পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো: পাকিস্তানিরা তাহাজ্জুদ দিন আহমদকে এতটাই ভয় পাইতো যে উনিশশো ৭১ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টো বইলা উঠছিলেন আলোচনা বৈঠকে, “আমি মুজিবকে ভয় পাইনা, ইমোশনাল এপ্রোচে মুজিবকে আবু করা যায়, কিন্তু তার পিছনে ফাইল বগলের যে চুপচাপ নটোরিয়াস লোকটা বসে থাকে, তাকে কাবু করা শক্ত ডিসটার্ব।
উদ্দিন হাই টেল, ইয়ু ওয়েলবিউর মেইন প্রবলেম।” পাকিস্তান যখন বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করতেছে উনিশশো ৭১ সালে, তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কে ছিল? একটু বলেন তো? ইয়াহিয়া খান। কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপ হারলে যেমন কোচরা পদত্যাগ করে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের কাছে হারার পরে ইয়াহিয়া খান আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থাকেন না।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হইতেছে, এই ইয়াহিয়া খানের জায়গায় পাকিস্তানের অত্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন এই জুলফিকার আলি ভুট্টো। দেখেন, উনিশশো ৭১ সালের ষোলই ডিসেম্বর বাংলাদেশ যুদ্ধে জিতল। ২০ ডিসেম্বরে এই জুলফিকার আলি ভুট্টো এই হারু পার্টি পাকিস্তানের দায়িত্ব নেন।
পাকিস্তানিরা কেন
এতগুলা কথা বললাম, জাস্ট এইটুকু বুঝাইছে, পাকিস্তানের এতো গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো, যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হইতে যাইতেছেন, তিনি পর্যন্ত উনিশশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দিন আহমদকে এতটা ভয় পাইতেন।
তবে ভুট্টোর উক্তি আর আশঙ্কা একটা ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হয়েছিল পাকিস্তানের জন্য। তাজউদ্দিন আহমেদ হয়ে উঠছিলেন একটা বিশাল সমস্যা, তিনি কোনদিন আপোষ করেন নাই। বীরভূম হাতে মুক্তিযুদ্ধের হাল ধরছিলেন মুক্তিকামী বাংলার জনগণের জন্য, পাকিস্তানের হাত থেকে ছিনায় আনছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা।
আরও পড়ুনঃ ভারত বাংলাদেশের চেয়ে কতটা শক্তিশালী
আজকের ভিডিওটাতে মেনদি আলোচনা করবো স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সময়টা আছে না, ওই সময়টাতে কিংবা তার ঠিক আগে আগে, তাহাজ্জুদ দিন আহমদকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন এই ব্যাপারগুলা নিয়ে।
চলুন শুরু করা যাক। উনিশশো ৭১ সালে যথারীতি আমাদের বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া খানের মধ্যে একটা বৈঠক হয়, তবে এই বৈঠক ব্যর্থ হইলে কি কি বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া লাগবে, সেটার পরিকল্পনা তাহাজ্জুদদিন আহমদ আগেই করে রাখছিলেন। প্ল্যানটা ছিল, উনি আর বঙ্গবন্ধু আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবেন, আর ওইখান থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন, একই সাথে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিবেন এবং তার এই পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধুর সম্মতি ছিল।

যেমনটা আপনারা জানেন, পঁচিশে মার্চ স্থান হানাদার বাহিনী আক্রমণ করলো, ওই পঁচিশে মার্চ রাতে তাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর কাছে যান আর তারা আত্মগোপন করার জন্য ঢাকায় একটা বাসাও ঠিক করেন। কিন্তু ইতিহাসের এই যুগো সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু তার বাসাতে অনড় ছিলেন।
উনি তাজউদ্দিন আহমেদকে বলছিলেন, “বাড়িতে গিয়ে নাকে তেল নিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন সাতাইশে মার্চ হরতাল ডেকেছি।” ওই সময়টা যদি না মুজিব ভাই বাঙালি জাতির অভিসংবাদিত নেতা হলেন, আপনি আপনার নেতৃত্বের উপরে তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে। (পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো) সেদিন বঙ্গবন্ধু বলছিলেন, “তোমরা যা করবার করো, আমি কোথাও যাবনা।” বঙ্গবন্ধুর এই কথাটা শোনার পরে তাজউদ্দিন আহমেদ কিছুটা অভিমান করছেন।
রাত্রে এগারোটার দিকে উনি যখন শুনছেন মিলিটারিরা ক্ষমতা নিয়ে নিছে, একই সাথে ইপি আর বাহিনীকে নিরস্ত্র করা হইছে, তখন আমির উল ইসলাম, কামাল হোসেন এবং কুমিল্লার নির্বাচিত এম এম এ মোজাফরের সাথে লুঙ্গি আর হাফাতা শার্ট, রাইফেল ও কোমরে পিস্তল গুজে অজানার পথে বের হয়ে পড়েন।
তিনি যাওয়ার সময় যোহরা তাজকে উনি জাস্ট বইলা গেছিলেন, “তোমরা যা করবে করো, আমি চলে গেলাম।” এখন আমরা যে সময়টা নিয়ে কথা বলতেছি, ঠিক এই সময় বাংলাদেশ শিওর ছিল না, ইন্ডিয়া আসলে বাংলাদেশকে এই মুক্তিযুদ্ধে সাপোর্ট দিবে, কে দিবে না।
এই ব্যাপারটা তো এই ঘটনার পরে তাজউদ্দিন আহমেদ যখন একটা বাসার আশ্রয় গ্রহণ করছেন, যেখানে বাসার ছাদ থেকে লুকায়, উনি পাকিস্তানিদের তান্ডব লিলা দেখতেছিলেন এবং একই সাথে বঙ্গবন্ধুর জন্য চিন্তা করতেছিলেন। (পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো) পরবর্তীতে অনেক ঝড় ঝাপটা পাড়ি দিয়ে ৩০ মার্চ সকাল সাড়ে দশটার দিকে উনি ঝিনাইদহে পৌঁছান।
তখনও তো হচ্ছে, ইন্ডিয়ার সাথে আসলে সম্পর্ক কি রকম হবে সেটা নিশ্চিত না। তাই তা যদি না হয়, চিন্তা করে রাখেন, যদি ভারত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন না দেয়, তাইলে উনি বাংলাদেশের মাটিতেই আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ চালায় যাবেন।
এখন ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য ভারতের সাথে যে এত দেখা করতে হবে, ওদেরকে অনেক কিছু বুঝাইতে হবে, তাজউদ্দিন কৃষকের ছদ্মবেশে সীমান্তের উদ্দেশ্যে যান, কিন্তু ওই সময় উনি চিন্তা করেন, প্রতিবেশী ভারতের রাষ্ট্রে আমার যদি যাইতেই হয়, তাইলে স্বাধীন দেশের সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ্য মর্যাদা নিয়েই উনি ভারতে যাবেন, শুধুমাত্র ভিক্ষার থালা হাতে সাহায্য চাইতে উনি ভারতে যাইতেছেন, এইটা উনার সেলফ রেসপেক্টটা অনেক বাধে। এই কারণে উনি আর আমিরুল ইসলাম উনারা ভারতে যান নাই।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ – পৃথিবীর মানচিত্রে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র
সরাসরি ভারতে উনারা না যায়া, উনার তৌফিকে ইলাহী চৌধুরী এবং মাহবুব উদ্দিন আহমেদ সীমান্তের ওই পাড়ে পাঠান ভারতের সাথে কথা বলার জন্য। এখন ভারতের সীমান্তরক্ষী যে ক্যাপ্টেন আছে, উনার নাম ক্যাপ্টেন মহাপাত্র। এই ক্যাপ্টেন মহাপাত্রের সঙ্গে এই দুইজন তরুণ নেতা তখন দেখা করে। ক্যাপ্টেন মহাপাত্র এই সংবাদটা পূর্বাঞ্চলীয় আইজিডি গোলক মজুমদারের কাছে পৌঁছান।
(পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো) ঠিক এইটার পরই তাজউদ্দিনের স্বপ্নটা পূরণ হয়, সম্পূর্ণ সামরিক কায়দায় স্বাধীন রাষ্ট্রের ২ প্রতিনিধিকে পূর্ণ সম্মান সহকারে গারডোব আনার প্রদান করে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের সীমান্ত চৌধুরীতে।
গোলক মজুমদারের সাথে যখন তাজউদ্দিন আহমদের দেখা হয়, তখন উনি এইটা বুঝান, বাংলাদেশের ভিতরে প্রতিমুহূর্তে আমি যখন থাকতেছি, আমার জীবনের ঝুঁকি থাকতেছে, কিন্তু তারপরেও আমি ভারতে আশ্রয় নিতে চাই না, কারণ বঙ্গবন্ধুর সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ভারতে হইতেছে বাঙালির শেষ সম্বল, তাই এমন কিছুই করা যাবে না যাতে ভারত বিব্রত বোধ করে।
তখন গোলক মজুমদার তাজউদ্দিন আহমেদকে এইটা বোঝানোর চেষ্টা করেন, “দেখেন, আপনার জন্য কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে থাকাটা নিরাপদ না, আর আপনাদের মতন যোগ্য নেতারা যদি পূর্ব পাকিস্তানে না থাকে, তাইলে এইযে গণবিক্ষোভটা হইছে, এই যে যুদ্ধটা হইতেছে, এটা কিন্তু স্থিমিত হয়ে যাবে।
আর আপনি যদি ভারতে আসেন, আমরা কোনোভাবে বিব্রত বোধ করব না।” তখন তাজউদ্দিন আহমেদ আর আমির সাহেব জিপে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। (পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো)
পরে ভারতের প্রধান সীমান্তরক্ষী কে এ ফেরেশতা দিল্লী থেকে এসে তাদের সাথে দেখা করেন এবং অফিসারদের জন্য সংরক্ষিত কিছু বাসভবন আছে, ওইখানে বাংলাদেশের হবু এই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ কে নিয়ে থাকতে দেওয়া হয়। এইটুকু শুনলে অন্তত আপনি বুঝতে পারবেন, তাজউদ্দিন আহমেদের সেলফ রেসপেক্ট কতটা উঁচু জায়গায় ছিল।
(পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো) কোন মতে, ইভেন ইজ ভারতের সাহায্য আমাদের খুবই দরকার এখন, তাও উনি ভারতের সামনে নিজের মাথা ঝুঁকাবেন না।
এখন কথা হইতেছে, ওই সময়ে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল, রাত দশটায় ১০ নম্বর সফটওয়্যার জং রোডে ইন্দিরা গান্ধীজীর সাথে তাজউদ্দিন আহমদের প্রথম দেখা হয়। ইন্দিরা তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করছিলেন, শেখ মুজিব কেমন আছেন? তখন তাজউদ্দিন বলেন, “যখন তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়, তখন তিনি সব অফিসে পরিচালনা করছিলেন। আমি আমার দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছে।” খেয়াল করেন, কথার টোনটা কি রকম—আমরা যুদ্ধ কইরা শেষ হয়ে যাইতেছি, আমাদেরকে প্লিজ হেল্প করো, এরকম আবৃত্তির টোনে উনি কখনো কথা বলেননি।
আরও পড়ুনঃ সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত – কী করবে বাংলাদেশ?
ইভেন এই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সামনে, উনার কথার ঢং আর প্রতিটা শব্দ চয়ন থেকে বোঝা যায়, উনি তখন থেকেই, যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, নিজেকে একজন স্বাধীন দেশের নেতা এবং একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক মনে করতেন। উনি খুব পরিষ্কারভাবে ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়ে দেন, “আমরা কখনো এই যুদ্ধে চাইনা, ভারত তার সৈন্য দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীন কইরা দিক, আমাদের নিজেদের স্বাধীনতার লড়াই আমরা নিজেরাই লড়বো।”
এক্ষেত্রে আমাদের যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে আমাদের দেশে মুক্তিবাহিনীকে গড়ে তোলা হইতেছে। এইটার ট্রেনিংয়ের সময় কিংবা আশ্রয় এর সময়, ভারতকে আমাদের পাশে দরকার। আপনাদের সাহায্য লাগবে, আপনাদের অস্ত্র সরবরাহ লাগবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের স্বাধীনতার কথা প্রচারেরও ব্যবস্থা আপনারা কইরা দেন।
এখন আমি আপনাদেরকে আবার নিয়ে যাব ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে, রাত দশটায় তাজউদ্দিন আহমদ আকাশবাণীতে কলকাতার বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনের সংবাদটা দেন এবং সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তা যুদ্ধ না হামত মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের আসলে কি করা উচিত, (পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো) এইটা রিলেটেড দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
আর আমরা যখন স্বাধীন হইয়া যাবো, তখন বাংলাদেশে আসলে কি করা লাগবে, এটা নিয়ে একটা সুদীর্ঘ বক্তব্য দেন। এগারোই এপ্রিল, উনি বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্যদেরকে একসাথে করেন শপথ গ্রহণ করার জন্য। এই মনে ঠিক করেন, এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটা বাংলার মাটিতেই করবেন। আর তার ঠিক পরেই, সতেরোই এপ্রিল, কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়া গ্রামে বৈদ্যনাথ তলার আম্র বাগানে বাংলাদেশ সরকারের যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা আমাদের কারোরই অজানা না।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানীর নাম মুজিব নগর রাখা হয়েছিল, যে এইটাও কিন্তু রাখছিলেন আমাদের তাজউদ্দিন আহমদ। এখন, এই যে স্বাধীন বাংলাদেশের একটা মন্ত্রিসভা গঠিত হইল, এই মন্ত্রিসভার ভিতরে একজন মীরজাফর ছিলেন। এই মীরজাফরের নাম খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। প্রথম কথা, প্রধানমন্ত্রী পদ উনাকে দেওয়া হয়নি, এইটা নিয়ে উনি মনক্ষুন্ন ছিলেন। উনাকে দেওয়া হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, বাট কৌশলে উনি এই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে ব্যবহার করতেছিলেন পাকিস্তান এবং মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষার কাজে, মুক্তিযুদ্ধ যাতে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায়, ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
উনি এইটার জন্য একটা আবেগপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। উনি বাংলাদেশের মানুষের সামনে বলেন, “তোমরা কি স্বাধীনতা চাও, নাকি মজিবকে চাও? যদি স্বাধীনতা পেতে হয়, তাহলে মজিবকে পাবা না। আর মজিবকে পাইতে হইলে স্বাধীনতার সংগ্রাম বিসর্জন দিতে হবে।” এই কথাগুলা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই আসছিল, উনি জাস্ট উনার যুক্তি হিসেবে এটাকে উপস্থাপন করতেছিলেন।
এর জবাবে, তা যুদ্ধী মাহমুদ সেইদিন বলছিলেন, “স্বাধীনতাও চাই, মুজিবকেও চাই, স্বাধীনতা এলেই মুজিবকে পেতে পারি।” এই যে খন্দকার মোস্তাক মার্কিন প্রশাসনের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করতেছে, এটা কিন্তু তাজউদ্দিন আহমদ জানেন না ফেলেন এবং পরবর্তীতে পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব আলম চাষী সহ, এই খন্দকার মোস্তাক মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওরে বাদ দিয়া দেওয়া হয়।
এইটার প্রতিশোধ পরবর্তী কালে, খন্দকার মোস্তাক খুবই নির্মমভাবে নিসিলেন। উনিশশো ৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে কি হয়েছিল, এটা আপনারা জানেন। ঠিক তারপর পর, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কে হয়েছিল, একটু বলেন তো?
এই খন্দকার মোস্তাক উনি আমাদের জাতীয় ৪ নেতাকে একসাথে বন্দী করেন, যার মধ্যে আমাদের তাজউদ্দিন আহমদ ও ছিলেন। দেখেন, পনেরোই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে মারা হইলো, ওই বছরই, উনিশশো পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতাকে কিন্তু তেলের ভিতরে নির্মমভাবে শেষ করে দেওয়া হয়। তাহাজুদ্দিন আহমদের উপরে সেই দিনের ক্ষোভ কতটা নির্মমভাবে উঠায় ছিলেন খন্দকার মোস্তাক, এটা ৩ নভেম্বরের জেলখানার ভিতরে এই ঘটনা থেকে খুব ভালো মতন বোঝা যায়।
কিন্তু তার ঠিক তিনদিন পরেই, ৬ নভেম্বর, খন্দকার মোস্তাকে কিন্তু ক্ষমতা থেকে সরায় দেওয়া হয়। একটা মিড্ডারী মাধ্যম, যেইটা মূলত পরিচালনা করেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ এবং কলমেল সাফাত জামিল। যেটাই হোক, তাজউদ্দিন আহমদ যখনই জানতে পারছেন, খন্দকার মোস্তাক এরকম ষড়যন্ত্র করতেছেন, এইটা যদি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাড়াতাড়ি জানাজানি হইয়া যায়, তাইলে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা আরেকটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
বলতেই পারে, মানুষ আছে, আমাদের নেতারা এরকম ষড়যন্ত্র করতেছে, আমরা কার জন্য যুদ্ধ করবো? এই ঘটনাটাকে তাহাজ্জুদ দিন আহমদকে কিন্তু সামাল দিতে হইছে। ভিতরে গোপন রাখতে হইছে, এইটা যাতে একদম ছড়াইয়া না পড়ে, সেটা ইনশিওর করতে হইছে। এইখানে তার বিচক্ষণতার একটা বড় প্রমাণ পাওয়া যায়।
ইভেন ওই সময় আওয়ামী লীগের ভিতরেই একটা বিভাজনের কারণে মুক্তিযুদ্ধে নানান রকমের বিস্ফোরণ খোলা দেখা দেয়। দেশের ভিতরে অন্য একটা বাহিনীরা মুক্তিযোদ্ধাদের ইউনিটে হামলা করে। ইভেন তাজউদ্দিন আহমদ কে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাজউদ্দিন আহমদ কে দেশের ভিতরে নিজেদের মধ্যে এই কোনদল দ্বন্দ্ব সামাল দিতে হইছিল এবং তার ৯ মাসের যে সরকার ব্যবস্থা, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সফল একটা সরকার ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়, যেটা পুরাপুরি মুক্তিযুদ্ধকালীন ছিলো।
একটা দেশ যুদ্ধ কইরা স্বাধীন হইতেছে, এত গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন একটা সময়। দেখেন, এতটা প্রেসারের মধ্যে, যেখানে যুদ্ধ চলতেছে, তাজউদ্দিন আহমদ কিন্তু বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কথা ভুইলা যান নাই। একই সাথে, বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তির দাবি তিনি সমান তালে চালায়া গেছেন।
এখন আমি আপনাদেরকে নিয়ে যাবো উনিশশো ৭১ সালের তেইশে নভেম্বর। তাজউদ্দিন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি পাঠান, অনুরোধ করেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে ছয়ই ডিসেম্বর, এগারোটার সময়, ইন্ডিয়ার পার্লামেন্টের ভিতরে বাংলাদেশের স্বীকৃতি দানের কথা ঘোষণা করা হয় এবং এরপর ইন্দিরা গান্ধী তাজউদ্দিন আহমদকে একটি রিপ্লাই চিঠি দেন।
সময় কিন্তু এই তাজউদ্দিন আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ইন্ডিয়ার সাথে একটা অলিখিত টাইপের চুক্তি ছিল, যেটা কিছুটা লিখিত এবং কিছুটা অলিখিত ছিল। এরকম বলা হচ্ছিল যে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে সহায়ক বাহিনী বা সাপোর্টিং ফোর্স হিসেবে। আর যেই দিন বাংলাদেশ সরকার মনে করবে ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশের মাটিতে থাকার আর কোন দরকার নাই, ওই দিনই তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতে হবে। ঐ যুক্তি মতে, বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, উনিশশো ৭২ সালের তিরিশ মার্চের মধ্যে তোমরা তোমাদের বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যাবা। ইন্দিরা গান্ধী তার কথা রাখলেন এবং ১৫ মার্চের মধ্যে তিনি বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যান।
এই কেসটা কেন ইম্পরট্যান্ট? অনেক দেশে, পরবর্তীতে যুদ্ধকালীন সময়ে দেখবেন, নিজের দেশে সৈন্যবাহিনী ঢুকিয়ে অন্য একটা দেশকে হেল্প করার জন্য, যখন যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, ওই দেশটাও গেল, তারপরেও বাহিনীকে ওই দেশের মধ্যে রেখে দেয় যাতে করে ওই দেশ থেকে নিজের কথা মতন চালাতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ তা করতে দেয়নি এবং এর পিছনে তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বের একটা বড় ভূমিকা ছিল।
এখন তাজউদ্দিন আহমদ বা অন্য নেতৃবৃন্দ ভারতের মধ্যে ছিলেন, উনারা দেশে প্রত্যাবর্তন করেন বাইশে ডিসেম্বর ১৯৭১। বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানাতে এসেছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান খুশলুর ওস্তাদজি এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার গোলক মজুমদারসহ ভারতীয় প্রশাসনের অনেকে। হৃদয়ের সময় একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। প্রস্তাবজি তা যুদি নাহমুদকে বলেন, আশা করি ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চিরকাল বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। খুবই সুন্দর একটা কথা বলছেন, খুবই সুন্দর একটা রিপ্লাইও দেওয়া যেত। কিন্তু তাজউদ্দিন আহমদ কি বলছিলেন, একবার শোনেন, হ্যাঁ, সমতা সহকারে বন্ধুত্ব হতে পারে, দেশের স্বার্থের জন্য নম্রবাসী নরম কথার মানুষ। তাজউদ্দিন আহমদও সেই দিন হেরে কথা বলেননি।
ইন্ডিয়াতে এমনই একজন নেতা ছিলেন, এই তাজউদ্দিন আহমদ। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতাকালীন সময় তাজউদ্দিন কিন্তু একদিনও উনার পরিবারের সাথে জীবনযাপন করতে পারেননি এবং নেতা অভিতা বই থেকে এইটা দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দাজ একদিন তাজউদ্দিন আহমদের অসুস্থতার কথা শুনে, উনার অফিসে যান। দেখেন, উনার মাত্র ১টি শার্ট, ওইটা উনি রাতের বেলা ধুইয়া শুকাইতে দিয়েছেন যাতে পরের দিন এটা শুকালে, এই শার্টটা পরেই আবার কাজে যেতে পারেন। এইটা দেখার পরে, যোহরা তাজ তার জন্য দুইটা শার্ট কেনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু যখন সদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল বারোই জানুয়ারি নতুন মন্ত্রী সভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার সমর্পণ করবেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। সেই দিন তিনি বলছিলেন, “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। নেতার অনুপস্থিতিতে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থেকে দেশকে স্বাধীন করেছি, আবার নেতাকে মুক্ত করে তারই হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার তুলে দিয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। অন্তত ইতিহাসের পাতার ১ কোণায় আমার নামটা লেখা থাকবে।”
১ কোনাতে না, আপনি বাংলাদেশের ইতিহাসের মধ্যমনি হয়ে থাকবেন, আর আপনার নামটাও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ওকে, আজকের ভিডিওটা মেইনলি ছিল তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কালে কি কি ভূমিকা নিয়েছিলেন, এমনকি তারা ঠিক পূর্ববর্তী সময়টাতেও তার ভূমিকা কেমন ছিল, এইটা ছিল তাজউদ্দিন আহমদকে নিয়ে বানানো ভিডিওর প্রথম পার্ট। এইটার শেষ পার্টে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা কি ছিল, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ডিসকাস করা হবে। আশা করি ভিডিওটা আপনাদের ভালো লাগছে আর পরের পার্টটাও দেখার জন্য আশা করি।
আপনার এক্সসাইটের রিসেন্টলি আমি বিভিন্ন ব্যক্তির নিয়ে যে ভিডিওগুলো বানিয়েছি, যেমন মাওলানা ভাসানী, সাদ্দাম হোসেন, কিংবাই তাজউদ্দিন আহমদ, আশা করি এই ভিডিওগুলো মানুষ অনেক বেশি পছন্দ করছে। আপনার বিভিন্ন টপিকের সাজেশন দিতে থাকেন, দেখি কোনটা কোনটা নিয়ে ভিডিও বানানো যায় সামনে। সোবিএত ইউনিয়ন কেন ভাংসিলো, ওইটার উপরে একটা ভিডিও করবো, অলরেডি স্পিড লেইখা ফেলছে, দেখা যাক কখন আসে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভিডিওটা দেখার জন্য আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস যত লম্বা কমাতে পারবেন, তত ভালো। আল্লাহ হাফেজ।
Comments ৪