ভ্রমণ ভালোবাসেন আর নিকলী হাওর ভ্রমণ করেন নি, এমনটা কিভাবে হয়! জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত বৈচিত্র্যময় বাংলার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে স্থান নিকলী হাওর। যেদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে মাত্র এক দিনেই দেখে আসতে পারেন। আজকের আয়োজনে সামান্য খরচে এক দিনের নিকলী হওর ট্যুর প্লান নিয়ে কথা বলবো।
নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি হাওর। ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় এই সুন্দর হাওরটি আজ সবার কাছে জনপ্রিয়। কিভাবে খুব অল্প খরচে একদিনে এই নিকলী হাওরের সবগুলো স্পট ঘুরে দেখবেন, তা দেখানোর চেষ্টা করব আমাদের আয়োজনে।
ঢাকা থেকে নিকলী হওর ভ্রমণ যাত্রা
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী বাবস্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন সকাল সকাল। এটি মূলত ঢাকা থেকে নিকলী হওর ভ্রমণ পরিকল্পনা তাই ঢাকা থেকেই আমরা সব কিছু লিখবো। এখানে একটি হাইএস মাইক্রোবাসে করে ভ্রমণ করার কথা উল্লেখ করা হলো। দেশের যেকোনো স্থান থেকেই আপনি গাড়ি, বাস অথবা ট্রেনে করে নিকলী হাওরে আসতে পারেন।

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টান্ড থেকে নিকলী হওর যাওয়ার বাস হলো জলসিঁড়ি বা অন্যন্য সুপার সার্ভিস বাস। ভাড়া নিবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বাসগুলো প্রথমে যাবে কিশোরগঞ্জ কটিয়াদী বাস টার্মিনালে। ঢাকা থেকে কটিয়াদী আসতে সময় লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো।
কটিয়াদি বাস স্টান্ড থেকে বেড়িবাঁধ
কিশোরগঞ্জ কটিয়াদি বাস স্টান্ড পৌঁছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া করে যেতে হবে নিকলী হাওরের বেড়িবাঁধে। ভাড়া সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকার মধ্যে। অবশ্যই দরদাম করেই উঠবেন। টাকা সেভ করতে পারলে নিজেরই লাভ। মনে আছে? এর আগে মাত্র ১৩৫০ টাকায় শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করার টিপস্ শেয়ার করেছিলাম। সেখানেও টাকা বাঁচিয়ে খরচ করার মেথড দেখানো হয়েছিল।
সিএনজি চালিত অটোরিক্সা পাইলটগুলোর সাথে দরদাম কষে খরচ বাঁচাবেন। উনারা আবার বাগে পেলে পয়সা উসুল করতে পটু। তাই নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
নিকলী হওর যাওয়ার ট্রেণ রুট
ট্রেনে আসতে হলে আপনাকে ঢাকা কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সকাল সাতটার দিকে “১১ সিন্দুর প্রভাতী” ট্রেনে করে সরাসরি গোসাইহাটা রেলস্টেশনে আসতে হবে। মনে রাখবেন, বুধবার ট্রেনটি বন্ধ থাকে।
ট্রেনে আসতে শ্রেণিভেদে আপনার খরচ হবে ১২৫ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। গোসাইহাটা স্টেশন থেকে বের হয়ে ইজিবাইক বা সিএনজিতে জনপ্রতি ৩৫ টাকা ভাড়ায় চলে আসবেন নিকলী হাওরের বেড়িবাঁধে।
নিকলী হওর এর সৌন্দর্য্য উপভোগ
অবশেষে সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত নিকলী হাওরে পৌঁছে যাবেন! বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পিচঢালা রাস্তা ধরে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ধীরে ধীরে চলে যাবেন বেড়িবাঁধের শেষ প্রান্তে। সারি সারি ঘাটে বাঁধা নৌকাগুলো দেখতে সত্যিই চমৎকার। বর্ষাকালে নিকলী হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে সক্ষম।
হাওর এর আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য নৌকা ভাড়া করতে হবে। বেড়িবাঁধের শেষ প্রান্ত থেকে হাওর ঘুরে দেখার জন্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে নৌকা ভাড়া করে নিবেন।

নৌকা ঠিক করার সময় অবশ্যই দরদাম করে নেবেন। নৌকা দিয়ে ভ্রমণের প্রথম গন্তব্য মিঠামইন, যেখানে দেখা যাবে হাওরের মাঝে বহুল জনপ্রিয় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক, লিঙ্গ রোড এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পৈতৃক বাসভবন। এরপর ছাতিরচরে যাবেন, যেখানে ভাসমান করচ ঝিলের বনে আপনারা জলকেলি করবেন।
প্রথমে অবশ্যই চেষ্টা করবেন মিঠামইন, তারপর ছাতিরচর যেতে। কারণ সব স্পট ঘোরার পর ছাতিরচরে এসে গোসল করলে সুবিধা হবে। একবার নৌকায় উঠলে সব স্পট ঘুরতে বিকাল হয়ে যাবে, তাই বেড়িবাঁধের হোটেল থেকে খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে নৌকায় উঠুন, যাতে দুপুরের খাবার নিয়ে চিন্তা করতে না হয়।
মিঠামইন
বেড়িবাঁধ থেকে মিঠামইন যেতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘণ্টা। এখান থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় একটি গাড়ি নিয়ে আমরা এসেছি মিঠামইনের লিঙ্গ রোডে। এরপর চলে এলাম জিরো পয়েন্ট বা গোলচত্বর, যেখানে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের রোড একসাথে মিলিত হয়েছে।
হাওরের বুক চিরে গড়ে ওঠা এই অসাধারণ সড়কটি ভালোভাবে দেখার জন্য চলে যাবেন আরও সামনে বড় ব্রিজ পর্যন্ত। এই সেই বড় ব্রিজ, যার উপর দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা নিকলী হাওর ও হাওরের বুকে অনিন্দ্য সুন্দর এই সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
আপনাদেরকে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, অনেক মাঝি পর্যটকদের এখানে সরাসরি নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে মিঠামইনে নিয়ে যায় না। তখন তারা রাষ্ট্রপতির পৈতৃক বাড়ি, গোলচত্বরসহ বেশ কিছু স্পট মিস করে। তাই বলবো, একটু খরচ বেশি হলেও নিকলীর সকল স্পট ঘুরে দেখুন, আপনাদের ভালো লাগবে।
আপনারা চাইলে এই রাস্তা বরাবর সোজা গিয়ে অষ্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। যাই হোক, বড় ব্রিজে কিছু সময় কাটানোর পর আবার ফিরবেন মিঠামইনে। যেহেতু একদিনে সবগুলো স্পট ঘুরে দেখতে হবে, এজন্য সময় নষ্ট করা যাবেনা।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পৈতৃক বাসভবন
চলে আসবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পৈতৃক বাসভবনে। এখানে ভালোই দর্শনার্থী থাকে। ভেতরে গিয়ে দেখবেন কী কী আছে।
মূলত রাষ্ট্রপতি বা তার পরিবারের কেউ এখানে থাকেন না। ঈদ বা বিভিন্ন পার্বণে তিনি এখানে আসেন সময় কাটানোর জন্য। সাজানো-গোছানো সিম্পল বাড়িটি, পুরাতন সেই দোতলা টিনের ঘর আজও আছে, শুধু সেদিকে সেই মানুষ নেই। যাই হোক, মিঠামইনের সবগুলো স্পট দেখা শেষে আমরা রওনা দিলাম ছাতিরচরের উদ্দেশ্যে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জানিয়ে রাখি আপনাদের, মাঝপথে হাওরের মাঝে বেড়িবাঁধে যাওয়ার পথে বিভিন্ন চরে ছাতিরচর বলে ভুল বোঝানো হতে পারে। অন্যদের কথায় কান না দিয়ে আমাদের মতো সোজা চলে আসুন ছাতিরচর। মনে রাখবেন, ছাতিরচর বেড়িবাঁধ থেকে অনেকটা দক্ষিণে, নদীর তীরে অবস্থিত।
ছাতিরচর
এবার যাবেন, নিকলী হাওরের “রাতারগুল” নামে পরিচিত সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত ছাতিরচরে। জাম্বুরা! জাম্বুরা! জাম্বুরা! এই গাছের নাম কী? এই গাছের নাম? করচ ও হিজলের বনে, জলে লাফালাফি করার আগে পাখির চোখে দেখে আসা যাক এই অনিন্দ্য সুন্দর ছাতিরচরকে।
এখানে গোসলের আগে অবশ্যই নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখবেন। যারা ভালো সাঁতার জানেন না, তারা লাইফ জ্যাকেট পরবেন বা স্থানীয় নৌকা থেকে ভাড়ায় টিউব নিতে পারেন। নিচে কিন্তু পানির স্রোত একটু বেশি, যেহেতু পাশেই বহমান নদী, তাই সাবধানে গোসল করবেন। এখানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটার রেকর্ড আছে।
নিকলী হওর ভ্রমণ সমাপ্তি
যাই হোক, ছাতিরচর দেখা শেষে আমাদের নিকলী হাওরের সবগুলো স্পট দেখা শেষ হলো। বিকেলে হাওরের বুকে নৌকায় ভাসতে ভাসতে আবার ফিরে আসবেন বেড়িবাঁধে। এর মাধ্যমে আমাদের একদিনের নিকলী হাওর ভ্রমণের পরিসমাপ্তি। বাংলাদেশের ১০টি সেরা পর্যটন স্পট ভ্রমণ টিপস্ এর প্রথম আয়োজন শেষ হলো।
প্রিয়, আমাদের নিকলী হাওর ভ্রমণ এক দিনেই: কম খরচের ট্যুর প্লান ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এমন নতুন নতুন ভ্রমণ টিপস্ পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি অন করে দিন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আজকের মতো এখানেই শেষ, আল্লাহ হাফেজ।
Comments ১