নদী বিজ্ঞান River science, Erosion and Deposition: পানি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। এই বিষয়টি খুবই সাধারণ মনে হলেও এ নিয়ে কিন্তু বিস্তর পড়াশোনা রয়েছে। কারণ, পানির প্রবাহ বুঝতে পারলে আপনি নদীর আচরণ বুঝতে পারবেন।
কেন নদীর গতিপথ সোজা না হয়ে সাপের মত বাঁকা হয়ে থাকে? কেন নদীর গতিপথ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়? কেন নদী ভাঙ্গন ঘটে?
নদী বিজ্ঞান (River science)
এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসহ নদীর সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই পানির প্রভাব বুঝতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পানির প্রবাহ বা নদীর আচরণ এই বিষয়টি জানা কি আমাদের জন্য আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর হচ্ছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নদীকে কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে ওঠে। নদী মানুষের জীবন এবং জীবিকাকে প্রভাবিত করে।
তাছাড়া, বর্তমান আধুনিক সময়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও নদীর আচরণ স্টাডি করা আবশ্যক। আজকের ভিডিওতে নদীর প্রভাব সম্পর্কে বলা হবে।
নদী কি? (What is river?)

যে কোন নদী উঁচু ভূমিতে তৈরি হয় এবং নিচু ভূমিতে শেষ হয়। বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেশিরভাগ নদীর উৎসস্থল হিমালয় এবং সমাপ্তি বঙ্গোপসাগর।
অর্থাৎ, হিমালয় পর্বতের বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে সেই পানি নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এখন নদীতে যে শুধুমাত্র হিমালয়ের বরফ গলা পানি রয়েছে তা কিন্তু নয়। নদীতে সব সময় পানি থাকার পেছনে বৃষ্টি এবং ভূগর্ভস্থ পানির ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টির পানির বিষয়টি সহজেই চোখে পড়ে।
বর্ষাকালে যখন বৃষ্টিপাত হয়, তখন ভূপৃষ্ঠে পতিত পানির বড় একটি অংশ কোন না কোনভাবে নদীতে যায়, যার ফলে নদীর উচ্চতা বাড়তে দেখা যায়। আবার বৃষ্টির পানি মাটির নিচেও যায়। মাটির নিচের একটি অংশ বালি এবং পলির মধ্যে জমা থাকতে পারে, যাকে বলা হয় ভূগর্ভস্থ পানি। শুষ্ক মৌসুমে যখন বৃষ্টিপাত হয় না, তখনই ভূগর্ভস্থ পানির প্রভাবে নদীতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পানি থাকতে দেখা যায়।
এখন শীত কিংবা বর্ষা, যে কোন মৌসুমের কথা বিবেচনা করি না কেন, নদীর একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে, নদীর পানি স্থির থাকবে না বরং পানি প্রবাহিত হবে। এখন এই যে পানি প্রবাহিত হবে, এই বিষয়টির উপর নির্ভর করে নদী কেমন আচরণ করবে। কারণ, পানি প্রবাহের সাথে সাথে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। যেমন, সেডিমেন্ট বা পলি প্রবাহিত হয়, নতুন ভূমি বা চর জেগে উঠে। আবার অনেক স্থানে ভাঙ্গন দেখা যায়।
পানি প্রবাহ ও পলির সম্পর্ক (Water flow and sediment relation)

পানি এবং পলির মধ্যবর্তী সম্পর্ক নিয়ে ১৯৫৫ সালে ইন্দ্রীল লাইন একটি ইউনিফাইড ইকুয়েশন সামনে নিয়ে আসেন, যা ইঞ্জিনিয়ার, জিওলজিস্ট, সেই সাথে নদীবিজ্ঞান সম্পৃক্ত পেশাজীবীরা এখনো ব্যবহার করে থাকেন। এই হচ্ছে সেই ইকুয়েশন। এখানে কিউ এস হচ্ছে পলির প্রবাহ বা সেডিমেন্ট ডিসচার্জ। ডি হচ্ছে পলির সাইজ অর্থাৎ পার্টিকেল ডায়ামিটার। ইউ ডব্লিউ হচ্ছে পানির প্রবাহ অর্থাৎ ওয়াটার ডিসচার্জ। এস হচ্ছে ঢাল বা স্লোপ।
আরও পড়ুনঃ বন্যা কেন হয় এবং কোন বন্যা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর All kinds of Flood
(নদী বিজ্ঞান) এই ইকুয়েশন অনুযায়ী স্থির নদীর প্রবাহের ক্ষেত্রে পানির প্রবাহ এবং ঢালের গুণফল পলির প্রবাহ এবং পলির সাইজের গুণফলের সমানুপাতিক। এখানে খেয়াল করুন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ চারটি ভেরিয়েবল এই ইকুয়েশনে উল্লেখ রয়েছে। এখন এই ইকুয়েশনকে সহজভাবে বোঝার জন্য এখানে একটি দ্রবক বসিয়ে ইকুয়েশনটিকে সিম্পল ফর্মে নিয়ে আসা যাক। এখন মনে করি, আমরা যেই সিচুয়েশন বা নদী বিবেচনা করছি, তার ক্ষেত্রে দ্রবক গ্রহণযোগ্য।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, কিউবেস ইনডোর্ডি ইকুয়েডর। এখন এখানে লেফটেন সাইড এবং রাইটেন সাইট যেন সমান হয়, এমন কিছু মান নেয়া যাক। এই মানগুলোর ক্ষেত্রে নদীতে একটি সাম অবস্থায় বিরাজ করবে।
এখন এখানে এই চারটি ভেরিয়াবলের যে কোনো একটির মান পরিবর্তন হলেই নদী আর সাম অবস্থায় থাকবে না। যার ফলে তখন নদীর সাম্য অবস্থায় ফিরে যেতে চাইবে, যার ফলাফল হিসেবে নদীতে পরিবর্তন দেখা যাবে। যেমন মনে করুন, আমাদের বিবেচনা করা নদীতে পলির প্রভাব ৬ থেকে বেড়ে ৮ হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সমীকরণটিকে ইকোল দেখা যাবে না, অর্থাৎ সিক্সটিন নোটিকল ট্রল।
ফলে তখন নদীতে এমন পরিবর্তন আসবে, যেন রাইটেন সাইটের মান সিক্সটিন হয়। এক্ষেত্রে পানির প্রবাহের মান থ্রি থেকে ফোর হয়ে যেতে পারে অথবা নদীর ঢাল ফোর থেকে ফাইভ পয়েন্ট থ্রি হয়ে যেতে পারে। কিংবা পানির প্রবাহ এবং ঢাল, এই দুটিতেই পরিবর্তন আসতে পারে। এবং সেই পরিবর্তন এমনভাবে হবে, যেন রাইটেন সাইটের মান সিক্সটিন হয়।
আবার কোনো কারণে যদি ইকুয়েশনের লেফটেন সাইডের মান কমে যায়, তবে রাইটেন সাইডের মানও সেই অনুযায়ী কমে যাবে। অর্থাৎ এই চারটি ভেরিয়েবল পরস্পরের সাথে এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, নদীতে এই বিষয়গুলোর কোনো একটির পরিবর্তন হলেই নদীতে পরিবর্তন দেখা যাবে।
নদী ভাঙন ও নদী ক্ষয় (River Erosion and Deposition)

এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন। (নদী বিজ্ঞান) এই ইকুয়েশনের লেফটেন সাইডের মান বৃদ্ধি মানে পলির প্রভাব বাড়বে কিংবা পলির সাইজ বড় হবে অথবা দুইটি ঘটনা একসাথে ঘটবে। এমন ক্ষেত্রে নদীতে প্রাথমিকভাবে নতুন চর তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে রাইটেন সাইটের উপাদানের পরিবর্তনের মাধ্যমে নদীটির সাম অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও পড়ুনঃ ভূমিকম্প এবং সুনামি Earthquake and Tsunami
আবার যদি রাইটেন সাইটের মান বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ নদীতে পানি প্রবাহ এবং ঢাল যদি বেড়ে যায়, তবে প্রাথমিকভাবে নদীতে ভাঙ্গন দেখা যাবে। (নদী বিজ্ঞান) পরবর্তীতে লেফটেন সাইডের উপাদানগুলোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে নদী সাম অবস্থায় ফিরে আসবে।
এ বিষয়টি আপনি আরো সহজে বুঝতে পারবেন, যখন ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ভারী বৃষ্টিপাত মানে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হবে, ফলে রাইটেন সাইটের মান বৃদ্ধি পাবে। (নদী বিজ্ঞান) যার ফলে প্রাথমিকভাবে নদীতে ভাঙ্গন দেখা যাবে এবং এই ভাঙ্গনের মাধ্যমে নদীতে পলির প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে এই ইকুয়েশনটি সমতা প্রাপ্ত হবে।
এখন নদী কখনোই কনস্ট্যান্ট অবস্থায় বিরাজ করে না। কখনো পানির প্রবাহ বাড়ে কিংবা কমে, আবার কখনো পলির প্রবাহ বাড়ে কিংবা কমে। ফলে নদীতে সেই অনুযায়ী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে।
নদী বাঁকা হওয়ার কারণ (Why do rivers curve?)

এখন এই ইকুয়েশনে থাকা স্লোপ বা ঢালের বিষয়টিকে বিস্তারিত বললে নদীর গতিপথ কেন সাপের মতো বাঁকা হয়ে থাকে, এই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। (নদী বিজ্ঞান) নদীর ঢাল এই বিষয়টির মানে হচ্ছে নদীর উৎপত্তিস্থল এবং সমাপ্তিস্থলের উচ্চতার পার্থক্য এবং নদীর দৈর্ঘ্যের অনুপাত।
এখন কোনো একটি নদীর ক্ষেত্রে স্টার্টিং পয়েন্ট এবং এন্ডিং পয়েন্ট মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে, অর্থাৎ উচ্চতার পার্থক্য অপরিবর্তিত থাকে। এখন ইকুয়েশনে যদি কোনো কারণে লেফটেন সাইডের মান বৃদ্ধি পায়, তবে রাইটেন সাইডের পানি প্রবাহ এবং ঢালে পরিবর্তন হবে, অর্থাৎ মান বৃদ্ধি পাবে যেন সাম অবস্থা তৈরি হয়।
এখন নদীর ঢাল পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে নদী তার উৎপত্তি এবং সমাপ্তিস্থলের উচ্চতার পার্থক্য পরিবর্তন করতে না পারলেও নদী তার দৈর্ঘ্যে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে ঢালেও পরিবর্তন আনতে পারে।
এবং এমন ক্ষেত্রে নদী সর্পিলাকার ধারণ করে, তার ধর্মীয় পরিবর্তন আনে। এখন নদীর সর্পিলাকার ধারণ করার বিষয়টি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। (নদী বিজ্ঞান) এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে নদীতে ভাঙ্গা-গড়া দেখা যায়।
নদীর শেপ সর্পিলাকার হবার শুরুতে প্রথমে নদীর একপাশে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। (নদী বিজ্ঞান) ফলে ওই পাশে পানির প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে পলির প্রবাহ বাড়ে। এবং এই যে পলির প্রভাব বাড়বে, এই পলি আসবে নদী ভাঙ্গন থেকে। যার ফলে ওই পাশে ভাঙ্গন শুরু হয়। অন্যদিকে অপর পাশে পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে সেই পাশে পলির প্রবাহ কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ হার্প কী? What Is HAARP and Behind story of HAARP conspiracy theory
এবং এই যে কম পরিমাণ পলি প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে বেশিরভাগ পলি প্রবাহিত হতে পারছে না। যার ফলশ্রুতিতে সেখানে পলি জমা হতে থাকে। অর্থাৎ নতুন ভূমি তৈরি হয়। এবং এজন্যই বক্রতার বাইরের দিকে ভাঙ্গন এবং বক্রতার ভেতরের দিকে চর তৈরি হয়ে থাকে।
এই প্রক্রিয়ার কারণে সময়ের সাথে সাথে নদীর বক্রতা বাড়তে থাকে, অর্থাৎ সর্পিলাকার ধারণ করে। নদীর এমন বক্রতার ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, সকল নদীর ক্ষেত্রেই একটি উভয়ের দৈর্ঘ্য এবং নদীর প্রশস্ততার অনুপাত প্রায় সিক্সটি ওয়ান।
তার মানে পৃথিবীর যেকোনো নদী আপনি যদি লক্ষ্য করেন, সেখানে যে বক্রতা তৈরি হবে তা প্রায় একই রকম হবে, অর্থাৎ ফ্রেকটাল।
বদ্ধ জলাশয় (What is an oxbow lake?)
নদীর বক্রতা বৃদ্ধি পেতে পেতে কিছু ক্ষেত্রে বক্রতা মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে বদ্ধ জলাশয় তৈরি করে। এমন জলাশয়কে বলা হয় অক্সবো লেক।
নদীকেন্দ্রিক যেকোনো অবকাঠামোর ক্ষেত্রে নদীর আচরণ সম্পৃক্ত এই বিষয়গুলোকে খুবই গভীরভাবে স্টাডি করতে হয়। কোনো একটি অবকাঠামো নদীর গতিপথে কেমন প্রভাব তৈরি করবে, তা সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে অবকাঠামো সুবিধার স্থলে বরং বড় ধরনের অসুবিধা তৈরি করে।
(নদী বিজ্ঞান) নদীর গতিপথে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নদীর গতিপথ এমনভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে, যা হবে হয়তো কোনো একটি শহরের মহা সমস্যা। নদীর আচরণ মৌলিক এই চারটি বিষয় ছাড়াও টুকটাক আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।
তবে বর্তমানে দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন সবকিছুকেই প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে ক্রমাগত বাড়তে থাকা জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ হচ্ছে ক্লাইমেট রিফিউজি। এই মানুষগুলো নদী ভাঙ্গনের ফলে ভিটেমাটি, জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার সন্ধানে নির্দয় শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।
ব্যক্তি জীবনে লেজারের তেমন ব্যবহার না থাকলেও প্রায় সব ধরনের শিল্প ক্ষেত্রে লেজারের ব্যবহার রয়েছে। লেজার এতটাই বিশেষ যে, এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে লেজার নিয়ে কাজ করার জন্য।
লেজার লাইট আসলে কী এবং কেন লেজার গুরুত্বপূর্ণ, এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন।
Comments ৫