শব্দ সমাচার: আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে কমন বিষয় সম্ভবত শব্দ বা সাউন্ড। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের শব্দ আমাদের চারপাশে তৈরি হচ্ছে। শব্দের মাধ্যমে আমরা মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করে থাকি।
যেমন, এই ভিডিওটি যদি শব্দই হতো, তবে ভিডিওটি অর্থহীন হয়ে যেত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শব্দ দেখতে কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে চোখের সামনে এমন ওয়েভের চিত্র ভেসে আসবে। যেমন, এখন যে কথাগুলো বলছি, তা এমন ওয়েভাকারের রেকর্ডারে রেকর্ড হচ্ছে। তার মানে শব্দ দেখতে ওয়েভের মতো। কিন্তু সেটা কিভাবে?
সব ধরনের শব্দ কি মানুষ শুনতে পায়? শব্দের বেগ কি সব মাধ্যমে একই? কিভাবে শব্দের মাধ্যমে কোনো বস্তু শূন্যে ভেসে থাকে? যোগাযোগ ছাড়াও শব্দের কি অন্য কোনো ব্যবহার রয়েছে? শব্দ-সংক্রান্ত এমন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের এই ভিডিও। আমি জুম্মান আছি আপনাদের সাথে। আপনারা দেখছেন বিজ্ঞান পাইসি।
শব্দ কী, তা বুঝতে হলে শব্দ কিভাবে উৎপন্ন হয় এবং শব্দ কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চারিত হয়, এই দুইটি বিষয় বুঝতে হবে।
কোনো বস্তু যখন কাঁপে বা কম্পিত হয়, তখন ওই বস্তুর চারপাশে থাকা অণুগুলোর মধ্যে সংকোচন এবং প্রসারণ ঘটে। অর্থাৎ, অণুগুলোর মধ্যে চাপের পার্থক্য তৈরি হয় এবং একেই বলে শব্দ।
শব্দ উৎসের কম্পনের ফলে আশেপাশের অণুগুলোর সংকোচন এবং প্রসারণ তাদের পাশে থাকা অণুগুলোর মধ্যে সঞ্চারিত হয়। এভাবে শব্দ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যায় একটি স্লিঙ্কিকে সামনে-পেছনে কম্পিত করলে।
স্লিঙ্কিকে সামনে-পেছনে কম্পিত করলে স্লিঙ্কিতে যেমন সংকোচন-প্রসারণ স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে শেষ পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়, ঠিক একইভাবে শব্দ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চারিত হয়।
এখানে খেয়াল করুন, শব্দ উৎসের আশেপাশের অণুগুলো যত কাছাকাছি থাকবে, তত দ্রুত প্রাথমিক সংকোচন-প্রসারণ তার পাশের অণুগুলোতে সঞ্চারিত হতে পারবে। যার ফলে কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি, তারপর তরল মাধ্যম, তারপর বায়বীয় মাধ্যম।
বিষয়টি আরেকটু সহজে বুঝতে তিন ধরনের ডমিনো সেটআপ চিন্তা করুন।
একটিতে ডমিনোগুলো খুবই কাছাকাছি, যা কঠিন মাধ্যম নির্দেশ করছে। দ্বিতীয়টিতে কিছুটা দূরে দূরে, যা তরল মাধ্যম নির্দেশ করছে। এবং তৃতীয়টিতে ডমিনোগুলো বেশি দূরে দূরে রয়েছে, যা বায়বীয় মাধ্যম নির্দেশ করছে।
এখন এই তিনটি সেটআপের ডমিনোগুলো একসাথে স্টার্ট করলে, কঠিন মাধ্যমের ক্ষেত্রে ডমিনোগুলো সবচেয়ে দ্রুত পড়ে যাবে। তারপরে তরল মাধ্যম, তারপর বায়বীয় মাধ্যম।
এখানে কঠিন মাধ্যমে ডমিনোগুলো আগে পড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, ডমিনোগুলো খুবই কাছাকাছি ছিল। ঠিক এই একই কারণে কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি থাকে।
২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসে শব্দের বেগ সেকেন্ডে ৩৪৩ মিটার, পানিতে শব্দের বেগ সেকেন্ডে ১৪৮১ মিটার, এবং লোহার শব্দের বেগ সেকেন্ডে ৫১২০ মিটার। সেকেন্ড নির্ণয় ইতিহাস জেনে নিন।
এখানে তাপমাত্রা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে শব্দের বেগ তাপমাত্রার উপরেও নির্ভর করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে শব্দের বেগও বাড়তে থাকে। যেমন, ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসে শব্দের বেগ সেকেন্ডে ৩৪৩ মিটার হলেও, ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বেগ দাঁড়ায় সেকেন্ডে ৩৬০ মিটার। জানুন মিটার কিভাবে এলো।
কারণ তাপমাত্রা বেশি থাকার মানে হচ্ছে অণুগুলোর মধ্যে বেশি এনার্জি থাকবে। অর্থাৎ, অণুগুলো দ্রুত কম্পিত হবে। এখন এখানে এক্সাইটেশন এবং ভাইব্রেশন আসলে তা অতি সহজে পাস হতে পারবে। যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে শব্দের বেগও বৃদ্ধি পায়।
এখন সাউন্ড ওয়েভ বা প্রেসার ওয়েভকে কেন এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় তা বলা যাক। কোনো বস্তু কম্পিত হলে, বস্তুর পাশের অণুগুলোর সংকোচন-প্রসারণ চারদিকে গোলাকার আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
এখানে অণুগুলো কিন্তু তাদের স্থান থেকে স্থায়ীভাবে সরে যায় না। বরং অণুগুলো তাদের অবস্থানে থেকে শুধুমাত্র আগে-পেছনে দুলতে থাকে। তার মানে, শব্দ যেদিকে যায়, অণুগুলো সেই দিকেই আগে-পেছনে কম্পিত হয়।
অর্থাৎ, তরঙ্গের দিকের সাথে অণুগুলো সমানতরভাবে কম্পিত হয়। এই ধরনের তরঙ্গকে বলা হয় অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বা লংগিটিউডিনাল ওয়েভ।
যে তরঙ্গ আমরা দেখে থাকি বা শব্দকে যে তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়, তাকে বলা হয় অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বা ট্রান্সভার্স ওয়েভ।
এই অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ক্ষেত্রে, তরঙ্গের দিকের সাথে অণুগুলো ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কম্পিত হয়। অর্থাৎ, তরঙ্গের দিকের সাপেক্ষে অণুগুলো ওপর-নিচ বরাবর কম্পিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে পানির ঢেউ।
এখন এখানে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়, শব্দ হচ্ছে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। তাহলে কেন শব্দকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়?
আসলে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গকে চাইলেই অতি সহজে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। যেমন একটি সেটআপ লক্ষ্য করুন। এখানে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গকে কিভাবে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায় তা দেখানো হয়েছে।
এখানে একই তরঙ্গকে এই অংশে অনুপ্রস্থ এবং ওই অংশে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন শব্দ তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ হলেও একে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করার কারণ হচ্ছে, যে কোনো তরঙ্গকে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে অনুপ্রস্থ ফরমেটে জটিলতা কম।
এবং অনুপ্রস্থ ফরমেটে তরঙ্গকে তুলনামূলক সহজে স্টাডি করা যায়। অর্থাৎ, গাণিতিক গণনাগুলোকে সহজে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো যায়। যার ফলে শব্দ তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ হলেও একে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
এখন সাউন্ড ওয়েভ কীভাবে দেখা যেতে পারে সে সম্পর্কে বলা যাক।
সরাসরি সাউন্ড দেখা না গেলেও বিভিন্ন মেকানিজমের মাধ্যমে সাউন্ড দেখা সম্ভব। সাউন্ড দেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি হচ্ছে রুবেন্স টিউব, যা জার্মান পদার্থবিদ হাইনরিখ রুবেন্স ১৯০৫ সালে উদ্ভাবন করেছিলেন।
প্রথমে একটি ফাঁকা টিউব নিয়ে একপাশ দিয়ে দাহ্য গ্যাস প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করে মুখটি সিল করে দেওয়া হয়। অপর পাশটি রাবারের শীট দিয়ে সিল করা হয় এবং টিউবের উপরে সমান দূরত্বে অনেকগুলো ছোট ছোট ছিদ্র করা হয়।
এখন টিউবের ছিদ্রগুলো দিয়ে যেহেতু দাহ্য গ্যাস বের হয়, ফলে সেখানে আগুন দিলে সমান উচ্চতার আগুনের শিখা দেখা যায়।
এখন যেপাশে রাবারের শীট রয়েছে, সেখানে যদি একটি সাউন্ড স্পিকার সেট করা হয়, তবে স্পিকার থেকে আসা সাউন্ড ওয়েভ অনুযায়ী আগুনের শিখা ওঠা-নামা করবে। অর্থাৎ, সাউন্ড ওয়েভের যে অংশে সংকোচন থাকবে, সেখানে উচ্চ চাপ বিরাজ করবে। ফলে ওই উচ্চ চাপ অংশের উপরে থাকা ছিদ্রের আগুনের শিখা বড় হবে।
এবং যে অংশে প্রসারণ থাকবে, সে অংশের আগুনের শিখা ছোট হবে। এভাবে আমরা সাউন্ড ওয়েভকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ফরমেটে দেখতে পাব।
আবার, যদি আমরা টিউবের মধ্যে স্ট্যান্ডিং ওয়েভ বা স্থির তরঙ্গ তৈরি করতে পারি, তবে আগুনের শিখার মধ্যে স্থির অবস্থা দেখতে পাব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্ট্যান্ডিং ওয়েভ কী?
একই বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ দুটি ওয়েভ যদি বিপরীত দিক থেকে আসে, তবে এই দুটি ওয়েভ মিলে একটি স্ট্যান্ডিং ওয়েভ বা স্থির তরঙ্গ তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে, তরঙ্গের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট চাপ বিরাজ করে।
সাধারণ ওয়েভের ক্ষেত্রে যেমন চাপের ওঠা-নামা থাকে, স্ট্যান্ডিং ওয়েভের ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন দেখা যায় না।
এই স্ট্যান্ডিং ওয়েভের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তুকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা যায়, যাকে বলা হয় অ্যাকুস্টিক লেভিটেশন। এই বিষয়টি সম্পর্কে পরবর্তী ভিডিওতে বিস্তারিত বলা হবে।
যাই হোক, রুবেন্স টিউবের মাধ্যমে একমাত্রিক তরঙ্গ দেখা যায়।
এখন এখানে যদি আমরা একটি মাত্র চিত্রের পরিবর্তে কয়েকটি চিত্র তৈরি করি, তবে সাউন্ড ওয়েভের দ্বিমাত্রিক চিত্র দেখা যাবে। এছাড়া একটি বোর্ডের মধ্যে বালু রেখে, সেই বোর্ডে সাউন্ড ওয়েভ প্রয়োগ করলে, সাউন্ড ওয়েভ অনুযায়ী বালুর বিন্যাস পরিবর্তিত হয়।
এর মাধ্যমেও সাউন্ড ওয়েভের দ্বিমাত্রিক চিত্র দেখা যায়। আবার, বালুর পরিবর্তে পানি ব্যবহার করেও এমন দৃশ্য তৈরি করা যায়।
এসকল পদ্ধতিতে অবশ্য ইনডিরেক্টলি সাউন্ড ওয়েভকে দেখা হয়। তবে আপনি চাইলে সরাসরি সাউন্ড ওয়েভের সঞ্চালন দেখতে পারবেন, যাকে বলে শ্লিরেন ইমেজিং সিস্টেম।
এই ইমেজিং সিস্টেম খুবই সহজ। এমনকি আপনি বাসায়ও এটি তৈরি করতে পারবেন।
এই পদ্ধতিতে আসলে বাতাস দেখা যায়। প্রথমে একটি লাইট সোর্স থেকে আসা আলোকে প্যারাবলিক মিররের মাধ্যমে সমান্তরল করতে হবে।
পরবর্তীতে এই সমান্তরল আলোকরশ্মিকে আরেকটি প্যারাবলিক মিররের মাধ্যমে একটি ফোকাস পয়েন্টে নিয়ে আসতে হবে। এরপর ফোকাস পয়েন্টের কিছুটা সামনে ক্যামেরা বসাতে হবে।
সেইসাথে ফোকাস পয়েন্টের খুবই কাছে একটি ব্যারিয়ার বা আলো ব্লক করে দেয় এমন কিছু বসাতে হবে। তাহলেই আপনি ক্যামেরায় বাতাসের মুভমেন্ট দেখতে পাবেন।
এখানে মূলত তাপের কারণে বেঁকে যাওয়া আলো ফোকাস পয়েন্টে না গিয়ে ব্যারিয়ারে বাধা পেয়ে আটকে যায়। যার ফলে সেই অংশ কালো দেখায়।
এভাবে ক্যামেরায় সাদা-কালো ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে বাতাসের মুভমেন্ট দেখা যায়।
এখানে যেভাবে বললাম, এই পদ্ধতি ছাড়াও আপনি একটি প্যারাবলিক মিররের মাধ্যমে সেটআপ তৈরি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সেটআপ হবে এমন—লাইট সোর্স এবং ক্যামেরা পাশাপাশি থাকবে।
এখানে হাততালির ফলে বাতাসে যে সংকোচন এবং প্রসারণ ঘটে, তা দেখা যাচ্ছে। এখানে একটি উৎস থেকে সার্বক্ষণিক সাউন্ড তৈরি হচ্ছে, যার ফলে বাতাসের সার্বক্ষণিক সংকোচন এবং প্রসারণ তৈরি হয়েছে এবং সেটি স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে।
আমরা কিন্তু সব ধরনের শব্দ শুনতে পাই না। মানুষ ২০ থেকে ২০,০০০ হার্টজ এই শব্দ শুনতে পায়। এর বাইরেও শব্দ শুনতে পায় না।
এখন ২০ থেকে ২০,০০০ হার্টজ এই বিষয়টি সম্পর্কে বলা যাক। একটি শব্দ উৎস শব্দ তৈরি করার জন্য সেকেন্ডে কতবার কম্পিত হচ্ছে, একেই বলে হার্টজ। অর্থাৎ, কোনো একটি বস্তু যদি সেকেন্ডে ৫১২ বার কম্পিত হয়ে একটি শব্দ তৈরি করে, তবে ঐ শব্দকে বলা হবে ৫১২ হার্টজের শব্দ।
এখন কোনো একটি বস্তুর সেকেন্ডে ২০ বারের চেয়ে কম কম্পনের মাধ্যমে যে শব্দ তৈরি হয়, তা আমরা শুনতে পাই না। আবার, সেকেন্ডে ২০,০০০ বারের চেয়ে বেশি কম্পনের ফলে যে শব্দ তৈরি হয়, সেটাও আমরা শুনতে পাই না। তবে বিভিন্ন পশুপাখি এই শব্দ শুনতে পায়।
যেমন, ২০ হার্টজের চেয়ে কম হওয়া যে শব্দ, তাকে বলে ইনফ্রাসাউন্ড। হাতি, পেঙ্গুইন, অক্টোপাস এই প্রাণীগুলোসহ আরো কিছু প্রাণী এই ইনফ্রাসাউন্ড শুনতে পায়।
অন্যদিকে, ২০,০০০ হার্টজের চেয়ে বেশি হার্টজের শব্দকে বলে অতীর্ক শব্দ বা আলট্রাসাউন্ড। কুকুর, বাদুড়, ডলফিনসহ বেশ কিছু প্রাণী এই শব্দ শুনতে পায়।
আলট্রাসাউন্ডের সাথে মেডিকেলের আরেকটি বিষয়ে জড়িত, যাকে বলে আলট্রাসোনোগ্রাম। এই পদ্ধতিতে ট্রান্সডিউসারের মাধ্যমে আলট্রাসাউন্ড শরীরে প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে সেই সাউন্ড পেটে থাকা শিশুর শরীরে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে এবং এই প্রতিফলিত সাউন্ড রিসিভ করে কম্পিউটার প্রসেসের মাধ্যমে শিশুর ছবি দেখা যায়।
আলট্রাসোনোগ্রামকে বলতে পারেন শব্দের মাধ্যমে ছবি তৈরি করা। আলট্রাসোনোগ্রাম ছাড়াও মেডিকেলে বিভিন্নভাবে শব্দের ব্যবহার রয়েছে। তবে সবচেয়ে পরিচিত ব্যবহার হচ্ছে স্টেথোস্কোপ, যার মাধ্যমে হার্টবিট পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এবার পৃথিবীর সবচেয়ে নীরব স্থান সম্পর্কে বলে ভিডিও শেষ করা যাক।
আমরা প্রতিদিন যে শব্দ শুনি, তা অনেকগুলো শব্দের সংমিশ্রণ। আমরা চাইলেই কোনো একটি শব্দকে আলাদা করে শুনতে পারি না। ওই শব্দের মধ্যে অনেক ধরনের শব্দ চলে আসে। তার ওপর আবার সকল শব্দ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে ইকো তৈরি করে।
সুতরাং, আমরা যদি কোনো একটি স্পেসিফিক শব্দ আলাদা করে শুনতে চাই, তা বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়। তবে কৃত্রিমভাবে কোনো একটি স্থানকে আমরা এমনভাবে তৈরি করতে পারি, যেখানে অন্য কোনো শব্দ আসবে না। শুধুমাত্র যেই শব্দ করা হবে, সেটি শোনা যাবে।
সেক্ষেত্রে, আপনি নিজে যদি কোনো শব্দ তৈরি না করেন, তাহলে সেই স্থানটি একদম শান্ত থাকবে বা নিস্তব্ধ থাকবে।
আমরা যদি কোনো একটি স্থানকে একদম নিস্তব্ধ করতে চাই, তবে ওই স্থান বা রুমকে বাইরের সকল কিছু থেকে আইসোলেটেড করতে হবে। সেই সাথে রুমের মধ্যে তৈরি করা শব্দ যেন রুমের দেয়ালে প্রতিফলিত না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এমনভাবে সম্পূর্ণ রুমকে বলা হয় অ্যানেকোয়িক রুম। বর্তমানে পৃথিবীর বেশ কিছু স্থানে এমন অ্যানেকোয়িক রুম তৈরি করা হয়েছে। ওইসব রুমে গেলে আপনি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।
আমরা সাধারণভাবে যত শব্দ শুনি, তাতে রিভার্ব বা ইকো থাকে। সেই সাথে অন্যান্য শব্দ থাকে। কিন্তু অ্যানেকোয়িক রুমে তৈরি করা শব্দের মধ্যে কোনো রিভার্ব বা ইকো তৈরি হয় না। ফলে সেখানে তৈরি করা শব্দ স্বাভাবিক অভিজ্ঞতার চেয়ে কম সময়ে শেষ হয়ে যায় বলে মনে হয়।
অ্যানেকোয়িক রুমের মধ্যে যেহেতু ইকো তৈরি হয় না, ফলে ওই রুমে লাইট অফ করে অবস্থান করলে রুমের আয়তন সম্পর্কিত কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, রুমের আয়তন কেমন তা অনুমান করা যায় না।
তাছাড়া এই রুমে আপনি আপনার নিজের হার্টবিটের শব্দ, রক্ত প্রবাহের শব্দ এবং পাকস্থলীতে তৈরি হওয়া শব্দ অনুভব করতে পারবেন। অনেকে অবশ্য এমন রুমে অবস্থান করার ক্ষেত্রে অস্বস্তি বোধ করেন।
তবে অ্যানেকোয়িক রুমের মধ্যেও কিন্তু লো ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ প্রতিফলিত হয়। এমন ক্ষেত্রে মাইক্রোফোন এবং স্পিকারের মাধ্যমে লো ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভের প্রতিফলন রোধ করার ব্যবস্থা করতে হয়।
প্রথমে মাইক্রোফোন লো ফ্রিকোয়েন্সির ওয়েভ ডিটেক্ট করে। পরবর্তীতে দেয়ালে থাকা স্পিকার একই ফ্রিকোয়েন্সির ওয়েভ তৈরি করে, যা দেয়ালে প্রতিফলিত লো ফ্রিকোয়েন্সির ওয়েভকে বাতিল করে দেয়।
এর মাধ্যমে লো ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভের প্রতিফলনও আটকে দেওয়া যায়। এই সকল নিস্তব্ধ রুম সাউন্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।