জলবায়ু পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তবে এটি বাস্তব সত্য যে, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে মানুষ দেখতে শুরু করেছে। যেমন, গরমকালে তাপমাত্রা অসহনীয় রকম বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ প্রমাণিতভাবে বাড়ছে।
যার ফলে প্রথমবারের মতো ফিজিক্স ক্যাটাগরিতে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়েছে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের, যেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিকে মানুষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। সেই সাথে নোবেল কমিটি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক একটি বিষয় এবং আমাদেরকে এখনই এই বিষয়টির সমাধান খুঁজতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের বড় বড় শহরে মানুষের ঘনবসতির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এই জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে চীন, আমেরিকার মতো কিছু উন্নত দেশ।
এই জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়টি আসলে কী? ২০২১ সালে যারা নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি অনুধাবনের ক্ষেত্রে কী কী কাজ করেছেন? এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
আরও জানুন: মঙ্গল গ্রহ সমাচার Mars Human Mission Challenge and Mars Alien Controversy
জলবায়ু পরিবর্তন কি? (what is climate change)
এটিই পৃথিবী, আমাদের আবাসস্থল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত আমাদের এই বাড়িটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। কোনো জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী এবং অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে বলে জলবায়ু পরিবর্তন, যা কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
পৃথিবীর পূর্বের জলবায়ুর তুলনায় বর্তমান জলবায়ুতে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে দেখা দিয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা। অর্থাৎ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ মঙ্গল যাত্রা All missions on Mars
গ্রিণ হাউজ ইফেক্ট কি? (what is greenhouse effect?)

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি। এই সকল গ্যাসের মধ্যে কিছু গ্যাস হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি।
সূর্য থেকে আসা আলো পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠ এই তাপশক্তির কিছুটা অংশ শোষণ করে এবং অতিরিক্ত তাপশক্তির কিছু অংশ গ্রিনহাউস গ্যাসের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে থেকে যায় এবং বাকি অংশ মহাকাশে ফিরে যায়।
যার ফলে আমাদের পৃথিবী উষ্ণ থাকে এবং আমাদের বসবাসকে আরামদায়ক করে তোলে, যাকে বলে গ্রিনহাউস এফেক্ট। সুতরাং গ্রিনহাউস গ্যাস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা কি? (what is global warming?)
কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তা বেশি পরিমাণ তাপশক্তি আটকে রাখে, ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানি বেশি পরিমাণে বাষ্প হয় এবং এই জলীয় বাষ্প কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে।
সুতরাং গ্রিনহাউস যত বৃদ্ধি পেতে থাকবে, পৃথিবী তত উষ্ণ হতে থাকবে। ফলে একসময় পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ সূর্যের আলো আপনার ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি বৃদ্ধ Sunlight is much older than you think
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ (cause of climate change)
মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড়, পশুপালন বৃদ্ধি, পুনর্ব্যবহার অনুপযোগী বর্জ্য ইত্যাদি।
এসব কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি, অর্থাৎ কয়লা, তেল, গ্যাসের ব্যবহার। এদের থেকে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
অন্যদিকে গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে পশুপালন সম্পৃক্ত বর্জ্য। মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ২৩ গুণ বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে।
বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য, যেগুলো পুনরায় ব্যবহার করা হয় না। মানুষ প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ বনভূমি উজাড় করছে।
উদ্ভিদ তার প্রয়োজনে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে থাকে, যার ফলে পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু বনভূমি ধ্বংসের ফলে উদ্ভিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেই সাথে গত ৭০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তিন গুণ হয়েছে। ফলে এত বিপুল সংকটেও মানুষ নানা প্রয়োজনে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে যাচ্ছে, যার ফলে প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করেছে। ১৯৭৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মেরুতে জমে থাকা বরফের প্রায় ৬৫% গলে গেছে। যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এভাবে যদি বরফ গলতে থাকে, তবে উপকূলীয় অনেক ভূমি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে। তাছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড সমুদ্রের লবণাক্ত পানির সাথে বিক্রিয়া করে পানিকে অম্লীয় করে তুলছে, যাকে বলে সমুদ্রের অ্যাসিডিফিকেশন।
এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণী এবং উদ্ভিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানির অ্যাসিডিফিকেশন যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। যেখানে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে তার প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য সামুদ্রিক প্রাণীর উপর নির্ভরশীল।
তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বন্যা, খরা, দাবানল ইত্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবাদযোগ্য জমি আবাদ অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিচ্ছে। এমনকি একটি সংবাদে বলা হয়েছে, গর্ভপাতের জন্যও জলবায়ু পরিবর্তন কিছুটা দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সত্য এবং এর প্রভাব ইতিমধ্যে পৃথিবীতে পড়তে শুরু করেছে।
পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ ২০২১ (Nobel Prize in Physics 2021)
এই ভয়াবহ সত্যটি বিশ্ব মোড়লরা এবং সাধারণ মানুষ যেন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে, সেই লক্ষ্যে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। ২০২১ সালের নোবেল পুরস্কার প্রথমবারের মতো জলবায়ুবিজ্ঞানীদেরকে দেওয়া হয়েছে। নোবেল প্রাইজের ১,১০,০০০ ডলারের ১/২ অংশ পাবেন শুকিয়োরো মানাবে এবং ক্লাউস হ্যাসেলম্যান। বাকি ১/২ অংশ পাবেন।
উনিশশো ৫০ থেকে উনিশশো ৬০ এই সময়কালে বিজ্ঞানীরা দুইটি বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন।
১. কার্বনডাই অক্সাইড গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে।
২. বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিন্তু কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা এবং যদি প্রভাব ফেলেই থাকে তবে কতটা, এমন প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না।
পরবর্তীতে উনিশশো ৬৭ সালে শুকিয়োরো মানাবে এবং তার সহকর্মী “ওয়েদার ওয়ার্ল্ড” নামে একটি পেপার প্রকাশ করেন। সেখানে শুকিয়োরো মানাবে ওয়ান-ডি মেনশনাল ক্লাইমেট মডেল বর্ণনা করেন। তার মডেল থেকে দেখা যায়, যদি বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়, তবে তাপমাত্রা ২.৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। এবং যদি কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ ১/২ কমিয়ে ফেলা হয়, তবে তাপমাত্রা ২.২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাবে।
অর্থাৎ মানাবের দেওয়া মডেলের মাধ্যমে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণের ওঠা-নামার ফলে তাপমাত্রা কেমন হবে তা পূর্বাভাস করা যাচ্ছিল। পরবর্তীতে মানাবে থ্রি-ডি ক্লাইমেট মডেলও দিয়েছিলেন। যাই হোক, উনিশশো ৬৭ সালে যখন প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা ছিল না, তখন মানাবে জলবায়ুর মতো কঠিন বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলেন। যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পর্কে মানুষের বোঝাপড়া বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বড় ভূমিকা রেখেছিল।
উনিশশো ৭৬ সালে ক্লাউস হ্যাসেলম্যান ক্লাইমেট মডেল দেন, যা আবহাওয়া, মানুষের কর্মকাণ্ড এবং জলবায়ুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এই গ্রাফে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নীল রেখাটি দেখাচ্ছে প্রাকৃতিক উৎস থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনে কতটা প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে লাল রঙের রেখাটি দেখাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে জলবায়ুতে কতটা প্রভাব পড়বে বা তাপমাত্রা কতটা বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিকে জর্জিও প্যারিসি ফিজিক্সের কিছু জটিল বিষয়ে কাজ করেন, যাকে অনেকে স্পিন গ্লাস হিসেবেও জানেন। ম্যাক্সিমাম কপার পরমাণুর মধ্যে কিছু পরিমাণ আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ পরমাণু মিশালে তৈরি হয় স্পিন গ্লাস। এই স্পিন গ্লাসের মধ্যে থাকা আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজের মধ্যে চৌম্বক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
সাধারণ চুম্বকের মধ্যে একটি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে, অর্থাৎ স্পিনগুলো সবসময় একই দিকে থাকে। কিন্তু স্পিন গ্লাসের আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ পরমাণুর স্পিন এলোমেলো অবস্থায় থাকে। তবে এই এলোমেলো অর্থাৎ ডিসঅর্ডার বিষয়টিও স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। এবং এই সমস্ত স্পিনের দিক পরিবর্তন করতে অনেক শক্তির প্রয়োজন পড়ে।
বিজ্ঞানীরা স্পিনের সাথে শক্তি কীভাবে সম্পৃক্ত তা বোঝার জন্য স্পিন গ্লাসের অনেকগুলো রেপ্লিকা তৈরি করেন। তারপর তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করার চেষ্টা করেন এবং তারা দেখেন যে তাদেরকে অসংখ্য গ্রুপে ভাগ করা যায়।
উনিশশো ৮০ সালে জর্জিও প্যারিসি স্পিন গ্লাসের রেপ্লিকাগুলোকে গ্রুপ, সাব-গ্রুপে ভাগ করেন এবং সাব-গ্রুপগুলোকে আরও সাব-গ্রুপে ভাগ করতে থাকেন। তিনি দেখতে পান, স্পিনগুলোর অবস্থানের ক্ষেত্রে অসংখ্য ধরণ রয়েছে এবং অসীম সংখ্যক উপায়ে স্পিন গ্লাসগুলো স্থিতিশীল থাকতে পারে।
যা স্পষ্ট করে স্পিন গ্লাস কীভাবে স্থিতিশীল থাকে। এখানে চমৎকার বিষয় হচ্ছে, স্পিন গ্লাসের এই জটিলতা বিষয়টি বিজ্ঞানের অন্য অনেক ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়, যেমন পারমাণবিক গঠন, কম্পিউটার সিস্টেম, জীববিজ্ঞান, গণিত এবং এমনকি জলবায়ু।
২০২১ সালের নোবেল প্রাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদেরকে বলে যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈজ্ঞানিক সত্য। এবং আমাদেরকে অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে।
দেশ ভিত্তিক কার্বন নিঃসরণ ২০২১ (co2 emissions by country 2021)
এবার দেখা যাক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন দেশ কতটা দায়ী। দেশভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা পাঁচটি দেশ হচ্ছে চীন, আমেরিকা, ভারত, রাশিয়া এবং জাপান।
মাথাপিছু কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ (per capita co2 emissions by country 2021)
এবার মাথাপিছু কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের বিষয়টি দেখা যাক। মাথাপিছু কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে কাতার। কাতার বছরে গড়ে মাথাপিছু ৪৯ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে, যা ২০৩০ সালের বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭১৬ গুণ বেশি।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো। তারা বছরে মাথাপিছু ২৯ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কুয়েত, যারা মাথাপিছু ২৫ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে।
মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা দশটি দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যের। তাছাড়াও রয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশ।
বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব দেশগুলোর অবস্থান আফ্রিকায়। মাথাপিছু সবচেয়ে কম কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করা দেশটির নাম হচ্ছে বুরুন্ডি। তারা মাথাপিছু মাত্র ০.০৫ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে।
অন্যদিকে মাথাপিছু সবচেয়ে কম কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯। বাংলাদেশ মাথাপিছু ০.৫৩ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে। অন্যদিকে ভারত মাথাপিছু ১.৮৪ টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব দেশ হচ্ছে নেপাল।
জাতিসংঘের বক্তব্য অনুযায়ী, শিল্পযুগের আগের সময় অর্থাৎ আঠারোশো সালের তুলনায় বর্তমানে পৃথিবী ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হয়েছে, যা আপাতত ঠিক আছে।
এমনকি জাতিসংঘ বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা যদি ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু এখানে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে।
সুতরাং, আমরা এখনই যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির লাগাম টানতে না পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নারকীয় পৃথিবী রেখে যাব।
প্যারিস এগ্রিমেন্ট (paris agreement)
বৈশ্বিক উষ্ণতার লাগাম টানতে ২০১৬ সালে বিশ্বনেতারা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যাকে আমরা প্যারিস এগ্রিমেন্ট হিসেবে জানি।
এই এগ্রিমেন্ট থেকে বিভিন্ন দেশ তাদের কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে এবং তারা ২০২১ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে যা যা করা দরকার তা করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
কিন্তু এই এগ্রিমেন্টের ৪ থেকে ৫ বছর অতিক্রম হওয়ার পরেও কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ ঊর্ধ্বগামী। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
তবে, যদিও অনেক দেশ বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প অর্থাৎ গ্রিন এনার্জি ব্যবহার করা শুরু করেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে সকল দেশকেই যথেষ্ট সচেতন মনে হয়েছে।
এখন এটাই দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা সুন্দর পৃথিবীর নিশ্চয়তা রেখে যেতে পারেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে কী কী প্রভাব পড়েছে এবং ভবিষ্যতে কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে সাজানো হবে পরবর্তী ভিডিও।
সায়েন্স, সেই সাথে সায়েন্স ফিকশন—এই দুইটি ক্ষেত্রেই চমকপ্রদ এবং আকর্ষণীয় একটি বিষয় হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়ার্ল্ড। সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
Comments ৫