বৃষ্টি সমাচার – Rainfall, Hailstorm, Lightning and Artificial rain: গ্রীষ্মকালের পরেই আসে বর্ষাকাল। অর্থাৎ প্রচণ্ড গরমের পরেই বৃষ্টিপাত হয়। তার মানে গরমের সাথে বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক রয়েছে। বৃষ্টিপাতের সাথে অবশ্য আরো বেশ কিছু বিষয় জড়িয়ে আছে, যেমন বজ্রপাত, মেঘ।
অনেক সময় আবার শিলাবৃষ্টি হতেও দেখা যায়। মাঝে মাঝে আবার এতই বেশি বৃষ্টিপাত হয় যার ফলে আকস্মিক বন্যা হতেও দেখা যায়। আবার কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের চেষ্টা করা হয়।
বৃষ্টি সমাচার
আজকের ভিডিওতে বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হবে। আমি জুম্মান আছি আপনাদের সাথে। আপনারা দেখছেন বিজ্ঞান পাইসি।
বৃষ্টি কী কারণে সংঘটিত হয়, এর মোটামুটি ধারণা আমাদের সবার মধ্যেই আছে। সূর্যের তাপে জল এবং স্থলের পানি বাষ্প হয়ে উপরে যায়। এরপরেই জলীয় বাষ্প ঘনিভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে।
বৃষ্টি ও পানিচক্র (Rain or water cycle)

পরবর্তীতে মেঘে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ওয়াটার ড্রপলেট একসাথে হয়ে আকারে বড় হয় এবং ভারী হয়। ফলে তা গ্রাভিটির কারণে পানিরূপে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই হচ্ছে বৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়া, যাকে আমরা পানি চক্র বলতে পারি। তবে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, পৃথিবীতে আমরা তুষারপাত হতে দেখি। আবার শিলাবৃষ্টি হতেও দেখি। এর কারণ কী?
এই বিষয় সম্পর্কে বলার আগে বৃষ্টিপাতের ধরন সম্পর্কে বলা দরকার। কারণ বৃষ্টিপাতের ধরন সম্পর্কে জানলেই আমরা বুঝতে পারব কেন গরমের পর পরই বৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনঃ বন্যা কেন হয় এবং কোন বন্যা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর All kinds of Flood
বৃষ্টিপাতের ধরণ (Type of rainfall)

বৃষ্টিপাত মূলত তিন ধরনের: কনভেকশনাল রেইন, অরোগ্রাফিক রেইন এবং সাইক্লোনিক রেইন। প্রায় সময় প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই হুট করে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টি চলে আসে। এমন বৃষ্টিকেই বলে কনভেকশনাল রেইন।
প্রচণ্ড রোদের কারণে জল এবং স্থলভাগে থাকা পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায়। পরবর্তীতে জলীয় বাষ্প উপরে গিয়ে তাপ রিলিজ করে ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি করে, যার ফলে হঠাৎ করেই বৃষ্টিপাত হয়।
এই ধরনের বৃষ্টিপাত মূলত গ্রীষ্মকালে বা গরমকালে হয়ে থাকে। এবং এই ধরনের বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে ইকোয়েটোরিয়াল অঞ্চলে। ইকোয়েটোরিয়াল অঞ্চল বা বিষুবীয় অঞ্চলে সূর্যের আলোতে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়, যার ফলে এই অঞ্চলে কনভেকশনাল রেইন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
তাছাড়া যেখানে ভূমি বা স্থলের পরিমাণ বেশি, বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধে, এই ধরনের বৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ ভূমি বা ল্যান্ড জলভাগের তুলনায় দ্রুত গরম হয়। এখন দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় উত্তর গোলার্ধে যেহেতু ভূমির পরিমাণ বেশি, সেহেতু উত্তর গোলার্ধে কনভেকশনাল রেইন বেশি হয়ে থাকে।
আমরা জানি, সোলার রেডিয়েশনের কারণে জল ও স্থল উত্তপ্ত হয়। তবে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের পানি বেশি বাষ্পীভূত হয়, কারণ জলভাগে পানির পরিমাণ বেশি। কিন্তু এই জলীয় বাষ্প বাতাসের কারণে সরাসরি উপরে উঠতে পারে না; বরং বাতাসের দিক বরাবর মুভ করে। এখন বাতাস কোন দিক থেকে কোন দিকে প্রবাহিত হবে, তা নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের উপর।
আমরা জানি, জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত এবং বেশি উত্তপ্ত হয়। এখন স্থলভাগ যেহেতু বেশি উত্তপ্ত হয়, সেহেতু স্থলভাগের বাতাস দ্রুত হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে সেখানে নিম্নচাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে জলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। আমরা জানি, বাতাস সবসময় উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে ধাবিত হয়।
ফলে মোটামুটি বলা যায়, বাতাস জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে ধাবিত হয়। এখন বাতাস যেহেতু জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, সেহেতু জলীয় বাষ্প স্থলভাগের দিকে সরে যায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, জলভাগের জলীয় বাষ্পের জন্য যেই মেঘ সৃষ্টি হবে, সেই মেঘ স্থলভাগের দিকে চলে যাবে।
এখন এই মেঘের গতিপথে যদি উঁচু পর্বত থাকে, তবে মেঘ পর্বতের একপাশে জমা হতে থাকে। যার ফলে পর্বতের এক পাশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এবং এই ধরনের বৃষ্টিপাতকেই বলা হয় অরোগ্রাফিক রেইনফল। আমাদের বাংলাদেশসহ ভারতের বর্ষাকালে যে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, তা মূলত এই অরোগ্রাফিক রেইনফল।
বর্ষাকালে ইন্ডিয়ান ওশনে তৈরি হওয়া মেঘ বাতাসের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে সেই মেঘ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিমালয় পর্বতমালায় আটকে যায়। ফলে শিলিগুড়ি, আসাম এবং বাংলাদেশ এই অঞ্চলগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝে মধ্যে এত বেশি হয় যে যার ফলে আকস্মিক বন্যা হতেও দেখা যায়।
যাইহোক, পর্বতের কারণে মেঘ আটকে যাবার ফলে পর্বতের একপাশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও অন্যপাশে প্রায় বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে, যা রেইনশ্যাডো এরিয়া। এবং এই জন্যই পর্বতের অপরপাশে মরুভূমি দেখা যায়। যেমন হিমালয় পর্বতের জন্য বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও অপরপাশে রয়েছে মরুভূমি, যার নাম গবি ডেজার্ট। এই একই কারণে ভারতের রাজস্থানে মরুভূমি দেখা যায়।
যখন গরম এবং ঠান্ডা বাতাস পরস্পরের সংস্পর্শে আসে, তখনই সাইক্লোনিক রেইনফল দেখা যায়। আমরা জানি, গরম বাতাস হালকা এবং আর্দ্র থাকে। অর্থাৎ গরম বাতাস জলীয় বাষ্পে সমৃদ্ধ থাকে। অন্যদিকে ঠান্ডা বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। সেই সাথে ঘনত্ব বেশি থাকে।
এখন এই দুই ধরনের বাতাস যখন পরস্পরের সংস্পর্শে আসে, তখন গরম বাতাস হালকা হওয়ার ফলে এটি উপরে উঠে যায়। যার ফলে গরম বাতাস উপরে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এবং এর ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়, একেই বলা হয় সাইক্লোনিক রেইনফল।
আরও পড়ুনঃ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা Climate change and Nobel prize 2021 physics
এখানে একটি বিষয় খেয়াল করবেন, যখনই বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়, তখনই সারাদেশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়। এটি হচ্ছে সাইক্লোনিক রেইনফল। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অবশ্য আমার একটি বিস্তারিত ভিডিও রয়েছে। লিংক ডেসক্রিপশন বক্সে দেয়া থাকবে।
যাইহোক, বৃষ্টিপাতের ধরন সম্পর্কে জানা হলো। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আসা যাক, এবং তা হচ্ছে কোন ফরমে বৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ বৃষ্টির সময় কি পানি পড়ছে, নাকি শিলা পড়ছে, নাকি তুষার পড়ছে।
বৃষ্টিপাতের ধরণ (Type of Precipitation)

মেঘে থাকা পানি ভূপৃষ্ঠে পতিত হবার বিষয়টিকে বলে প্রেসিপিটেশন। প্রেসিপিটেশন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, অর্থাৎ বিভিন্ন ফর্মে মেঘের পানি ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে পারে। তবে প্রেসিপিটেশনকে মোটা দাগে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়: স্নো, রেইন, স্লিড এবং হেলথ।
বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের তাপমাত্রা কম বিধায় সেখানে থাকা মেঘের মধ্যে আইসক্রিস্টাল এবং বরফ ঠান্ডা পানির টাইন ড্রপলেট বিদ্যমান থাকে। এমন অবস্থায় আইসক্রিস্টাল পানির টাইন ড্রপলেটের সংস্পর্শে এসে বড় হতে থাকে। এবং এভাবে একটা সময় গ্র্যাভিটির কারণে নিচে নেমে আসে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে, তবে আইসক্রিস্টাল গলে না গিয়ে তুষার আকারে ভূপৃষ্ঠে আপতিত হয়।
এবং এই জন্য যে সকল অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে, সে সকল অঞ্চলে তুষারপাত হতে দেখা যায়। মেঘে থাকা আইসক্রিস্টাল ভূপৃষ্ঠে আপতিত হবার ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে, তবে আইসক্রিস্টাল ভূপৃষ্ঠে আঘাত করার পূর্বেই গলে গিয়ে তরল পানিতে পরিণত হয়, যাকে আমরা প্রচলিত ভাষায় বৃষ্টি বলে থাকি।
পানির ফর্মে প্রেসিপিটেশনের ক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকতে পারে। আবার আরেক ধরনের বৃষ্টি রয়েছে, যে ক্ষেত্রে বৃষ্টির ফোঁটা খুবই ছোট হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির ফোঁটা ছোট এবং ঘন হবার ফলে ভিজিবিলিটি কমে যায়। এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে বলা হয় ড্রিজল।
বিশেষ নিবন্ধ: ভূমিকম্প এবং সুনামি Earthquake and Tsunami
স্লিড অনেকটা তুষারের মতোই, তবে স্লিড ভূপৃষ্ঠে পতিত হবার পর গলে যায়। অর্থাৎ স্লিড দিয়ে আপনি চাইলেই স্নোম্যান তৈরি করতে পারবেন না। মেঘ থেকে তুষার ভূপৃষ্ঠে আপতিত হবার আগে বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশে যদি তুলনামূলক গরম লেয়ার থাকে, তবে তুষার সে লেয়ারে গলে যায়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি ফ্রিজিং টেম্পারেচারের নিচে থাকে, তবে গলে যাওয়া তুষার পুনরায় কঠিন হয়ে স্লিড আকারে ভূমিতে আপতিত হয়।
স্পিডকে অনেকটা শিলার সাথে তুলনা করা গেলেও এর আকার খুবই ছোট হয়ে থাকে। এবং শুধুমাত্র যে সকল অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রা ফ্রিজিং টেম্পারেচারের নিচে থাকে, সে সকল অঞ্চলে স্পিড দেখা যায়।
হিল বা শিলা এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। শিলা তৈরি হয় খুবই শক্তিশালী এবং বিশাল মেঘের ফলে। মেঘের অনেক ধরণ রয়েছে, তবে সেদিকে না গিয়ে শুধু শিলা কিভাবে তৈরি হয় তা বলা যাক। বিশাল মেঘের মধ্যে যদি নিম্নচাপ বিরাজ করে, তবে মেঘের ভেতরে বাতাস উচ্চগতিতে উপরে ওঠার বিষয় বিদ্যমান থাকে।
এখন এমন পরিস্থিতিতে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। ফলে সেখানে থাকা তুষার ছোট ছোট শিলা বা বরফ তৈরি করে। কিন্তু সেই বরফ নিচে নেমে আসার সময় নিম্নচাপের ফলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের সাথে আবার উপরে উঠে যায়। ফলে ছোট শিলাতে নতুন করে আরেকটি বরফের স্তর তৈরি হয়। এভাবে শিলার আকার বড় হতে থাকে এবং ফাইনালি তা ভূমিতে আপতিত হয়।
এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিলার ওজন ছিল প্রায় ১ কেজি, যা ১৯৮৬ সালের ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায় পতিত হয়েছিল। এবং ওই দিনের শিলাবৃষ্টিতে ৯২ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
এই তো গেল কি ফর্মে বৃষ্টিপাত হয় তার বিষয়ে। এখনো অনেক বিষয় বাকি রয়েছে, যেমন কেন মেঘ ভেসে থাকে, বজ্রপাত কেন হয়, কৃত্রিম বৃষ্টির বিষয়টি কি ইত্যাদি।
মেঘ ভাসার কারণ (Why cloud float)

আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, মেঘ যেহেতু পানির কারণে তৈরি হয়, তবে মেঘ কেন ভেসে থাকে? আমরা সবাই জানি, বেশি ঘনত্বের বস্তু নিচে থাকে এবং কম ঘনত্বের বস্তু উপরে থাকে। এবং এই জন্যই পানির ওপরে তেল ভাসে, কারণ তেলের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম।
ঠিক এই একই কারণে মেঘ ভেসে থাকে। বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮% হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং প্রায় ২১% হচ্ছে অক্সিজেন। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের ৯৯% হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন। এখন নাইট্রোজেনের আনবিক ভর হচ্ছে ১৪ গ্রাম। অর্থাৎ একটি নাইট্রোজেন অনুর আনবিক ভর হচ্ছে ২৮ গ্রাম।
অন্যদিকে অক্সিজেনের একটি অনুর আনবিক ভর হচ্ছে ৩২ গ্রাম। এখন আর্দ্র বাতাসে সাধারণ বাতাসের মতো হলেও এতে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি থাকে। আর আমরা জানি জলীয়বাষ্প বা পানির আনবিক ভর হচ্ছে ১৮ গ্রাম। তার মানে আর্দ্র বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেনের তুলনায় জলীয়বাষ্পের ভর কম।
যার ফলে আর্দ্র বাতাসের ঘনত্ব সাধারণ বাতাসের তুলনায় কম। আর আমরা জানি মেঘ মানেই হচ্ছে আর্দ্র বাতাস। এবং এই জন্যই মেঘ ভেসে থাকে। এখন মেঘের মধ্যে থাকা ওয়াটার মলিকিউল যখন একসাথে হয়, তখন এর ভর সেই সাথে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এবং তখনই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
বজ্রপাত (Lightning explanation)
বৃষ্টির সময় আকাশে যে বিদ্যুৎ চমকানো দেখা যায়, একেই বলা হয় বজ্রপাত। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লক্ষটি বজ্রপাত সংগঠিত হয়, অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪৪টি। সংখ্যাটি অস্বাভাবিক মনে হলেও স্পেস থেকে দেখলে বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়।

তবে এই বিপুল সংখ্যক বজ্রপাতের সব কয়টি কিন্তু ভূপৃষ্ঠে আসেনা। খুবই সামান্য পরিমাণ বজ্রপাত ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আসে। বেশিরভাগ বজ্রপাত আকাশে মেঘের মধ্যে সংঘটিত হয়।
এখন বলা যাক কেন এই বজ্রপাত সংগঠিত হয়। মেঘের মধ্যে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে ওয়াটারড্রপলেট তৈরি করে। এই ওয়াটারড্রপলেটের কিছু অংশ ফ্রিজ হয়ে আইস ক্রিস্টাল বা তুষার তৈরি করে। পরবর্তীতে ওয়াটারড্রপলেট এবং কিছু আইস ক্রিস্টাল একসাথে হয়ে তুলনামূলক বড় পার্টিকাল তৈরি করে, যাকে বলা হয় গার্পল।
এখন আইসক্রিমটা হচ্ছে ছোট, সেই সাথে হালকা। ফলে আইসক্রিমস্টাল যখন বাতাসের কারণে উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন গার্পলের সাথে সংঘর্ষ হয়, যার ফলে আইসক্রিমস্টাল পজিটিভ এবং গার্পল নেগেটিভ চার্জ প্রাপ্ত হয়। যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পজিটিভ চার্জ উপরের দিকে এবং নেগেটিভ চার্জ নিচের দিকে থাকে।
এখন মেঘের নিচের দিকে থাকা নেগেটিভ চার্জের প্রভাবে মেঘের কাছাকাছি ভূপৃষ্ঠ পজিটিভ চার্জ প্রাপ্ত হয়। এখন স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি বা স্থির বিদ্যুতের পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, তখন মেঘ থেকে নেগেটিভ চার্জ অর্থাৎ ইলেকট্রনিক বিদ্যুৎ চমকানোর মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে এসে ডিস্টার্ব হয়। এখন বিদ্যুৎ চমকানো বা বজ্রপাত যেহেতু ইলেকট্রনিক ডিসটার্ব, হওয়া ফলে মেঘের নেগেটিভ চার্জ সবচেয়ে কম দূরত্বের পথে ভূপৃষ্ঠে আসে।
যার ফলে বজ্রপাত সব সময় উঁচু গাছ বা টাওয়ারের মধ্যে হয়ে থাকে। যদি ভূমিতে উঁচু কিছু না থাকে, একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই ভূমিতে বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই ধরনের বজ্রপাতকে বলা হয় ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটিং। তবে এ বিষয়ে আবার দুইটি ধরন রয়েছে। মেঘ থেকে যদি ইলেকট্রোন অর্থাৎ নেগেটিভ চার্জ ভূপৃষ্ঠে আসে, তবে একে বলা হয় নেগেটিভ ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটিং বা নেগেটিভ সিজি।
অন্যদিকে মেঘের পজিটিভ চার্জের প্রভাবে ভূমি যদি নেগেটিভ চার্জ প্রাপ্ত হয়, তবে ভূমি থেকে ইলেকট্রন মেঘে গিয়ে পজিটিভ চার্জকে ডিস্টার্ব করে এবং এই ধরনের বজ্রপাতকে বলা হয় পজিটিভ সিজি। সাধারণ চোখে অবশ্যই এদের পার্থক্য বোঝা যায় না। তবে নেগেটিভ সিজি-র ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চমকানোর সময় অনেকগুলো ব্রাঞ্চ তৈরি হয়। অন্যদিকে পজিটিভ সিজি-র ক্ষেত্রে ব্রাঞ্চ তৈরি হয় না।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, সকল বজ্রপাত কিন্তু ভূমিতে আসে না। বেশিরভাগ বজ্রপাত মেঘে মেঘে ঘটে থাকে। দুইটি মেঘের অপজিট চার্জ যখন কাছাকাছি চলে আসে, তখন মেঘ থেকে মেঘে চার্জ ডিসচার্জ হয়ে বজ্রপাত ঘটে। আবার কিছু কিছু বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একাধিক মেঘের প্রয়োজন পড়ে না। একটি মেঘের ভেতরেই চার্জার ডিসচার্জ হয়ে বজ্রপাত ঘটে।
আবার কিছু কিছু বজ্রপাত কয়েক কিলোমিটার স্থান জুড়ে বিস্তৃত হতে পারে। একটি বজ্রপাতে প্রচুর পরিমাণ শক্তি থাকে। বজ্রপাতের সময় প্রায় আঠাশ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা তৈরি হয়, যা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি। যে সকল বজ্রপাত ভূমি পর্যন্ত আসে, এদের দ্বারা জানমালের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে বজ্রপাত কিন্তু প্রকৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করে থাকে।
আমাদের বায়ুমণ্ডলের সেভেনটি এইট পার্সেন্ট নাইট্রোজেন থাকলেও উদ্ভিদ সেই নাইট্রোজেন সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। কারণ নাইট্রোজেন নাইট্রোজেন বন্ড খুবই শক্তিশালী। এই শক্তিশালী বন্ধন ভেঙে উদ্ভিদ নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে না। কিন্তু বজ্রপাতের সময় তৈরি হওয়া উচ্চ শক্তির কারণে নাইট্রোজেন বন্ড ভেঙে যায়। ফলে নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড তৈরি করে।
আরও পড়ুন: ঋতু পরিবর্তন এবং মরুভূমি Season change on earth and Desert
পরবর্তীতে এই নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে আসলে উদ্ভিদ এই নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডকে ভেঙে নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নাইট্রোজেন কেন গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং আমাদের শরীরের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ হয় মূলত উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার ফলে।
তাছাড়া আমরা যদি খাদ্য হিসেবে কোনো প্রাণীকে গ্রহণ করি, সেই প্রাণীর শরীরের নাইট্রোজেনও আসে উদ্ভিদের মাধ্যমে। এবং এই জন্য নাইট্রোজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন উদ্ভিদ যদি যথেষ্ট পরিমাণ নাইট্রোজেন না পায়, তবে উদ্ভিদ কাঙ্ক্ষিত ফলন দিতে পারবে না। যার ফলে উদ্ভিদের জন্য এই ফর্মে নাইট্রোজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বজ্রপাত নাইট্রোজেনকে উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য করে তুললেও এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ নাইট্রোজেন পাওয়া যায় না। যার ফলে আমরা উদ্ভিদের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করার জন্য এমোনিয়াকে সার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি, যা উদ্ভিদের নাইট্রোজেনের অভাব পূরণ করে।
সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের স্থান

বেনি জুয়েলার সবচেয়ে বড় লেক হচ্ছে মার্কাইব। এই লেকে বছরের তিনশো দিনই বজ্রপাত হয় এবং প্রতি মিনিটে সেই সংখ্যাটি গড়ে ২৮। অর্থাৎ এই লেকে বছরের তিনশো দিন প্রতি মিনিটে গড়ে আঠাশটি বজ্রপাত হয়ে থাকে। যার ফলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বজ্রপাতের রেকর্ড রয়েছে এই মার্কাইব লেকের ঝুলিতে।
এসিড বৃষ্টি (Acid rain explanation)
বৃষ্টির পানি স্বাভাবিক অবস্থাতেই কিছুটা অ্যাসিডিক হয়ে থাকে। কারণ বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠে আসার আগে বায়ুমণ্ডলে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বোনিক অ্যাসিড তৈরি করে। তবে কার্বোনিক অ্যাসিড খুবই দুর্বল অ্যাসিড, যার ফলে বৃষ্টির পানির পিএইচ মান সাড়ে ৫ এর আশেপাশে থাকে।
এই পিএইচ মানের মাধ্যমে অ্যাসিড এবং খারার তীব্রতা বোঝানো হয়। কোনো বস্তুর পিএইচ সেভেন মানে হচ্ছে এটি নিরপেক্ষ, অর্থাৎ এটি অ্যাসিডিক নয় আবার ক্ষারীয়ও নয়। কিন্তু পিএইচ যদি সেভেনের চেয়ে কম হয়, তবে তা অ্যাসিডিক হবে। এবং পিএইচ এর মান যদি সেভেনের চেয়ে বেশি হয়, তবে তা ক্ষারীয় হবে।
পিএইচ এর মান ১ এদিক সেদিক হওয়া মানে ১০ গুণ অ্যাসিডিটি কিংবা ক্ষারীয়তা বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কোনো বস্তুর পিএইচ ৬ থেকে যদি ৩-এ নেমে আসে, তাহলে বুঝতে হবে বস্তুটি প্রাথমিক অ্যাসিডিক থেকে এক হাজার গুণ বেশি অ্যাসিডিক হয়েছে।
যাইহোক, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে পানির সাথে মিশে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড তৈরি করে। ফলে বৃষ্টির পানি আরও বেশি অ্যাসিডিক হয়ে পড়ে। এই অ্যাসিডিক বৃষ্টি মাটি, উদ্ভিদ এবং জলজ জীবের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
পরবর্তীতে সালফার ডাইঅক্সাইড অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ট্রাইঅক্সাইড উৎপন্ন করে। এখন বায়ুমণ্ডলের সালফার ট্রাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা খুবই শক্তিশালী অ্যাসিড।
অন্যদিকে, নাইট্রোজেন অক্সাইড বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এটিও একটি শক্তিশালী অ্যাসিড। এখন কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলে যদি অতিরিক্ত পরিমাণ সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড থাকে, তবে সেই অঞ্চলের বৃষ্টির পানির অ্যাসিডিটি ৩.৫ পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।
তার মানে, অ্যাসিড রেইনের পানি স্বাভাবিকের চেয়েও একশো গুণ বেশি অ্যাসিডিক থাকে। অ্যাসিডিক পরিবেশে উদ্ভিদ পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। তাছাড়া, অ্যাসিড রেইনের ফলে নদী-নালার পানি অ্যাসিডিক হয়ে যায়, যা পানির নিচের ইকোসিস্টেমকে নষ্ট করে। সুতরাং, অ্যাসিড রেইন পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি বিষয়।
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত (Artificial rain or cloud seeding)

মেঘের মধ্যে থাকা জলীয়বাষ্প ওয়াটার ড্রপলেটে পরিণত হওয়ার জন্য সামান্য পরিমাণ ইনপিউরিটির দরকার পড়ে। এই কাজটি করে থাকে ডাস্ট পার্টিকল, স্মোক কিংবা যে কোনো ক্ষুদ্র পার্টিকল।
এখন যে সকল স্থানে খুবই কম বৃষ্টিপাত হয়, সে সকল স্থানের আকাশে যদি মেঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, তবে এরোপ্লেনের মাধ্যমে সেই মেঘে সল্ট স্প্রে করা হয়, অর্থাৎ লবণ স্প্রে করা হয়। এখন আমরা জানি, লবণ পানিকে আকর্ষণ করে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, যদি মেঘের ভেতরে লবণ স্প্রে করা হয়, তবে সেই লবণ মেঘে থাকা ওয়াটার ড্রপলেটগুলোকে একসাথে করবে, যার ফলাফল হিসেবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা কে বলা হয় ক্লাউড সিডিং।
শুধু যে এরোপ্লেনের মাধ্যমে মেঘের মধ্যে লবণ স্প্রে করা হয়, তা কিন্তু নয়। উঁচু পাহাড় থেকেও লবণ স্প্রে করা হয়ে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
ছোটবেলায় চাঁদ নিয়ে আমার মনে বেশ কিছু বিভ্রান্তি ছিল। যেমন, এমন চিত্রের ক্ষেত্রে রাতের বেলায় চাঁদ দেখতে পাওয়ার কথা নয়, কারণ এমন ক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে অবস্থান করে।
তাছাড়া, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এই বিষয়গুলোসহ চাঁদ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন।
Comments ২