ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি বিতর্কের অবসান – Deepseek vs ChatGPT: চ্যাটজিপিটি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, হয়তোবা লিংকডিনের জন্য ইউজ করেন বা টুকটাক ইমেইলের জন্য, ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশনের জন্য হয়তোবা ইউজ করেন। তো, আপনার জন্য এই নতুন এপ্লিকেশনটা আসলে কী?
আমরা এটা বোঝার আগে একটু ভাবি, চ্যাটজিপিটি তৈরি হলো কিভাবে? চ্যাটজিপিটি যে কোম্পানি ওন করে, সেই কোম্পানির নাম হচ্ছে ওপেনএআই। ওপেনএআই-এর সিইওর নাম হচ্ছে স্যাম অল্টম্যান। তারা যখন প্রথমে ওপেনএআই ফাউন্ড করেছিল, তাদের প্ল্যান ছিল এটা একটা নন-প্রফিট ওপেন সোর্স কোম্পানি হবে।
চ্যাটজিপিটির পেছনের গল্প (ChatGPT’s backstory)

আপনারা হয়তো অনেকে বুঝতে পারছেন না ওপেন সোর্স মানে কী। ওপেন সোর্স মানে হচ্ছে, ধরুন আপনার মজা খেতে খুব ভালো লাগে। এখন, মজা কোম্পানি যদি আপনাকে পুরো রেসিপিটা দিয়ে দেয়, তাহলে আপনি নিজের বাসায় মজা বানাতে পারবেন।
আপনার যদি কালো রঙ ভালো না লাগে, আপনি গোলাপি রঙ দিতে পারেন। যদি চিনি একটু বেশি ভালো লাগে, বেশি চিনি দিতে পারেন। এবার দেখা গেল, আপনি চাইলে নিজের জন্য কাস্টমাইজ করে খেতে পারেন, বা আরেকটু কাস্টমাইজ করে এটা বিক্রিও করতে পারেন।
মজা কোম্পানির এতে কোনো লাভ নেই, কিন্তু তারা আপনাকে বলে দিচ্ছে সব রেসিপি। ওপেনএআই যখন ফাউন্ড হয়, তখন তাদেরও প্ল্যান ছিল দুনিয়ার সবাইকে তাদের সিস্টেমস বানিয়ে দিয়ে দেবে, যেন যে যার মতো এটাকে ইমপ্রুভ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সেকেন্ড নির্ণয় ইতিহাস Time keeping history and Second definition
The trigger
কিন্তু পরে যখন স্যাম অল্টম্যান ও তার টিম দেখল, চ্যাটজিপিটি মানুষজন এত ওয়াইডলি এক্সেপ্ট করছে আর প্রোডাক্টটা আসলে ভালো, তখন তারা ভাবল—এটাকে তো আর নন-প্রফিট কোম্পানি হিসেবে চালানো যাবে না, লাভ করতে হবে।
এরপর ওপেনএআই নন-প্রফিট কোম্পানি হিসেবে আর রাখল না, চ্যাটজিপিটি ওপেন সোর্স থাকল না। তারা তাদের সব সিস্টেম লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল, যেন অন্য মানুষজন জানতে না পারে তাদের সিস্টেম কিভাবে কাজ করে।
ডিপসিক তরঙ্গ (The Deepseek wave)

অন্যদিকে, চীনের একটি কোম্পানি ডেভেলপ করা শুরু করল আরেকটা ল্যাংগুয়েজ মডেল, চ্যাটজিপিটির মতো, যার নাম হচ্ছে “ডিপশিক”।
ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি পার্থক্যের কথা বললে, চ্যাটজিপিটি ডেভেলপ করতে বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যেখানে ডিপশিক বানানোর জন্য খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ মিলিয়ন ডলার।
এটা অবাক করার মতো কিছু না যে ডিপশিক খুব ভালো পারফর্ম করছে এবং চ্যাটজিপিটিকে সামনে গিয়ে বিট করতে পারে। কিছু জায়গায় ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি তুলনায় আরও ভালো পারফর্ম করে, যেখানে তার পিছনে ইনভেস্টমেন্ট অনেক কম করা হয়েছে।
আরও জানুন: লজিক গেট Logic gates and How do they work
ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি পার্থক্য (The differences)
আপনার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি আপনি চ্যাটজিপিটির ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করতে চান, তাহলে দেখা যাবে আপনি ১৫টির বেশি মেসেজ দিতে পারবেন না। কিন্তু অন্যদিকে, আপনি যদি ডিপশিক ব্যবহার করেন তাহলে ফ্রি ভার্সনের লিমিট চ্যাটজিপিটির থেকে অনেক বেশি।
এখন মজার কথা হচ্ছে, যেহেতু ডিপসিকাটা চাইনিজ কোম্পানি, ডিরেনিয়ার অনেক মানুষ অনেক রিকুয়েস্টিং ইম্পোজ করতে পারে এই অ্যাপটার উপর। মাথায় রাখেন, ডিপসিক অ্যাপটা ইউএসএতে অ্যাপ স্টোরের নাম্বার ওয়ান ট্রেন্ডিং অ্যাপ বর্তমানে।
ওই জায়গা থেকে ডিপসিক যদি হঠাৎ করে ব্যান করে দেয়, তাহলে কি হবে? এখন ব্যান কেন করে দিবে? কারণ কদিন আগে আমরা দেখেছি, টিকটক কিন্তু আমেরিকায় ব্যান করে দিয়েছিল। কারণ তারা বলছিল, টিকটক একটা চাইনিজ কোম্পানি এবং টিকটক সব ডেটা নিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকার কাছ থেকে।
তারা ডিপসিকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের একটা অভিযোগ দিতে পারে। অনেকেরই এরকম প্রাইভেসি এবং রেগুলেশন সংক্রান্ত ইস্যু হবে, যা তারা মেনে নিতে চাইবে না। এখানে ডিপসিকের পার্থক্য হচ্ছে, এটি ওপেন সোর্স।
আপনি যখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন, তখন কি করেন? চ্যাটজিপিটি ক্লাউড ব্যবহার করে। ধরুন, যখন চ্যাটজিপিটিতে লেখাগুলো সংরক্ষণ করেন, তখন সেগুলো ক্লাউডে স্টোর হয়, আপনার কম্পিউটারে নয়। অর্থাৎ, আপনি ইন্টারনেট ছাড়া এটি ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনি ইন্টারনেট দিয়ে ওদের সার্ভার ব্যবহার করছেন।
কিন্তু ডিপসিকের ক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারবেন, তা হলো—আপনি যদি ডিপসিক মডেল ডাউনলোড করেন, তাহলে এটি আপনার বাসার ডিভাইসের মধ্যে লোকালভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর মানে, আপনার তথ্য চীনের ডেটা সেন্টারে সংরক্ষিত হচ্ছে না।
আপনার চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের মতো, আমেরিকার কোনো ডেটা সেন্টারে ইনফরমেশন সংরক্ষণ করতে হবে না। আপনার তথ্য থাকবে আপনার নিজের কাছে। কোনো প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান, কোনো কর্পোরেশন বা কোনো ফেডারেল সংস্থা (এফবিআই, ডিএফবি) আপনার তথ্য দেখতে পারবে না।
এতে আপনার প্রাইভেসি সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি, এটি দ্রুত ডেভেলপ করা সম্ভব হবে, কারণ এটি ওপেন সোর্স। ফলে যে কেউ নিজের মতো সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে এবং নিজের মতো করে এটির উপর কাজ করতে পারবে।
ডিপসিক একটি বিপ্লব ঘটাচ্ছে, কারণ দেখুন—এনভিডিয়া গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা কোম্পানির স্টক প্রাইস কিছুদিন আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। কারণ, নতুন এই এআই বিপ্লব আসছে, যা গ্রাফিক্স কার্ডের ওপর নির্ভর করছে।
এজন্য এনভিডিয়ার প্রাইস এত বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু যেহেতু ডিপসিক একটি ওপেন সোর্স কোম্পানি, তাই আমাদের তাদের উপর নির্ভর করতে হবে না। আমরা আমাদের বাসায় বসে, আমাদের ডিভাইসে এটি চালাতে পারব।
এ কারণেই দেখবেন, ওয়াল স্ট্রিটে এখন বিশাল অস্থিরতা চলছে। এনভিডিয়ার প্রাইস প্রায় ৫০% পর্যন্ত কমে গেছে। এই এআই বিপ্লব বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর জন্য নয়, বরং আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য।
আমরা যখন স্থানীয়ভাবে এই এআই মডেল চালাতে পারব, তখন আমাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগের দ্বার খুলে যাবে। যদি আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, তাহলে ডিপসিক আপনার জন্য অনেক উপকারী হবে।
আপনাকে যদি সহজভাবে বুঝাই, ধরুন আমরা ক্লায়েন্ট আনতে ইমেল পাঠাই। অনেকে কোল্ড ইমেইল পাঠানোর জন্য ম্যাস মেইলিং টুল ব্যবহার করে। এতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ মানুষের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজ পাঠানো যায়।
Breaking it down
যদি প্রতিদিন এক হাজার মানুষকে ইমেইল পাঠান, প্রত্যেকজনের ইমেইল দেখবেন নাকি কপি-পেস্ট হয়ে গেছে? কিন্তু যদি আপনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতেন, তাহলে কী হতো? আপনার কাছে যে অলরেডি ইনফরমেশন আছে, সে ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে প্রত্যেকজনকে অটোমেটিক একটু একটু করে পরিবর্তন করে ইমেইল পাঠাতে পারত।
তাহলে কিন্তু তারা মনে করত, “ওহ বাবা! সে তো আমার ব্যাপারে রিসার্চ করে ইমেইলটা পাঠিয়েছে। আমি ওর প্রস্তাবে আরও বেশি ইন্টারেস্টেড।”
জিনিসটা অনেকটা Instantly-এর মতো টুলের মতো, যা চ্যাটজিপিটির ইন্টেগ্রেশন ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে আপনি প্রতিজনকে কাস্টম ইমেইল পাঠাতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হলো, চ্যাটজিপিটির এপিআই অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ। ১ মিলিয়ন টোকেনের জন্য চ্যাটজিপিটিতে ৭ থেকে ৮ ডলার খরচ হয়।
অন্যদিকে, ডিপশিকের এপিআই খরচ হচ্ছে মাত্র ১ মিলিয়ন টোকেনের জন্য ১৮ সেন্ট! এর মানে সহজ ভাষায় হলো, যদি প্রতিদিন ১,০০০ মানুষকে ইমেইল পাঠান এবং চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ১০০ টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু যদি ডিপশিক ব্যবহার করেন, তাহলে খরচ হবে মাত্র ২০ টাকা। মানে, খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কম!
বাস্তবতা (Reality check)
ওপেনএআই চ্যাটজিপিটিকে এমনভাবে বাজারে এনেছিল যেন তাদের ছাড়া অন্য কেউ নেই। তারা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে প্রায় পুরো মার্কেটকে মনোপলি করছিল।
কিন্তু ডিপশিক এসে তাদেরকে বাস্তবতার থাপ্পড় দিয়েছে। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, “কম বাজেটেও আমরা প্রতিযোগিতায় আসতে পারি!”
ডিপশিকের বিশেষত্ব কী?
ডিপশিকের আরেকটি ওয়ান মডেল আছে, যেখানে আপনি যখন কিছু করতে বলবেন, তখন সে তার চিন্তাভাবনার পুরো প্রক্রিয়াটি দেখাবে। এর সুবিধা হলো, অনেক সময় এআই ভুলভাল উত্তর দেয়, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না কোথায় ভুল করছে।
ডিপশিক যেহেতু তার পুরো থিংকিং প্রসেস দেখায়, তাই আপনি সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন কোথায় সমস্যা হয়েছে এবং তাকে আরও ভালো ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
তবে এখনো পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি ভালো যখন কথা আসে লেখা-লিখি, লিংকডিন পোস্ট, ইমেইল পাঠানো বা কবিতা লেখার ক্ষেত্রে। আইডিয়েশন, ব্রেনস্টর্মিং ইত্যাদির জন্য চ্যাটজিপিটি ভালো।
কিন্তু ডিপশিক তুলনামূলকভাবে ভালো যখন আপনাকে ম্যাথ সলভ করতে হবে, লজিক দরকার হবে, বা ক্রিটিক্যাল থিংকিং লাগবে বেশি। এই ভিডিওর মূল উদ্দেশ্য হলো—আপনি বুঝতে পারেন কিভাবে এআই এত দ্রুত উন্নতি করছে।
এবং এটি খুবই ভালো খবর! যখন ডিপশিকের মতো নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে আসে, তখন বড় কোম্পানিগুলো স্বস্তিতে থাকে না। তারা নড়েচড়ে বসে এবং চেষ্টা করে নতুন ইনোভেশন আনতে।
সুস্থ প্রতিযোগিতা যেকোনো মার্কেটের জন্য দরকার। কিন্তু ভয় পাবেন না—এআই আপনার চাকরি নেবে না! বরং আপনি যদি এটিকে প্রোপারলি ইউজ করতে পারেন, তাহলে বরং আপনার কাজ আরও সহজ হবে! আপনার কম্পিউটারের তুলনায় আপনি অনেক ভালো পারফর্ম করছেন। আজকের জন্য মূলত এটাই।
Comments ৫