বরফযুগ সমাচার: টাইমল্যাপসটি খেয়াল করুন। এখানে বছরের ১/২ সময়ে উত্তর মেরুর বরফ কানাডা, ইউরোপ, এবং ইউরো-এশিয়ার দিকে বিস্তৃতি লাভ করছে। পরবর্তীতে বাকি ১/২ সময়ে উত্তর মেরুর বরফের বিস্তৃতি কমে যাচ্ছে, কিন্তু দক্ষিণ মেরুর বরফ পরিস্থিতি লাভ করছে। এটি একটি নিত্য ঘটনা। প্রতি বছর এই সাইকেল চলতে থাকে।
এখন, কোনো কারণে যদি মেরুর বরফ শুধুমাত্র বিস্তৃত হতেই থাকে এবং বছরের পর বছর পৃথিবীর বড় একটি অংশ বরফে আবৃত করে রাখে, তবে সেটাকে আপনি কী বলবেন? আপনি যাই বলেন না কেন, বিজ্ঞানীদের ভাষায় এমন পরিস্থিতিকে বলা হয় “আইস আইজ” বা বরফ যুগ।
পৃথিবীর অতীতে এমন কিছু বরফ যুগ এসেছিল, যখন সম্পূর্ণ পৃথিবী কয়েকশো মিটার পুরো বরফের আস্তরে আবৃত ছিল। এ বিষয়টিকে বলা হয় “স্নো বল আর্থ”। বর্তমানেও কিন্তু পৃথিবীতে বড় একটি বরফ যুগ চলছে, যাকে বলা হচ্ছে “লেট সিনোজোয়িক আইস এজ”, যা ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছে এবং এখনো চলমান।
আজকের ভিডিওতে আইস এজ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমি জুম্মান, আছি আপনাদের সাথে। আপনারা দেখছেন বিজ্ঞান পাইছি।
আমাদের বর্তমান পৃথিবী একসময় বরফে আবৃত ছিল এবং সুদূর ভবিষ্যতে আবার বরফে আবৃত হতে পারে। এমনটা ভাবতেই হয়তো অস্বস্তি লাগে এবং মনে প্রশ্ন আসে, কী এমন বিষয় রয়েছে যার পরিবর্তনে সম্পূর্ণ পৃথিবী প্রভাবিত হয়।
বরফ যুগ বুঝতে হলে আমাদের প্রথমত মিলাঙ্কোভিচ সাইকেল বুঝতে হবে। ১৯ শতকের শুরুর দিকে সার্বিয়ান ভূতাত্ত্বিক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী মিলাঙ্কোভিচ পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পৃথিবী এবং সূর্যের অবস্থানের সম্পর্ক সামনে আনেন, যা “মিলাঙ্কোভিচ সাইকেল” নামে পরিচিত।
পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস সূর্য। সুতরাং, পৃথিবী খুবই উত্তপ্ত হলে এর পেছনে যেমন সূর্যের ভূমিকা থাকবে, আবার পৃথিবী অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে গেলেও এর পেছনে সূর্যের ভূমিকা থাকবে। এবং সেটা কিভাবে হয়, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন মিলাঙ্কোভিচ।
পৃথিবী এবং সূর্যের অবস্থানের সহজ সরল চিত্রের সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু বিষয়টি এতটা সরল নয়। এখানে মোটামুটি তিনটি বিষয় রয়েছে, যা পৃথিবীর জলবায়ুতে বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম। সেই তিনটি বিষয় হচ্ছে “এক্সসেন্ট্রিসিটি”, “অবলিকুইটি”, এবং “প্রিসেশন”।
পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব সবসময় একই থাকে না। কারণ পৃথিবী সূর্যকে বৃত্তাকার কক্ষপথের বিপরীতে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। ফলে জানুয়ারি মাসে পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে এবং জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহের গ্র্যাভিটির প্রভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ কখনো বেশি উপবৃত্তাকার হয়, আবার কখনো কম উপবৃত্তাকার হয়। অর্থাৎ, এই বিষয়টি পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটে।
মোটামুটি প্রায় ১০০,০০০ বছরের ব্যবধানে পৃথিবীর কক্ষপথ সবচেয়ে বেশি উপবৃত্তাকার থেকে সবচেয়ে কম উপবৃত্তাকার হয়। পৃথিবীর কক্ষপথের এই পরিবর্তনকে বলা হয় “এক্সসেন্ট্রিসিটি”।
এখন, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে আসা সৌরশক্তির পরিমাণও পরিবর্তিত হয়। আমরা সবাই জানি, পৃথিবী তার অক্ষ থেকে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এর ফলে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সৌরশক্তির তারতম্য দেখা যায়। এর প্রভাব হিসেবে আমরা ঋতুর পরিবর্তন লক্ষ্য করি। একই কারণে মেরু অঞ্চলে টানা ৬ মাস দিন এবং ৬ মাস রাত থাকে।
তবে পৃথিবী ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার বিষয়টিও সবসময় একই থাকে না। সময়ের সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয়। প্রতি ৪১,০০০ বছরের ব্যবধানে হেলে থাকার এই বিষয়টি ২২ থেকে ২৪.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়।
যদিও পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন খুবই কম এবং মোটামুটি স্থিতিশীল, কারণ পৃথিবীর একটি বিশাল উপগ্রহ, চাঁদ রয়েছে। যার ফলে এই পরিবর্তন ২২ থেকে ২৪.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমরা যদি মঙ্গলের কথা বিবেচনা করি, তবে তার হেলে থাকার বিষয়টি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়, কারণ মঙ্গলের চারপাশে বড় কোনো উপগ্রহ নেই।
যাই হোক, পৃথিবীর নিজ অক্ষ থেকে হেলে থাকার বিষয়টিকে বলা হয় “অবলিকুইটি”।
পৃথিবী তার অক্ষ থেকে হেলে থেকে নিজ অক্ষে ঘুরছে। এর মধ্যেও আরেক ধরনের মুভমেন্ট রয়েছে। বিষয়টি বোঝার জন্য একটি লাটিম কিভাবে ঘোরে, তা খেয়াল করুন। লাটিম তার নিজ অক্ষে ঘোরার পাশাপাশি একটি বৃত্তাকার গতিও সম্পন্ন করে।
পৃথিবী প্রায় প্রতি ২৬,০০০ বছরে এরকম একটি মুভমেন্ট সম্পন্ন করে এবং এটি পর্যায়ক্রমিকভাবে চলতে থাকে। এই বিষয়টিকেই বলা হয় “প্রিসেশন”।
এই তিনটি গতি একসাথে বিবেচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে আপতিত সৌরশক্তির পরিমাণ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে কমে এবং আবার বাড়ে। এর প্রভাবে পৃথিবীর আবহাওয়াতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সংঘটিত হয়। এই বিষয়টিকেই বলা হয় “মিলাঙ্কোভিচ সাইকেল”।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সৌরশক্তি কীভাবে আইস এজের মতো বিষয় তৈরি করতে পারে? এটি বোঝার জন্য পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে লক্ষ্য করা যাক।
মনে করুন, মিলাঙ্কোভিচ সাইকেলের এমন একটি অবস্থান বিবেচনা করছি, যখন সবচেয়ে কম সৌরশক্তি পৃথিবীর উত্তর মেরুতে আপতিত হবে। অর্থাৎ, এক্সসেন্ট্রিসিটির কারণে পৃথিবী সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে। অবলিকুইটির কারণে হেলে থাকার কোণ সবচেয়ে কম, অর্থাৎ ২২ ডিগ্রি হবে। প্রিসেশনের অবস্থানও এমন হবে, যাতে সবচেয়ে কম সৌরশক্তি উত্তর মেরুতে আপতিত হয়।
এর মানে, তখন উত্তর মেরুতে শীতকাল চলবে। এর ফলে মেরু অঞ্চলে থাকা বরফ বিষুবীয় অঞ্চলের দিকে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকবে। ওই সময় যেহেতু সবচেয়ে কম সৌরশক্তি উত্তর মেরুতে আপতিত হবে, সেখানে এমন একটি ঘটনা ঘটবে যা নতুন বরফ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে।
বরফ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক প্রতিফলক। বরফে আপতিত আলোর প্রায় ৮৫% আলো প্রতিফলিত হয়।
এখন বরফ থেকে যেহেতু বড় অংশের আলো প্রতিফলিত হয়ে যায়, সেহেতু ওই স্থান গরম না হয়ে ঠান্ডা বাড়তে থাকে। ফলাফল, নতুন বরফ তৈরি হয়।
এখন নতুন বরফের ফলে ঠান্ডার প্রভাব আরেক ধাপ বাড়ে। ফলে এখানে একটি চেইন রিয়্যাকশন তৈরি হয় এবং বরফ তৈরি প্রক্রিয়াটিকে তরান্বিত করে। এখানে অবশ্য আরেকটি বিষয় রয়েছে। জলের তুলনায় স্থলে সহজে বরফ তৈরি হতে পারে।
এখন উত্তর মেরুতে স্থলভাগের পরিমাণ বেশি। যার ফলে উত্তর মেরুতে বরফ তৈরি হলে তা খুবই দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। এভাবেই দীর্ঘদিনের ব্যবধানে পৃথিবীর বড় একটি অংশ বরফে আবৃত হয়ে যায় এবং সে অবস্থাটিকেই বলা হয় বরফ যুগ।
এখন পর্যন্ত পৃথিবী পাঁচটি মেজর বরফ যুগ অতিক্রম করেছে। এই পাঁচটি মেজর বরফ যুগের মধ্যে প্রথম দুই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পৃথিবী বরফে আবৃত ছিল বলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে ক্রাইসিনিয়ান আইস এজ সম্পূর্ণ পৃথিবীর বরফে আবৃত থাকার বিপরীতে যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে, তা হলো মিলাঙ্কোভিচ সাইকেলের মাধ্যমে পৃথিবীর বড় একটি অংশ বরফে আবৃত থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ পৃথিবী বরফে আবৃত হয়ে যাবার ক্ষেত্রে মিলাঙ্কোভিচ সাইকেল যথেষ্ট নয়। তাহলে কিভাবে ক্রাইসিনিয়ান আইস এজে সম্পূর্ণ পৃথিবী কয়েকশো মিটার পুরো বরফের আস্তরে আবৃত হয়েছিল?
এই ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আমরা জানি, পৃথিবীকে উষ্ণ রাখার ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূর্য থেকে আসা তাপশক্তি এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো ধরে রাখে, যার ফলে পৃথিবী উষ্ণ থাকে।
বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যথেষ্ট বেড়ে গেলে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়। আবার যথেষ্ট কমে গেলে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে অর্থাৎ ক্রাইসিনিয়ান আইস এজের সময় এমন কিছু ঘটেছিল, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায় এবং এর ফলে সম্পূর্ণ পৃথিবীজুড়ে বরফ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এতটা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, ফটোসিন্থেসিস, ওয়েদারিং, আগ্নেয়গিরি এবং সূর্য থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণ।
উদ্ভিদ এবং প্রাণী পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতা বজায় রাখে। প্রাণী তার নিঃশ্বাসের সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। অন্যদিকে উদ্ভিদ সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সকল স্থলভাগ প্রায় একসাথে যুক্ত ছিল এবং এদের অবস্থান ছিল বিষুবীয় অঞ্চলের আশেপাশে। সেই সাথে ওই সময় স্থলভাগে কোনো প্রকার প্রাণী ও উদ্ভিদের আবির্ভাব হয়নি। শুধুমাত্র সমুদ্রের পানিতে মাইক্রোঅর্গানিজমের অস্তিত্ব ছিল এবং এদের মধ্যে একটি ছিল সায়ানোব্যাকটেরিয়া।
সায়ানোব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল এবং পানিতে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিজের জন্য খাদ্য তৈরি করে এবং বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে অক্সিজেন ত্যাগ করে, যাকে বলা হয় ফটোসিন্থেসিস। ধারণা করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের যথেষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষিত হয়েছিল।
বায়ুমণ্ডলে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকলে সেই সময় যে বৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অ্যাসিড রেইন। অ্যাসিড রেইনের সময় বৃষ্টির পানির সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত হয়ে কার্বনিক এসিড তৈরি করে ভূমিতে পতিত হয়। এই দুর্বল অ্যাসিড ভূমিতে পতিত হওয়ার পর ভূমিতে থাকা পাথরের মিনারেলের সাথে যুক্ত হয়ে ভূমিতে আটকে যায়। এই বিষয়টিকে বলা হয় ওয়েদারিং।
তার মানে, ওয়েদারিং এর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভূমিতে থাকা পাথরে আটকে যায়। এ বিষয়টি সহজেই দেখা যায়, যখন বহু পুরনো পাথরের উপর দুর্বল অ্যাসিড দেয়া হয় এবং এমন ক্ষেত্রে পাথর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রিলিজ হতে থাকে।
তাহলে বলা যায়, অতীতে ওয়েদারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের যথেষ্ট কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষিত হয়েছিল। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি বড় উৎস হচ্ছে আগ্নেয়গিরি। তবে আগ্নেয়গিরি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর ধুলোবালি নির্গত হয়, যা দীর্ঘ সময় বায়ুমণ্ডলে বিচরণ করে। ফলে বায়ুমণ্ডলে এমন একটি স্তর তৈরি হয়, যা সূর্যের আলোকে আটকে দেয়।
এছাড়াও আগ্নেয়গিরি থেকে সালফার নির্গত হয়। এই সালফার যদি স্ট্রাটোস্ফিয়ারে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, সে ক্ষেত্রে তা কুলিং ইফেক্টকে আরো তরান্বিত করে। সূর্য থেকে কতটুকু শক্তি নির্গত হবে, তা নির্ভর করে সূর্যের সংগঠিত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার উপর।
বর্তমান সময়ের তুলনায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে সূর্যের সংঘটিত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার হার ৭% কম ছিল। এখন সূর্যের সংঘটিত ফিউশন বিক্রিয়ার পরিমাণ যদি ৭% কম থাকে, তবে সূর্য থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণও কম হবে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলবে।
এখনই চরম বরফ যুগের সময় সম্পূর্ণ পৃথিবী বরফে আবৃত হয়েছিল কিনা তা নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেকে ধারণা করেন, পৃথিবীর বিশালভাগ পুরোপুরি বরফে ঢাকা পড়েনি। বরং সেখানে বরফের আস্তর ছিল তুলনামূলক পাতলা এবং বরফের স্তর কন্টিনিউাস থাকার পরিবর্তে টুকরো টুকরো অংশে ভাসমান অবস্থায় বিষুবীয় অঞ্চলে বিচরণ করত।
যা পরবর্তীতে সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে সারভাইভ করতে সাহায্য করেছিল। আবার বিষুবীয় অঞ্চল যদি সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা থাকে, তবে সে বরফের গভীরতা কম ছিল। যার ফলে সূর্যের আলো এই বরফকে ভেদ করে পানিতে যেতে পারত এবং সমুদ্রের নিজস্ব তাপ থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাধ্যমে সায়ানোব্যাকটেরিয়া সারভাইভ করতে পেরেছিল।
পৃথিবীর তখনকার সময়ের সাথে কিন্তু বর্তমান সময়ের জুপিটারের একটি চাঁদ ইউরোপার মিল রয়েছে। ইউরোপার সম্পূর্ণ সারফেস বরফে আবৃত। এখন পৃথিবী যখন সম্পূর্ণ বরফে আবৃত ছিল, তখনও সেখানে যেহেতু সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মতো মাইক্রোঅর্গানিজম বেঁচে থাকতে পেরেছে। তবে ইউরোপাতে হয়তো বরফের আস্তরের নিচে মাইক্রো অর্গানিজম থাকতে পারে।
যাইহোক, এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সুদূর অতীতে পৃথিবীর যে বরফে আবৃত ছিল, এটা বর্তমানের মানুষ কিভাবে জানলো? ছয়শো ৫০ মিলিয়ন বছর আগের ক্রাইসিয়ান আইসেজের আগেও কিন্তু আরো একবার সম্পূর্ণ পৃথিবী বরফে আবৃত হয়েছিল। তবে সেই সময়টা ছিল বহু আগে, প্রায় ২.৫ বিলিয়ন বছর আগে। ওই সময়ের আইসেজ সম্পর্কে যথেষ্ট এভিডেন্স পাওয়া না গেলেও, কিন্তু ক্রাইসিয়ান আইসেজের যথেষ্ট এভিডেন্স পাওয়া যায়।
যেমন:
- গ্লেসিয়াল ডিপোজিটস
- ব্র্যান্ডেড আয়রন ফর্মেশন
- ক্যাপ কার্বোনেটস
- কার্বোনাইস সেডিমেন্টস
- বর্ণনাইসের টোপস
- ইরিডিয়াম কনটেন্ট
- সাফসাইডেস এবং ফ্লারি
এসকল এভিডেন্স থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া যায় যে, একসময় পৃথিবী বরফে আবৃত ছিল। তখন পৃথিবী ছিল ফিচারলেস, অর্থাৎ যেদিকেই দেখা হোক না কেন, সবদিক থেকে একই রকম ছিল। চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ, বৈচিত্র্যহীন প্রান্তর।
বর্তমানের অ্যান্টার্কটিকা যেমন একটি বৈচিত্র্যহীন স্থান, ঠিক তেমনি তখন সম্পূর্ণ পৃথিবী ছিল বৈচিত্র্যহীন, ফিচারলেস বোর্ডিং একটি প্লেস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সম্পূর্ণ পৃথিবী যখন বরফে আবৃত হয়ে গিয়েছিল, তখন বরফের পজিটিভ ফিডব্যাকের কারণে, অর্থাৎ বরফ ভালো প্রতিফলক হওয়ার কারণে, স্নোবল আর্থ থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসা সহজ ছিল না। তাহলে কিভাবে পৃথিবী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছিল?
ক্রাইসিয়ান আইসেজ প্রায় ২৫ মিলিয়ন বা ২৫,০০,০০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই আইসেজ থেকে বের হবার ক্ষেত্রে আগ্নেয়গিরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে ধারণা করা হয়। বিশাল বিশাল আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত বিপুল পরিমাণ উত্তপ্ত লাভা বরফ গলতে সাহায্য করেছে।
এছাড়াও, আগ্নেয়গিরি থেকে প্রচুর গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এইভাবে সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসে।
ক্রাইসিয়ান আইসেজ সংঘটিত হয়েছিল আজ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে, যার বিপরীতে মানুষের ৫ পুরুষ, ১০ পুরুষ কিংবা ১০০ পুরুষ সময়কাল কিছুই না। এমনকি হোমো সেপিয়েন্সের ইতিহাস মাত্র ২ মিলিয়ন বছর আগের, যেখানে ক্রাইসিয়ান আইসেজ ঘটেছিল ছয়শো ৫০ মিলিয়ন বছর আগে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা অতীত সময়ের কথা বলা হচ্ছে।
যাইহোক, এখন বর্তমান সময়ের আইসেজ সম্পর্কে বলা যাক। আমরা যখন বরফ যুগ বলি, তখন সেটা কিন্তু বিশাল সময়ের একটি ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। এই সময় ব্যক্তির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামার সাইকেল চলে। অর্থাৎ, এই সময়কালের মধ্যেই বহুবার পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে, আবার কমে।
অর্থাৎ, এক একটি বরফ যুগের অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। যা বলতে গেলে এক ধরণের বিরক্তি লাগতে পারে। ফলে সেই দিকে না গিয়ে একদম সর্বশেষ বরফ যুগের ফেজ সম্পর্কে বলা যাক।
যেকোনো আইসেজের দুইটি স্টেজ রয়েছে। একটি হচ্ছে গ্লেসিয়াল স্টেজ, যখন পৃথিবীর বড় একটি অংশ বরফে আবৃত থাকে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইন্টার-গ্লেসিয়াল স্টেজ, যখন বরফ কম স্থান জুড়ে বিস্তৃত থাকে।
এই দুইটি বিষয় পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটে। অর্থাৎ, গ্লেসিয়াল স্টেজের পরে আসে ইন্টার-গ্লেসিয়াল স্টেজ।
সর্বশেষ লেট সিনোজোয়িক আইসেজের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এমন বিশটি সাইকেল সংঘটিত হয়েছে। সর্বশেষ গ্লেসিয়াল স্টেজের ব্যক্তি ছিল ১১৫,০০০ বছর আগে থেকে ১১,৭০০ বছর আগে পর্যন্ত।
এর পরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ বর্তমান সময়ে, ইন্টার-গ্লেসিয়াল স্টেজ চলমান রয়েছে। এখন ইন্টার-গ্লেসিয়াল স্টেজে পৃথিবীতে বরফের বিস্তৃতি কম থাকবে। এবং সেজন্যই আমরা দুই মেরুতে সর্বক্ষণিক বরফের উপস্থিতি দেখতে পাই।
আইসেজের সময়কালে সেই সময়ের পরিবেশ অনুযায়ী প্রাণীর শারীরিক গঠনেও বিন্যাস ছিল। যেমন, সর্বশেষ বরফ যুগের সময় ওই সময়ের হাতি, এছাড়া স্লথ, চিতা, কন্ডরের মতো প্রাণীগুলোর গঠন ছিল বিশাল।
ধারণা করা হয়, বরফ যুগের সময় যেহেতু প্রাণীদের লুকানোর তেমন কোনো স্থান ছিল না, ফলে তাদের শরীরের সাইজ বড় হয়েছে, যেন তারা কোনো স্থানে না লুকিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে।
এখন পর্যন্ত একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা কেমন হবে, সেক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রীনহাউস গ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে, আবার কমেছে। এবং এই বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত হয়েছে।
তবে বর্তমানে, বিশেষ করে শিল্পযুগের পর থেকে, বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে এবং বাড়ছে।
এখন বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে মোটা দাগে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
প্রথমত, বরফ গলার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। যার ফলাফল হিসেবে উপকূলীয় বহু স্থলভাগ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, বরফের নিচের স্তরে লক্ষ লক্ষ বছর আগের অজানা বিভিন্ন ভাইরাস থেকে যেতে পারে, যারা হয়তো এতটা প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদেরকে সুপ্ত অবস্থায় রাখতে সক্ষম।
এখন বরফ গলার ফলে অজানা ভাইরাস যদি প্রকৃতিতে অবমুক্ত হয়, তবে তা অজানা রোগ সামনে নিয়ে আসতে পারে, যা করোনার চেয়েও ভয়াবহ মহামারি তৈরি করতে পারে।
সুতরাং, কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণের ব্যাপারে আমাদের সচেতনতার বিকল্প নেই।
গরমকালে কতটা গরম অনুভূত হবে, তা নির্ভর করে আর্দ্রতার উপর। অর্থাৎ, কোনো একদিনের তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি হয়, তবে তা আপনি আর্দ্রতার কারণে ৪৩ কিংবা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত অনুভব করতে পারেন।
এখন আর্দ্রতা কি কোনো একদিনের আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক হবে, নাকি অস্বস্তিদায়ক হবে, এই বিষয়গুলো কিভাবে আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে, এই সকল বিষয় বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন।