আমরা এমন কাজ করেছি, যা বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই। ৫০ বা একশো বছর পর মানুষের কাজের মর্ম বুঝতে পারে না। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আমরা এরকম কথা শুনতে পাই। কিন্তু ইতিহাসে যে কজন মানুষের ক্ষেত্রে এই কথাটি যথার্থ হবে, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন নিকোলা টেসলা।
নিকোলা টেসলার অনেক আবিষ্কার বর্তমানেও ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার হচ্ছে। তার আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট। তার নামে প্রায় তিনশোটিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবীতে তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ থেকে ১০০ বছর আগে।
এই ভিডিওতে মূলত এসি এবং ডিসি কারেন্ট, নিকোলা টেসলার কিছু আবিষ্কার এবং সেই সাথে থ্রি সিক্স নাইন এই বিষয়গুলো প্রকাশ করা হবে। নিকোলা টেসলা এবং থমাস এডিসনের মধ্যবর্তী দ্বন্দ্বের কথা সবাই জানেন। নিকোলা টেসলা এসি কারেন্টের পক্ষপাতি ছিলেন এবং থমাস এডিসন ডিসি কারেন্টের।
এই দুজনের মধ্যে এসি এবং ডিসি নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের দ্বন্দ্বের মধ্যে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন নিকোলা টেসলা। নিকোলা টেসলার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত অনেক গল্প কিংবা ঘটনা আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন এনায়েত চৌধুরীর এই ভিডিওতে। লিংক ভিডিওর ডিসক্রিপশনে দেয়া থাকবে।
যাইহোক, এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট) এবং ডিসি (ডাইরেক্ট কারেন্ট) এর মধ্যে কেন এসি জয়ী হয়েছিল তা বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমে বুঝতে হবে কারেন্ট বিষয়টি আসলে কী।
খুব সহজ করে বললে, কারেন্ট বা ইলেকট্রিসিটি মূলত হচ্ছে ইলেকট্রনের চলাফেরা বা মুভমেন্ট। মনে করুন, আপনি কোনভাবে কিছু ইলেকট্রনকে এই স্থান থেকে আলাদা করে অন্য স্থানে নিয়ে এসেছেন। ফলে এখানে ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। এর ফলে এই স্থানটি ঋণাত্মক আধানপ্রাপ্ত হবে।
অন্যদিকে, যেহেতু ইলেকট্রন সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সেই স্থানে ইলেকট্রনের ঘাটতি থাকবে। ফলে সেই স্থানটি ধনাত্মক আধানপ্রাপ্ত হবে। এখন আপনি এই দুইটি স্থানের মধ্যে আধান বা চার্জের ব্যবধান সৃষ্টি করলেন। একে বলা হয় বিভব পার্থক্য।
আপনি যদি এই দুইটি স্থানকে একটি সুপরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করেন, তবে ঋণাত্মক প্রান্ত হতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন ধনাত্মক প্রান্তের দিকে যাত্রা শুরু করবে এবং একটি সাম্য অবস্থার সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। এর ফলে ইলেকট্রনের প্রবাহ তৈরি হবে এবং এই বিষয়টি হচ্ছে কারেন্ট।
অর্থাৎ, যেকোনো প্রক্রিয়ায় দুইটি স্থানের মধ্যে যদি চার্জ বা আধানের ব্যবধান তৈরি করা যায়, তবে সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আপনি যতক্ষণ চার্জের ব্যবধান বজায় রাখতে পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাবেন।
এখন এই যে ইলেকট্রন প্রবাহিত করছে, এই মুভ করার ধরনের উপর ভিত্তি করে কারেন্ট দুই প্রকার।
১. ডিসি বা ডিরেক্ট কারেন্ট
২. এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট
একটি ব্যাটারি বিবেচনা করুন। ব্যাটারির এক প্রান্ত হচ্ছে ধনাত্মক এবং অপর প্রান্ত হচ্ছে ঋণাত্মক। এখন ব্যাটারির এই দুইটি প্রান্ত যদি আপনি সংযুক্ত করেন, তবে ঋণাত্মক প্রান্ত হতে অতিরিক্ত ইলেকট্রন ধনাত্মক প্রান্তের দিকে যেতে শুরু করবে।
এখানে ইলেকট্রনের গতি একমুখী, অর্থাৎ ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মক প্রান্তের দিকে। ইলেকট্রনের এই একমুখী গতির ফলে যে কারেন্ট তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ডিরেক্ট কারেন্ট। সময়ের সাথে সাথে ব্যাটারির বিভব পার্থক্য কমতে থাকবে।
যখন বিভব পার্থক্য একদম শূন্য হয়ে যাবে, তখন ব্যাটারিটি অকার্যকর হয়ে যাবে। তার মানে দুই প্রান্তের চার্জের ব্যবধান শূন্য হয়ে যাবে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। আমরা জানি, যেদিকে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় বিদ্যুৎ তার বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ ধনাত্মক দিক থেকে ঋণাত্মক দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কিন্তু এই তথ্য আসলে সঠিক নয়।
মূলত, যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়েছে, তখন মানুষ ইলেকট্রন সম্পর্কে তেমন কিছু জানতো না। ফলে মানুষ মনে করত ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে ইলেকট্রন সম্পর্কে জানার পরেও মানুষ বিদ্যুৎ প্রবাহের দিকের বিষয়টি আপডেট করেনি।
মূলত, ইলেকট্রন যেদিকে প্রবাহিত হয়, বিদ্যুৎও সেদিকেই প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ নেগেটিভ থেকে পজিটিভ। তবে বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক পজিটিভ থেকে নেগেটিভ বা নেগেটিভ থেকে পজিটিভ যেটাই রাখা হোক না কেন, চূড়ান্ত গাণিতিক ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়ে না।
ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহের প্রাথমিক ধারণাটিকেই এখনো ধরে রাখা হয়েছে।
যাইহোক, এবার এসি কারেন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। এসি কারেন্টের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন বারবার দিক পরিবর্তন করে। অর্থাৎ, একবার এদিকে আবার অন্যদিকে।
সেকেন্ডে কতবার দিক পরিবর্তন করছে, তাকে বলা হয় ফ্রিকোয়েন্সি। আমরা বাসা-বাড়িতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তা সেকেন্ডে ৫০ থেকে ৬০ বার দিক পরিবর্তন করে। এর মানে, ইলেকট্রন একবার ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক এবং পরবর্তী মুহূর্তে ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মক দিকে প্রবাহিত হয়।
মূলত, যেই উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাঠানো হয়, সেই উৎস ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক প্রান্ত অনবরত পরিবর্তন হতে থাকে।
যার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক অনবরত পরিবর্তিত হতে থাকে।
যাইহোক, ইলেকট্রনের দিক পরিবর্তনের ফলে ইলেকট্রনিক ডিভাইসেও ভোল্টেজের ওঠানামা দেখা যায়। আপনি যদি একটি লাইট বাল্ব স্লো মোশনে ভিডিও করেন, তবে লাইট বাল্বের আলোর উজ্জ্বলতার ওঠানামা দেখতে পাবেন, যা সাধারণভাবে চোখে পড়ে না। কারণ, এই ঘটনাগুলো এতটাই দ্রুত ঘটে যে আমাদের চোখ তা ধরা দিতে পারে না।
এবার দেখা যাক, কেন ডিসি-এর বিপরীতে এসি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আমরা জানি, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ক্ষমতা সমান বিদ্যুৎ প্রবাহ গুণ বিভব পার্থক্য। অর্থাৎ, তারের মাধ্যমে উৎপন্ন বিদ্যুৎ অন্য স্থানে প্রেরণ করলে কতটুকু আউটপুট পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে কারেন্ট (I) এবং ভোল্টেজ (V)-এর ওপর।
এখানে লক্ষ্য করুন, আপনি একই পরিমাণ পাওয়ার পেতে পারেন কারেন্টের মান বাড়িয়ে এবং ভোল্টেজের মান কমিয়ে, অথবা কারেন্টের মান কমিয়ে ভোল্টেজের মান বাড়িয়ে।
এখন আমরা যে কোনো পরিবাহী তারের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ প্রেরণ করি না কেন, তারের নিজস্ব একটি রোধ থাকবেই। এই রোধের ফলে কিছু বিদ্যুৎ তাপে রূপান্তরিত হয়, যার ফলে বিদ্যুতের অপচয় হয়।
তারের মধ্যে কতটা তাপ উৎপন্ন হবে, তার সমীকরণ হচ্ছে:
Heat loss = I² × R
এখানে, I হচ্ছে কারেন্ট এবং R হচ্ছে তারের রোধ।
তাহলে খেয়াল করুন, কারেন্টের মান যত বেশি হবে, বিদ্যুতের অপচয় তত বেশি হবে। ফলে কারেন্টের মান কমিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় কমানো জরুরি ছিল।
এখন, P = I × V সমীকরণটি লক্ষ্য করুন। আমরা যদি কারেন্টের মান কমিয়ে ভোল্টেজের মান বাড়িয়ে দিই, তাহলেও একই পরিমাণ পাওয়ার আউটপুট পাওয়া সম্ভব।
এ কারণেই এসি কারেন্ট ডিসি থেকে এগিয়ে ছিল। কারণ, এসি কারেন্টের ক্ষেত্রে খুব সহজে কারেন্টের মান কমিয়ে ভোল্টেজের মান বাড়ানো সম্ভব ছিল এবং এর বিপরীতটিও করা যেত। আর এই কাজটি করা যায় ট্রান্সফরমারের সাহায্যে।
অন্যদিকে, ডিসি-এর ক্ষেত্রে এটি সহজলভ্য ছিল না। ফলে ডিসি কারেন্টে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিদ্যুৎ প্রেরণের সময় প্রচুর বিদ্যুৎ অপচয় হতো।
এসি কারেন্টের তুলনায় এটি অনেক দূরে বিদ্যুৎ প্রেরণের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়। এসি কারেন্টকে খুব সহজে উচ্চ ভোল্টেজ থেকে নিম্ন ভোল্টেজ এবং নিম্ন ভোল্টেজ থেকে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা যায়।
এই কারণেই এসি কারেন্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং এখনো বিদ্যুৎ প্রেরণের ক্ষেত্রে এসি কারেন্ট ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান সময়ে পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ নিম্ন কারেন্ট ও উচ্চ ভোল্টেজে প্রেরণ করা হয়। সেই উচ্চ ভোল্টেজের কারেন্ট বাসা-বাড়িতে প্রেরণের ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে নিম্ন ভোল্টেজে নামিয়ে আনা হয়। এই ভোল্টেজ সাধারণত ২২০ থেকে ২৪০ ভোল্ট।
তবে ডিসি কারেন্টকেও ছোট করে দেখার কিছু নেই। আমরা যত ধরনের পোর্টেবল ডিভাইস ব্যবহার করি, যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরা—এসব ডিভাইসেই ডিসি কারেন্ট ব্যবহৃত হয়।
আপনারা নিশ্চয়ই মোবাইল চার্জার খেয়াল করেছেন। একটি অ্যাডাপ্টর থাকে, যার মূল কাজ হচ্ছে এসি কারেন্টকে ডিসি কারেন্টে রূপান্তর করা।
এসি কারেন্ট ছাড়াও নিকোলা টেসলা অনেক ক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছেন। তিনি প্রথম রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে একটি নৌকা স্পর্শ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, যা ছিল পৃথিবীর প্রথম রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস।
তিনি প্রথম নিয়ন লাইট আবিষ্কার করেছিলেন। ১৮৯৫ সালে রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কারের সময়, টেসলাও এক্স-রে নিয়ে কাজ করছিলেন। যদিও টেসলার আগে রন্টজেন তার গবেষণা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে, টেসলা তার নিজস্ব পদ্ধতিতে বাকেলান্ড টিউবের মাধ্যমে এক্স-রে উৎপন্ন করেন, যার নাম দেন “শেডোগ্রাফ।” এটি এক্স-রে প্রযুক্তি উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
নিকোলা টেসলা আমেরিকার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক্স-রে ছবি ধারণ করেন। এছাড়াও, রেডিও আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও টেসলার সাথে কিছু ঘটনা ঘটেছিল।
মারকোনির সময়ে টেসলাও রেডিও নিয়ে কাজ করছিলেন। তবে সেই সময় টেসলার ল্যাবে কিছু দুর্ঘটনার কারণে, শেষ পর্যন্ত মারকোনি তার গবেষণা প্রকাশ করেন।
টেসলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে ইনডাকশন মোটর। এছাড়াও, তার ব্লেডলেস টারবাইন আবিষ্কারও উল্লেখযোগ্য।
নিকোলা টেসলা ছিলেন একজন অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব।
প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন তিনি। শুধু সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভাবতেন না, তিনি সুদূরপ্রসারী চিন্তাও করতেন। এই সুদূরপ্রসারী চিন্তার একটি অংশ ছিল সমগ্র পৃথিবীতে তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এই স্বপ্নকে সামনে রেখে টেসলা আবিষ্কার করেন টেসলা কয়েল।
এই টেসলা কয়েলের মাধ্যমে টেসলা দেখান যে ওয়ারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন সম্ভব। টেসলা কয়েলে যদি আপনি এসি কারেন্ট প্রয়োগ করেন, তাহলে টেসলা কয়েলের চারপাশে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। এখন যেহেতু এসি কারেন্ট ব্যবহার করা হয়, ফলে ইলেকট্রনের দিক বারবার পরিবর্তিত হয়। এই দিক পরিবর্তনশীল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে টেসলা কয়েলের আশেপাশে যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস আনলে তা সক্রিয় হয়ে যায়।
যেমন, আপনি খেয়াল করে দেখুন—এই লাইটটিকে যখন টেসলা কয়েলের পাশে নেওয়া হচ্ছে, তখন লাইটটি জ্বলে উঠছে। আবার লাইটটিকে যখন দূরে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, তখন লাইটটি নিভে যাচ্ছে। অর্থাৎ, টেসলা কয়েলের ফলে যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হচ্ছে, এই ফিল্ডের ভেতরে লাইটটি আসার ফলে এটি সক্রিয় হয়ে যাচ্ছে।
টেসলা কয়েলে সাধারণত উচ্চমাত্রার তড়িৎ প্রবাহ দেওয়া হয়, যা উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তরিত হয় এবং আশেপাশে একটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে।
টেসলা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি বিশাল টেসলা কয়েল স্থাপন করেছিলেন এবং পৃথিবীর আরো বিভিন্ন স্থানে এমন টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তার ধারণা ছিল, এই টাওয়ারগুলোর মাধ্যমে যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
কিন্তু এই ওয়ারলেস সিস্টেমটি বাস্তবায়নযোগ্য ছিল না, কারণ এটি খুব বেশি দূর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত না। তবে বর্তমানে আমরা স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে এই ওয়ারলেস প্রযুক্তি অহরহই দেখছি, যেমন ওয়্যারলেস চার্জার। যদিও এর কার্যপ্রণালী পুরোপুরি টেসলা কয়েলের মতো নয়, তবে অনেকটাই কাছাকাছি।
যাই হোক, নিকোলা টেসলা সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা সম্ভব। তবে এখন থ্রি সিক্স নাইন এই বিষয়টি সম্পর্কে বলা যাক।
নিকোলা টেসলা খুবই প্রখর মেধাবী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড কিংবা কথাবার্তার জন্য তিনি যথেষ্ট বিতর্কিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি বিষয় ছিল থ্রি সিক্স নাইন।
তিনি মনে করতেন, থ্রি সিক্স নাইন সংখ্যা তিনটির মহিমা বুঝতে পারলে মহাবিশ্বকে জানা যাবে। অর্থাৎ, এই থ্রি সিক্স নাইন হচ্ছে ইউনিভার্সাল কোড। তিনি এই সংখ্যাগুলোর ব্যাপারে এতটাই আকৃষ্ট ছিলেন যে, তিনি তার জীবনযাপনে এই সংখ্যাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতেন। এবং তিনি তার জীবনের শেষ সময়টা যে হোটেলে কাটিয়েছিলেন, সেই রুমের নম্বর ছিল ৩৩২৭।
যাই হোক, এই সংখ্যাগুলোকে কিছু বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আলাদা করা যায়। আপনি ১ নিয়ে এটিকে ক্রমাগত দ্বিগুণ করতে থাকুন। দ্বিগুণ করার ফলে আপনি যে সংখ্যাগুলো পাবেন, এই সংখ্যাগুলোর অঙ্কগুলো যোগ করলে পাবেন ১, ২, ৪, ৮, ৭, ৫। এই প্যাটার্নে থ্রি সিক্স নাইন অনুপস্থিত।
আবার, আপনি ১ নিয়ে এটিকে ক্রমাগত ১/২ করতে থাকুন। এর ফলে আপনি যে সংখ্যাগুলো পাবেন, সেই সংখ্যাগুলোর অঙ্ক যোগ করলে পাবেন ১, ৫, ৭, ৮, ৪, ২। এই প্যাটার্নেও থ্রি সিক্স নাইন অনুপস্থিত।
এবার আপনি ৩ সংখ্যা বিবেচনা করুন এবং এটিকে ক্রমাগত দ্বিগুণ করতে থাকুন। এর ফলে আপনি যে সংখ্যাগুলো পাবেন, সেই সংখ্যাগুলোর অঙ্ক যোগ করলে আপনি থ্রি সিক্স প্যাটার্ন পাবেন।
এবার আপনি ৯ বিবেচনা করুন এবং ৯ কে ক্রমাগত দ্বিগুণ করতে থাকুন। এর ফলে যে সংখ্যাগুলো পাবেন, সেই সংখ্যাগুলোর অঙ্ক যোগ করলে আপনি ৯ পাবেন। আবার, ৯ কে আপনি ১/২ করতে থাকুন। এর ফলে যে সংখ্যাগুলো পাবেন, সেগুলোর অঙ্কের যোগফলও হবে ৯।
এছাড়াও বিভিন্ন দিক থেকে থ্রি সিক্স নাইন সংখ্যাগুলোর বিভিন্ন বিশ্লেষণ দাঁড় করানো যায়। এই সকল বিশ্লেষণের কারণে নিকোলা টেসলা থ্রি সিক্স নাইনকে একটি বিশেষ সংখ্যা বলে মনে করতেন।
তবে এখানে যে সকল মিল উল্লেখ করা হয়েছে, এই সকল মিল নিকোলা টেসলা নিজে বের করেছিলেন না; পরবর্তীতে অন্য কেউ করেছিল। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
আসলে আপনি যে কোনো সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করে বিভিন্ন বিশ্লেষণ দিতে পারেন। সুতরাং, সংখ্যার এরকম মিল খুঁজে এটিকে বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য করার কোনো যুক্তি নেই। সংখ্যার এরকম মিলগুলোকে বিজ্ঞান না বলে দর্শন বলা যেতে পারে।
প্রকৃতির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফ্র্যাকশন। ফ্র্যাকশনের মাধ্যমে দশমিক সংখ্যার ডাইমেনশন ব্যাখ্যা করা যায়। ফ্র্যাকশন সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।