ভূমিকম্প এবং সুনামি: পানিতে ভাসতে থাকা এই নিষ্পাপ হাঁসগুলোর আচরণ বুঝতে পারলেই আপনি ভূমিকম্পের সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পারবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে কমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্প এতটাই কমন যে পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে পঞ্চান্নটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, যার বেশিরভাগই আমরা অনুভব করি না।
তবে বড়মাত্রার ভূমিকম্প পৃথিবীতে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আসে। সেইসাথে বড়মাত্রার ভূমিকম্প কোথায় সংঘটিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে তৈরি হয় সুনামি, যা উপকূলের জীবনযাত্রাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
ভূমিকম্প এবং সুনামি
অন্য সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে পূর্বাভাস দেয়া গেলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পূর্বাভাস দেয়া যায় না। ফলে এটি অন্যান্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী। তবে পৃথিবীর কোন কোন স্থানজুড়ে ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা বেশি তা আগে থেকেই বলা যায়।
ভূমিকম্প এবং টেকটোনিক প্লেট (Earthquake and tectonic plates)

পৃথিবীর একদম উপরের স্তরকে বলা হয় ক্রাস্ট। এইখানে জল, স্থলসহ সবকিছুর অবস্থান। এই ক্রাস্ট অনেকগুলো ছোট-বড় টেকটোনিক প্লেটে বিভক্ত।
ক্রাস্টের নিচে রয়েছে ম্যান্টল। এই ম্যান্টল পুরোপুরি তরল নয়, আবার কঠিনও নয়। ম্যান্টল অনেকটা জেলির মতো। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, জেলির মতো ম্যান্টলের উপর টেকটোনিক প্লেটগুলো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এই বিষয়টিকে আমরা পানির উপর ভাসমান এই নিষ্পাপ হাঁসগুলোর সাথে তুলনা করতে পারি। এখানে পানি হচ্ছে ম্যান্টল এবং হাঁসগুলো হচ্ছে একেকটি টেকটোনিক প্লেট।
এখন পানিতে যদি হালকা আলোড়ন তৈরি করা হয়, তবে হাঁসের মধ্যে যে প্রভাব পড়বে, ঠিক একই প্রভাব তৈরি হয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। এখন দেখা যাক হাঁসের মধ্যে কী কী প্রভাব তৈরি হতে পারে।
প্রথমত, একটি হাঁস অন্য একটি থেকে দূরে সরে যেতে পারে। ঠিক একইভাবে একটি টেকটোনিক প্লেট অন্যটি থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দুর্বল ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সেইসাথে গিরিখাতের মতো নিচু ভূমি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এমন ভূমিকম্পের সাথে আগ্নেয়গিরিও তৈরি হয়। সাধারণত মহাসাগরে থাকা টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে এমন ঘটনা বেশি ঘটে।
দ্বিতীয়ত, দুইটি হাঁসের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ হতে পারে। টেকটোনিক প্লেটের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। এমন ক্ষেত্রেও ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সেইসাথে পাহাড়-পর্বত তৈরি হয়। কারণ দুইটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সংযোগস্থলের শিলাস্তর ভাঁজ হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে পাহাড়-পর্বত তৈরি হয়।
মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতমালা এই কারণেই তৈরি হয়েছিল। এমনকি মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কারণ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের প্রভাব এখনো সক্রিয়। সেইসাথে সংকুচিত শিলাস্তর প্রতিনিয়ত উপরের দিকে প্রসারিত হচ্ছে, যার ফলে এভারেস্টের উচ্চতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রতিবছরে প্রায় ৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয়ত, দুইটি হাঁসের মধ্যে পাশাপাশি সংঘর্ষ ঘটতে পারে। টেকটোনিক প্লেটের মধ্যেও পাশাপাশি সংঘর্ষ ঘটে। সেটা হতে পারে দুইটি প্লেট একই দিকে ভিন্ন গতিতে মুভ করার ফলে, আবার দুইটি প্লেট বিপরীত দিকে মুভ করার ফলে। তুরস্ক এবং সিরিয়াতে এই কারণেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ শূন্যে ভেসে থাকার বিজ্ঞান All kind of Levitation
তুরস্কের অবস্থান এনাটোলিয়া প্লেটে। এটি একটি ছোট সাইজের টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেট তার উপরে থাকা ইউরেশিয়া প্লেটের জন্য নিচের দিকে চাপ অনুভব করে। আবার আরবিয়া এবং আফ্রিকা প্লেটের কারণে উপরের দিকে চাপ অনুভব করে। এর ফলে এনাটোলিয়া প্লেট বাঁদিক বরাবর সরে যেতে চায়।
এখন দীর্ঘদিনের চাপের ফলে এই প্লেটগুলোর সংযোগস্থলে প্রচুর শক্তি জমা হয়েছিল। সেই শক্তি প্লেটগুলোর সাইট বরাবর সরে গিয়ে রিলিজ করে। যার ফলে তুরস্ক এবং সিরিয়াতে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
চতুর্থত, দুইটি হাঁসের মধ্যে একটি হাঁস যদি তুলনামূলক নিচের দিকে থাকে, তবে তা অন্য হাঁসের নিচে চলে যেতে পারে। টেকটোনিক প্লেটের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটে। দুইটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে প্রচণ্ড চাপের ফলে একটি প্লেট অন্যটির নিচে চলে যেতে পারে।
যার ফলে উপরের দিকে থাকা টেকটোনিক প্লেটের অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠে যায়। এমন ক্ষেত্রে যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তা খুবই শক্তিশালী হয় এবং এর ফলে সুনামিও সংঘটিত হতে পারে।
এই ধরনের ভূমিকম্প এবং সুনামি মূলত ওশেনিক এবং কন্টিনেন্টাল প্লেটের মধ্যে ঘটে থাকে। যেমন ২০১০ সালে সিঁড়ি উপকূলীয় অঞ্চলে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল, যা হিরোশিমাতে ফেলা বোমার চেয়েও সাইত্রিশ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। এর ফলে সিঁড়ির উপকূল অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২.৫ মিটার উপরে উঠে গিয়েছিল এবং ওই অঞ্চল প্রায় ৩ মিটার সরে গিয়েছিল।
ভূমিকম্প এবং সুনামি সৃষ্টিতে টেকটোনিক প্লেট (How tectonic plates cause earthquakes)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, টেকটোনিক প্লেটের গতি অতি সামান্য, বছরে মাত্র ১০ সেন্টিমিটারের মতো। এত সামান্য গতিতে টেকটোনিক প্লেট মুভ করার পরেও কিভাবে এত বিপুল শক্তি উৎপন্ন হয়?
প্রথমত, একটি টেকটোনিক প্লেটের আকার বিশাল। ফলে বড় আকারের বস্তু অল্প গতিতে চললেও এর ভরবেগ বিশাল হয়, যা বড় ধরনের ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারে। যেমন এই ক্রাস্টটি খুবই সামান্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এর বিশাল ভরের কারণে বড় ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, টেকটোনিক প্লেটে হুট করেই সংঘর্ষ ঘটে না, বরং সেখানে বহুদিন যাবৎ শক্তি জমা হতে থাকে। পরবর্তীতে সেই জমা হওয়া শক্তি একসাথে নির্গত হয়, ফলে বড় ধরনের ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়। বিষয়টি কেমন তা বোঝার জন্য আমার হাতের দিকে লক্ষ্য করুন। আমি এক হাত থেকে অন্য হাত মুক্ত করতে চাইছি, কিন্তু পারছি না। ফলে আমি ক্রমাগত শক্তি বাড়াচ্ছি।
এখন আমি যেই শক্তি ব্যয় করছি তা বিপরীত শক্তি আকারে জমা হচ্ছে। একটা সময় যখন আমার হাত মুক্ত হয়, তখন এখানে সঞ্চিত সকল শক্তি এক মুহূর্তে নির্গত হয়। ফলে আমার হাত দুটি অনেক দূরে চলে যায়। এখানে যদি শক্তি জমা না হতো, তাহলে কিন্তু আমার হাত এত দূরে যেত না। ঠিক একই ঘটনা ঘটে টেকটোনিক প্লেটের ক্ষেত্রে।
এভাবে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি জমা হলে প্লেটের স্থানচ্যুতি ঘটে। সেই সাথে সঞ্চিত সকল শক্তি নির্গত হয় এবং সেই শক্তি তরঙ্গ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলাফল হিসেবে ভূমি কেঁপে ওঠে, যাকে আমরা বলি ভূমিকম্প।
সমুদ্রে, যখন ওশেনিক প্লেট কন্টিনেন্টাল প্লেটের মধ্যে ঢুকে যায়, তখন সেখানে পানি এতটাই কম্পিত হয় যে এর ফলে বিশাল ঢেউ সৃষ্টি হয়। সেই ঢেউ উপকূলের সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যাকে আমরা বলি সুনামি। যার প্রভাব পৃথিবীর সকল উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায়।
বিশেষ আর্টিকেল: বন্যা কেন হয় এবং কোন বন্যা সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর All kinds of Flood
Earthquakes s and p waves explanation

ভূমিকম্পের পর প্রথমে প্রাইমারি ওয়েভ বা পি-ওয়েভ পৃষ্ঠে আসে। তবে এই ওয়েভের খুব একটা শক্তি থাকে না, ফলে এটি খুব একটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু পি-ওয়েভের পরবর্তী সেকেন্ডারি ওয়েভ বা এস-ওয়েভ খুবই শক্তিশালী এবং এই এস-ওয়েভের কারণেই মূলত ধ্বংস সংঘটিত হয়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, পি-ওয়েভ ডিটেক্ট করতে পারলেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। বিষয়টি একদিক থেকে সত্য, তবে পি এবং এস-ওয়েভের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান খুবই কম, মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
এখন পি-ওয়েভ ডিটেক্ট করতে পারলেও মানুষকে জানানোর আগেই এস-ওয়েভ চলে আসে। ফলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হয় না। তবে এইক্ষেত্রে জাপান কিছুটা ব্যতিক্রম। তারা তাদের দেশে প্রায় ১ হাজারটির মতো সিজম মিটার বসিয়ে রেখেছে।
এই সিজম মিটারগুলো কোনপ্রকার প্রাইমারি ওয়েভ ডিটেক্ট করার সাথে সাথে সম্পূর্ণ দেশের ট্রাফিকলাইট রেড হয়ে যায়। সেই সাথে স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন চলে যায় এবং সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে, যার ফলে প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন এবং চেষ্টা করছেন কিভাবে ভূমিকম্প এবং সুনামি পূর্বাভাস দেয়া যায়। কিন্তু কোনো পদ্ধতি কার্যকর হয় না।
What to do for earthquake

আসলে ভূমিকম্প এবং সুনামি কখন ঘটবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। যার ফলে ভূমিকম্পের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের নির্দেশনা হচ্ছে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের আশা না করে স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি করা, যেন ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি কমানো যায়।
এমন নির্দেশনা আমরা কতটা কার্যকর করতে পেরেছি, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এই জন্য ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় কী হতে পারে তা জানা থাকা উচিত। আপনি যদি ঘরের ভেতরে থাকেন, তবে শক্ত টেবিল বা খাটের নিচে চলে যাবেন। আশেপাশে এমন কিছু না থাকলে রুমের ভেতরে থাকা দেয়ালের কলামে, অর্থাৎ পিলারের পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে যাবেন।
যদি ছাদে যাবার ক্ষেত্রে সময় খুবই কম লাগে, সে ক্ষেত্রে ছাদে চলে যাবেন। আর যদি আপনি বাইরে থাকেন, তবে বৈদ্যুতিক খুঁটি বা বড় গাছপালা থেকে দূরে সরে যাবেন। গাড়িতে থাকলে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে বসে থাকবেন। ভূমিকম্পের পরে অবশ্যই দেওয়াসলাই বা অন্য কোনোভাবে আগুন জ্বালাবেন না। কারণ ভূমিকম্পের সময় যদি গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে দেয়াসলাইয়ের আগুনের ফলে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
সর্বোপরি, ভূমিকম্প এবং সুনামি Earthquake and Tsunami সময় শান্ত থাকুন এবং অবশ্যই বাড়িতে থাকা বাচ্চাদের এই বিষয়গুলো শিখিয়ে রাখবেন, যেন আপনারা কাছে না থাকলে তারা নিজে থেকে এই কাজগুলো করতে পারে।
Earthquake risk in Bangladesh

টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলগুলোই মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশ – পৃথিবীর মানচিত্রে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র কিন্তু তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল—ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরোসিয়ান প্লেট এবং বার্মা প্লেট। এই প্লেটগুলো যথেষ্ট একটিভ, অর্থাৎ এদের সংযোগস্থলে যথেষ্ট গতিশক্তি রয়েছে।
গত বহু বছর যাবত এই প্লেটগুলোতে বড় মাত্রার ভূমিকম্প এবং সুনামি Earthquake and Tsunami হতে দেখা যায়নি। ফলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই প্লেটগুলোতে প্রচুর শক্তি জমা হয়েছে। যে কোনো সময় বড় ভূমিকম্পের মাধ্যমে সেই শক্তি নিঃসৃত হতে পারে। যদি এমনটা হয়, অবশ্যই তা আমাদের জন্য শুভকর হবে না। কারণ আমাদের অবকাঠামো বড় মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় নয়।
পৃথিবীর কোনো এক জায়গায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প এবং সুনামি হলে কিংবা মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই হার্প নামে একটি সায়েন্স প্রজেক্টকে দোষারোপ করতে শোনা যায়। বলা হয়, হার্পের মাধ্যমে নাকি কৃত্রিমভাবে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটানো সম্ভব।
হার্প আসলেই কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তৈরি করতে সক্ষম কি না, এই বিষয়টি জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি পরিবারে যুক্ত হয়ে সাথে থাকতে পারেন। আশা করছি ভূমিকম্প এবং সুনামি Earthquake and Tsunami আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে।
Comments ৩