সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কৌশল: পৃথিবীতে সৌরবিদ্যুৎ ছাড়া বাকি সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কৌশলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, সেই কৌশল আজকে ছোট পরিসরে দেখানোর চেষ্টা করব এবং এর সাথে এর মেকানিজম সম্পর্কে বলব।
এজন্য প্রয়োজন হবে একটি কলম, একটি মোটর এবং একটি এলইডি বাল্ব। কিভাবে এই তিনটি জিনিস সেটআপ করতে হবে, তা দেখে নিন। আমাদের সম্পূর্ণ যন্ত্র তৈরি। এখন কলমটি হাত দিয়ে ঘোরালে দেখা যাবে, বাল্বটি জ্বলে উঠছে।
তাহলে যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, মোটরটি যখনই ঘোরানো হচ্ছে, তখনই বাল্বটি জ্বলে উঠছে। তার মানে, মোটরটিকে যতক্ষণ ঘোরানো হবে, এলইডি বাল্বটি ততক্ষণ জ্বলে থাকবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে মূলত এই প্রক্রিয়াতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এবং মোটরকে ঘোরানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়।
যেমন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরমাণুর ভাঙন থেকে উৎপন্ন তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোটর ঘোরানো হয়। অন্যান্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রেও ঠিক একই কাজ করা হয়—তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোটর ঘোরানো হয়। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে পানির প্রেসার কাজে লাগিয়ে মোটর ঘোরানো হয়।
তাছাড়া, বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়েও মোটর ঘোরানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্রের ঢেউ এবং ভূ-তাপ শক্তি (জিওথার্মাল) কাজে লাগিয়েও মোটর ঘোরানো হয়।
আসলে, যেকোনো ক্ষেত্রে মোটর ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কিন্তু মোটর ঘুরলেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কেন?
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, বিদ্যুৎ এবং চুম্বক ভিন্ন কিছু নয়। তাই এদেরকে একসাথে তরিচুম্বক বল বা ইলেকট্রোম্যাগনেট বলা হয়। তার মানে, বিদ্যুতের মাধ্যমে যেকোনো বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব।
বিদ্যুৎকে যেহেতু চুম্বকের উপান্তর করা যায়, তাহলে চুম্বক থেকেও বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এই ধারণা মাথায় নিয়ে মাইকেল ফ্যারাডে চুম্বক থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
১৮৩১ সালে তিনি সফলতা পান। তিনি দেখতে পান, একটি চুম্বকের আশেপাশে যদি একটি তারের কুণ্ডলী নাড়াচাড়া করা হয়, তবে তারের কুণ্ডুলির দুই প্রান্তে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়।
মোটরে ঠিক এই প্রক্রিয়াতেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। একটি মোটর খুললে দেখা যাবে, মোটরের ভেতরের দুই পাশে দুটি বাঁকা চুম্বক রয়েছে। এবং এর মাঝখানে রয়েছে তারের কুণ্ডলী, যাকে অনেকে কয়েল বলে জানেন।
যাই হোক, আমি যখন হাত দিয়ে মোটরটি ঘুরিয়েছিলাম, তখন এই দুটি বাঁকা চুম্বকের মাঝখানে তারের কুণ্ডলিটি ঘুরতে শুরু করে। ফলে দুটি চুম্বক দিয়ে সৃষ্টি চুম্বক ক্ষেত্রের মাঝখানে তারের কুণ্ডলিটি ঘুরতে শুরু করে, যার কারণে তারের কুণ্ডুলির দুই প্রান্তে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
তারের কুণ্ডুলিতে উৎপন্ন বিদ্যুৎ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মোটর কীভাবে কাজ করে, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। সেই সাথে, ভিডিও ভালো লাগলে বিজ্ঞান পাইসি চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।