মঙ্গল যাত্রা (All missions on Mars): পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনো গ্রহের কথা বললেই সর্বপ্রথম যে নামটি সামনে আসবে, তা হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ বা মার্স। মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে এই মঙ্গল গ্রহের প্রতি মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। কারণ এটা প্রায় নিশ্চিত যে অতীতে মঙ্গল গ্রহে তরল পানির উপস্থিতি ছিল এবং সেই সময়টায় মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ প্রায় পৃথিবীর কাছাকাছি ছিল। যার ফলে মঙ্গল গ্রহ বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে। ফলাফলস্বরূপ, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি স্পেস মিশন পরিচালনা করা হয়েছে এই মঙ্গল গ্রহে।
তবে মঙ্গল গ্রহে পরিচালিত মিশনের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, মঙ্গলকে “স্পেস ক্লাবের কবরস্থান”ও বলা যেতে পারে। তবুও মঙ্গলে যাওয়ার আগ্রহে কোনো ভাটা পড়েনি। মঙ্গলে পরিচালিত মিশনগুলো এবং এই মিশনগুলো থেকে মঙ্গল সম্পর্কে আমরা কী জানতে পেরেছি, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
মানুষের মঙ্গল যাত্রা সূচনা
মানুষের মঙ্গলযাত্রার সূচনা হয় ১৯৬০ সাল থেকে। প্রতি দুই বছর অন্তর পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহ সবচেয়ে কাছাকাছি আসে। ফলে ওই সময়টি কোনো স্পেসক্র্যাফট মঙ্গলে পাঠানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমবারের মতো মঙ্গলকে উদ্দেশ্য করে “১এম নাম্বার ১” মিশন পরিচালনা করে।
এই মঙ্গল যাত্রা মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া অর্থাৎ এটি একটি ফ্লাইবাই মিশন ছিল। তবে এই মিশন লঞ্চ করার সময়ই ব্যর্থ হয়। এমনকি ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিচালিত পাঁচটি মিশনই ব্যর্থ হয়।
মঙ্গলের প্রথম সফল মিশন পরিচালনা করে নাসা। নাসার মেরিনার-৩ ব্যর্থ হলেও, ১৯৬৪ সালের ২৮ নভেম্বর লঞ্চ করা মেরিনার-৪ সফলভাবে মঙ্গলে পৌঁছায়। এটি ছিল মঙ্গলে পরিচালিত মানুষের প্রথম সফল মিশন। মেরিনার-৪ লঞ্চ করার প্রায় আট মাস পর, ১৯৬৫ সালের ১৫ জুলাই, মঙ্গলে পৌঁছায়। এটি ছিল একটি ফ্লাইবাই মিশন।

মেরিনার-৪ মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলের ২২টি ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। এটি মঙ্গলের সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা প্রথম ছবি ছিল।
মেরিনার-৪ মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক হালকা নির্দেশ করে। সেই সঙ্গে মঙ্গলে কোনো প্রকার চৌম্বক ক্ষেত্র নেই বলেও জানায়। নাসার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফলতা এলেও, সোভিয়েত ইউনিয়ন পরপর নয়টি ব্যর্থ মিশনের পর দশমবারে সফল হয়।
আরও পড়ুনঃ সূর্যের আলো আপনার ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি বৃদ্ধ
১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লঞ্চ করা মার্স-২ এবং মার্স-৩ সফলভাবে মঙ্গলে পৌঁছায়। এই দুইটি স্পেসক্র্যাফট দুইটি অংশে বিভক্ত ছিল—একটি অরবিটার এবং একটি ল্যান্ডার। অরবিটার মঙ্গলের চারপাশে ঘুরে ডেটা পাঠানোর কাজ করত এবং ল্যান্ডার মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করত। যদিও অরবিটার সফল হয়, ল্যান্ডার দুইটি ব্যর্থ হয়।
১৯৭৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মঙ্গলে আরও চারটি মঙ্গল যাত্রা মিশন পরিচালনা করে—মার্স-৪, ৫, ৬ এবং ৭। এর মধ্যে শুধুমাত্র মার্স-৫ সফল হয়। এটি মঙ্গলে পৌঁছানোর পর মাত্র ৯ দিন পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয় এবং এই সময়ে মঙ্গলের ১৮০টি ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। তবে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত ১৮টি মিশনের মধ্যে মাত্র দুটি সফল হয়। ফলস্বরূপ, সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী ১৫ বছর মঙ্গলে আর কোনো মিশন পরিচালনা করেনি।
অন্যদিকে, নাসা সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায় অনেক বেশি সফল ছিল। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে নাসা মেরিনার-৬, ৭, ৮ এবং ৯ লঞ্চ করে। এর মধ্যে মেরিনার-৮ ব্যর্থ হয়, তবে বাকি তিনটি মঙ্গল যাত্রা মিশন সফল হয়। এর মধ্যে মেরিনার-৯ উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি ছিল প্রথম স্পেসক্র্যাফট যা মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার পরিবর্তে মঙ্গলকে অরবিট করে। মেরিনার-৯ প্রায় ৭০০০ ছবি পৃথিবীতে পাঠায়, যার মাধ্যমে মঙ্গলের ভৌগোলিক গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
মঙ্গলের পরবর্তী দুটি উল্লেখযোগ্য মঙ্গল যাত্রা মিশন ছিল নাসার ভাইকিং-১ এবং ভাইকিং-২। ১৯৭৬ সালে এই মিশন দুটি মঙ্গলে সফলভাবে অবতরণ করে। ভাইকিং-১ ল্যান্ডার মঙ্গলের প্রথম পৃষ্ঠতলের ছবি পাঠায়। ভাইকিং মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজা। যদিও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে মিশন দুটি মঙ্গলে গবেষণার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
১৯৯৬ সালে নাসার পাঠানো “মার্স পাথফাইন্ডার” মিশনে প্রথমবারের মতো একটি রোভার (সোজার্নার) মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করে। এটি মঙ্গল গ্রহে নতুন ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ প্রশস্ত করে।
১৯৭৬ সালে বাইকিং ওয়ান ল্যান্ডার মঙ্গলের পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে প্রথম ছবি তোলে। এটি মানব ইতিহাসে মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে তোলা প্রথম ছবি। যদিও কোনো গ্রহের চারপাশে অরবিটার পরিচালনা করা তুলনামূলক সহজ, তবে ঐ গ্রহে ল্যান্ড করানো অত্যন্ত কঠিন কাজ।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং অরোরা Earth’s magnetic field and Aurora
মঙ্গলের ক্ষেত্রে এই কঠিন কাজটি প্রথম সফলভাবে সম্পন্ন করে বাইকিং ওয়ান ল্যান্ডার। বাইকিং ওয়ান ল্যান্ডার মঙ্গল যাত্রা ২৪৫ মঙ্গল দিন সক্রিয় ছিল। অন্যদিকে, বাইকিং ওয়ান অরবিটার ১৩৫০ বার মঙ্গলের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে এবং মঙ্গলের পৃষ্ঠের অনেক ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। অপরদিকে, বাইকিং টু অরবিটার ৭১২ বার মঙ্গলের চারপাশ প্রদক্ষিণ করে এবং প্রায় ১৬,০০০ ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। বাইকিং টু ল্যান্ডার মঙ্গলে ২৮১ দিন সক্রিয় ছিল।
নাসার বাইকিং মঙ্গল যাত্রা মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করা। মানুষের মধ্যে এই মিশন নিয়ে প্রচুর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
তবে, বাইকিং মঙ্গল যাত্রা মিশন মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি, যার ফলে মানুষের মধ্যে মঙ্গলের পরবর্তী মিশন সম্পর্কে আগ্রহ অনেক কমে যায়। এই ফলাফলের কারণে নাসা পরবর্তী ১৭ বছর কোনো মঙ্গল মিশন পরিচালনা করেনি।
অন্যদিকে, দীর্ঘ বিরতির পর, ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মঙ্গলের চাঁদ ফোবোসকে লক্ষ্য করে দুটি মঙ্গল যাত্রা মিশন পরিচালনা করে: ফোবোস ওয়ান এবং ফোবোস টু। এর মধ্যে ফোবোস ওয়ান ব্যর্থ হয় এবং ফোবোস টু আংশিক সফলতা লাভ করে। ১৯৯২ সালে নাসা মঙ্গল অবজার্ভার লঞ্চ করে, তবে এটি ব্যর্থ হয়।
এরপর ১৯৯৬ সালে নাসা মঙ্গল গ্লোবাল সার্ভেয়ার মিশন পরিচালনা করে, যা সফল হয় এবং ১০ বছর ধরে সক্রিয় ছিল। একই বছরে রাশিয়ার রসকসমস মঙ্গল নাইটি সিক্স মিশন পরিচালনা করে, যা ব্যর্থ হয়।
১৯৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর নাসা মঙ্গল পাথফাইন্ডার মিশন লঞ্চ করে। এটি লঞ্চের সাত মাস পর মঙ্গলে সফলভাবে ল্যান্ড করে। পাথফাইন্ডার মিশনে একটি চাকা বিশিষ্ট রোভার ছিল, যার নাম ছিল সোজার্নার রোভার। পাথফাইন্ডারকে এয়ারব্যাগের মাধ্যমে মঙ্গলের পৃষ্ঠে নামানো হয়েছিল।
ল্যান্ডিং প্রক্রিয়ার সময় স্পেসক্রাফট মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার থেকে কমে আসে। প্যারাশুট খোলার পর গতির আরও হ্রাস ঘটে। তারপর রেট্রো রকেট গতি বিপরীতে ফায়ার করে এবং ফাইনালি এয়ারব্যাগের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে এটি মঙ্গলের পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে।
এরপর বাউন্স করতে করতে এটি প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় পাথফাইন্ডার সফলভাবে মঙ্গলে ল্যান্ড করে।
বিশেষ নিবন্ধ: জভিয়ান সিস্টেম Jovian system and JUNO, JUICE mission
পাথফাইন্ডার মিশনের ল্যান্ডিং প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিক্স মিনিটস অফ টেরর, যা মঙ্গলে ল্যান্ড করার সময়ের ৬ মিনিটকে বোঝায়। এই সময়ের মধ্যে সফটওয়্যার অনুযায়ী সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালিত হলে ল্যান্ডিং সফল হয়। ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই পাথফাইন্ডার সফলভাবে মঙ্গলে ল্যান্ড করে।
এটি মঙ্গলের প্রায় ১৬,০০০ ছবি এবং ৮০ লক্ষ পরিমাপ পৃথিবীতে পাঠায়। সোজার্নার রোভার ৮৪ দিন মঙ্গলের পৃষ্ঠে বিচরণ করে এবং ভবিষ্যতের রোভার মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।
১৯৯৮ সালে জাপান তাদের প্রথম মঙ্গল যাত্রা মিশন পরিচালনা করে, তবে সেটি ব্যর্থ হয়। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালের মধ্যে নাসা দুটি মিশন পরিচালনা করলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়। ২০০১ সালে নাসা মঙ্গল অডিসি অরবিটার মিশন পরিচালনা করে, যা অত্যন্ত সফল হয়।
এটি দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় রয়েছে এবং ২০২৪ সালেও সক্রিয় ছিল। অডিসি অরবিটার মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে পানি এবং বায়ুমণ্ডলের রেডিয়েশন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
২০০৩ সালে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি তাদের প্রথম মঙ্গল যাত্রা মিশন পরিচালনা করে, যাতে ছিল মঙ্গল এক্সপ্রেস অরবিটার এবং বিগল টু ল্যান্ডার। মঙ্গল এক্সপ্রেস সফল হলেও বিগল টু ল্যান্ডিংয়ের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
একই বছরে নাসা স্পিরিট এবং অপর্চুনিটি নামক দুটি রোভার মিশন পরিচালনা করে। এগুলো মাত্র তিন মাসের জন্য ডিজাইন করা হলেও স্পিরিট ৬ বছর এবং অপর্চুনিটি ১৫ বছর সক্রিয় ছিল। এই মিশনগুলো থেকে মঙ্গলের ২ লক্ষাধিক ছবি এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যায়।
২০০৫ সালে নাসা মঙ্গল রিকনেসন্স অরবিটার মিশন পরিচালনা করে, যা সফল হয়। ২০০৭ সালে নাসা ফিনিক্স ল্যান্ডার মিশন পরিচালনা করে, যা মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে সফলভাবে ল্যান্ড করে।
ফিনিক্স মঙ্গল যাত্রা মিশন লঞ্চ করার পরবর্তী চার বছর কোনো মঙ্গল মিশন পরিচালিত না হলেও, ২০১১ সালে তিনটি মঙ্গল মিশন পরিচালিত হয়। ২০১১ সালের ৮ই নভেম্বর, রাশিয়া লঞ্চ করে ফোবোস-গ্রান্ট অরবিটার। একই দিনে, চীন তাদের প্রথম মঙ্গল মিশন পরিচালনা করে, যার নাম ছিল ইয়িংহু-১ অরবিটার। এই দুইটি মিশনই ব্যর্থ হয়।
২০১১ সালের তৃতীয় মিশন ছিল নাসার কিউরিসিটি রোভার, যা ছিল অতীতের যেকোনো মিশনের তুলনায় অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সমৃদ্ধ। এই রোভারে পাথর ড্রিল করার ক্ষমতা ছিল এবং এতে ছিল সতেরোটি বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা।
কিউরিসিটি রোভার সফলভাবে মঙ্গলে ল্যান্ড করে। এই রোভারের ল্যান্ডিং পদ্ধতি ছিল পূর্বের পদ্ধতিগুলোর থেকে ভিন্ন। এটি একটি স্কাই ক্রেন ম্যানিব্যাগের মাধ্যমে ল্যান্ড করানো হয়, যা রোভারকে কেবলের সাহায্যে মঙ্গলের পৃষ্ঠে নামায়। সফল ল্যান্ডিং নিশ্চিত করতে, এখানে যথেষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং করতে হয়েছিল।
কিউরিসিটি রোভারকে গেইল ক্রেটারে ল্যান্ড করানো হয়। এটি মঙ্গলে অক্সিজেন, সালফার, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে রেডিয়েশনের মাত্রাও পরিমাপ করে। কিউরিসিটি রোভার লক্ষ্য করে যে, যেখানে এটি ল্যান্ড করেছিল, সেই গর্তের আশপাশের পাথরের প্রান্তগুলো শার্প হওয়ার পরিবর্তে মসৃণ এবং গোলাকার।
এর থেকে বোঝা যায়, ওই গর্তে একসময় পানি ছিল এবং সেই পানি অন্য স্থান থেকে প্রবাহিত হয়েছিল। কারণ, যেকোনো শার্প পাথরের ওপর দিয়ে দীর্ঘদিন পানি প্রবাহিত হলে, পাথরের শার্পনেস কমে গিয়ে এটি মসৃণ ও গোলাকার হয়। এই পর্যবেক্ষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মঙ্গলে একসময় পানির প্রভাব ছিল। এই ভিডিওটি আপলোড করার দিন পর্যন্ত কিউরিসিটি রোভার সক্রিয় রয়েছে।
কিউরিসিটি লঞ্চের দুই বছর পর, অর্থাৎ ২০১৩ সালে, ভারত তাদের প্রথম মঙ্গল যাত্রা মিশন পরিচালনা করে, যার নাম ছিল মঙ্গলায়ন অরবিটার মিশন। এটি একটি অরবিটার মিশন ছিল এবং এটি সফলতা অর্জন করে। ২০২২ সালের এপ্রিলে এই মিশন সমাপ্ত হয়, কারণ অরবিটারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ওই একই বছর, নাসা লঞ্চ করে মাভেন অরবিটার। এর উদ্দেশ্য ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে মঙ্গলের পানি বিলীন হলো তা জানা। এই অরবিটার এখনো সক্রিয় রয়েছে।
পরবর্তী মঙ্গল মিশন পরিচালিত হয় ২০১৬ সালে, যা রসকসমস এবং ইসার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক্সোমার্স অরবিটার মিশন। এই মিশনের অধীনে একটি অরবিটার এবং ইডিএম ল্যান্ডার ছিল। অরবিটার সফলভাবে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে, তবে ইডিএম ল্যান্ডার মঙ্গলে নামার আগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অর্থাৎ এটি ব্যর্থ হয়।
এর দুই বছর পর, ২০১৮ সালে, নাসা লঞ্চ করে ইনসাইট ল্যান্ডার। এটি সফলভাবে মঙ্গলে ল্যান্ড করে। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে অধ্যয়ন করা, এবং এই ক্ষেত্রে ইনসাইট যথেষ্ট সফল হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইনসাইটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অর্থাৎ মিশনের সমাপ্তি ঘটে।
ইনসাইট লঞ্চের দুই বছর পর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের প্রথম মঙ্গল মিশন পরিচালনা করে, যার নাম ছিল হোপ। এটি একটি অরবিটার মিশন ছিল এবং সফলভাবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায়। এটি এখনো সক্রিয় রয়েছে।
ওই একই বছর, চীন তাদের দ্বিতীয় মঙ্গল যাত্রা মিশন, তিয়ানওয়েন-১ পরিচালনা করে, যা সফল হয়। এই মিশনের অধীনে একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার, এবং একটি রোভার ছিল। ২০২১ সালের ১৪ই মে রোভারসহ ল্যান্ডার সফলভাবে মঙ্গলে ল্যান্ড করে। এটি ল্যান্ডার থেকে রেকর্ড করা রোভারের ভিডিও ফুটেজ।
চীনের মিশনের মাত্র সাত দিন পর, ২০২০ সালের ৩০ জুলাই, নাসা লঞ্চ করে পারসিভিয়ারেন্স রোভার। এর সঙ্গে একটি হেলিকপ্টারও ছিল। এটি ছিল মানুষের তৈরি প্রথম যন্ত্র যা অন্য গ্রহে উড়েছিল।
মঙ্গলের মতো হালকা বায়ুমণ্ডলে কিছু উড়ানো সহজ ছিল না, তবে এটি সম্ভব হয়েছে। পারসিভিয়ারেন্স ছিল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি রোভার। এতে মঙ্গলের পাথর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য বিশেষ কিছু টিউব ছিল, যা পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি করা হয়েছিল। এই টিউবে রাখা নমুনা ২০৩০ সালে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
পারসিভিয়ারেন্স এবং হেলিকপ্টার নিয়ে একটি আলাদা ভিডিও আসবে। এই হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে পরিচালিত মিশনগুলোর সারসংক্ষেপ, যার মাধ্যমে মানুষ মঙ্গলের অনেক অজানা বিষয় জেনেছে। মঙ্গল গ্রহ নিয়ে একটি চমৎকার চলচ্চিত্র হচ্ছে দ্য মারশিয়ান, যা মূলত একটি ফিকশন ফিল্ম।
মুভিটিতে দেখানো হয়েছে, একজন নভোচারী কীভাবে মঙ্গলে আটকা পড়ার পর বেঁচে ছিলেন এবং কীভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। মুভিটি দেখতে পারেন। আশা করছি ভালো লাগবে।
Comments ৩