ত হতে পারেন।