সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত: পিন্ডির গোলামের জেঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির তাসত্ত্ব করবার জন্য নয়। ভারতীয় আধিপত্যের প্রশ্নে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সেই বিখ্যাত উক্তি।
জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যখন আবারো হুমকির মুখে, যখন সার্বভৌমত্বের বুকে আবার সেই বন্ধু রূপী শকুনের হানা দেবার পাইচারা চলছে জ্যোৎসাহেব, তখনছাত্র জনতা থেকে শুরু করে ডান-বাম, পিএনপি, জামাত, গণসংগতি, হেফাজত, কিংবা জাষদ, এমনকি জগন্নাথ হলের হিন্দু শিক্ষার্থী, সবার কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মাওলানার সেই স্লোগান: পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করবার জন্য।
সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত
বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতার জন্য আপামর জনতার ক্রমাগত লড়াই আর দেশমাতৃকার সাথে গাদ্দারী করা বেইমানদের ইতিহাস। সেই যে পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতার সূর্যটা অস্থমিত গেল, এরপর বহু রক্ত, বহু শাসন, শোষণ, বঞ্চনার পরেও কেন সেই সূর্যকে পূর্ব দিগন্তে উদয় হতে দেখা গেল না?
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানিরা কেন শেখ মুজিবের চেয়ে তাজউদ্দীনকে বেশী ভয় পেতো
বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই ও চ্যালেঞ্জ
স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৪ বছর পর, চব্বিশের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে, যখন নতুন করে আবারো সোনালী সূর্যের আভা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে কেন মেঘ হয়ে দেখা দিল তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত?
পতিতালয়ের কি আছে এখানে? আর কারো কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম, দেওয়ার অভ্যাস বেশি। আমরা ভারতকে যে দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। মেঘ সরিয়ে কি করেই বা আবার সেই সোনালী সূর্যকে অবমুক্ত করবে বাংলাদেশ? (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)

সার্জাট মিস্ত্রির আজকের পর্বে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব, শেষ পর্যন্ত। সাথেই থাকুন চ্যানেলে, নতুন হয়ে থাকলে প্লিজ লাইক অ্যান্ড সাবস্ক্রাইব।
মনসুন্দর রেভোলিউশন, জেঞ্জি রেভোলিউশন কিংবা জুলাই বিপ্লব, যে নামেই ডাকা হোক, ২০০০-২৪ এর জুলাই, বাংলাদেশ নামক জনপদের মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ইতিহাসের ১ মহাসন্ধিক্ষণে।
১৮ বছর ধরে বাংলাদেশের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত জেগে বসা সাম্রাজ্যকারী শক্তির গোলাম শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পর, বাংলাদেশ মুখোমুখি আরো বৃহত্তর দত্ত, মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারত। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত) শুরুটা হলো তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে,
বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রমাণের মধ্য দিয়ে।
বলা বাহুল্য, দিল্লির দাসী হাসিনার উপরে ভারতের বিশাল ইনভেস্টমেন্ট ছিল, তাই বাংলাদেশে ভারতের প্রক্সি সরকারের পতনকে ভারত সরকার নিজেদের পতন হিসেবে ধরে নিয়ে প্রতিশোধ পরায়ণ হতে থাকে বাংলাদেশের প্রতি।
ট্রাম কার্ড হিসেবে খেলা হয় হিন্দু নির্যাতনের কার্ড। পাঁচটি আগস্ট, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যায় অংশ নিয়েছিলো, তাদের উপর বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু হিন্দু নেতাকর্মীও ছিল।
কিন্তু, ভারতীয় গদি মিডিয়া সেটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হিন্দু গণহত্যা হিসেবে প্রচার করতে থাকে। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ – পৃথিবীর মানচিত্রে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র
জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
শুধু আমার সমস্যা যেটা, আমার দেশের মেন্টালি মিডিয়াকে নিয়ে। হাসিনার আমলে যখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, শেখ হাসিনার আমলে, আওয়ামী লীগের আমলে, যখন পুজো মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে, দুহাজার ২১ সালের কথা আমি বলছি, বা বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এই সময় কিন্তু এখন যারা ভারতীয় ফার রাইট প্রতিদক্ষিণ পন্থীরা বা অন্যান্য মানুষজন যারা খুব স্বচ্ছার হয়ে উঠেছেন, তারা সেই সময় স্বচ্ছার ছিলেন না।
আমরা আমরা, যারা ভারতবর্ষের মাটিতে দাঁড়িয়ে অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, বিভাজনের বিরুদ্ধে, এটা আমাদের যন্ত্রণার জায়গা, এবং আমার মনে হয়েছে যে মেডিসিন রাজনীতি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদ ভবনটি করেন।
তিনি চেষ্টা করেছেন যে এই যে পশ্চিমবঙ্গে, ক্রম বর্ধমান বাংলাদেশ বিদ্বেষের সুযোগটা, এর সুবিধাটা যেন কেবলমাত্র বিজেপি না পায়।
সার্বিকভাবে, মুসলমান বিদ্বেষ কিন্তু একটা ব্যাপক তীব্র চেহারা নিয়েছে, এটা পশ্চিমবঙ্গেও নিয়েছে, এটা খুব দুঃখজনকভাবে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংস্থা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, হিন্দুদের উপরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিবরণ তুলে ধরে।
এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়েই রয়টার্স, আল জাজিরার মতন আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলো হিন্দু নির্যাতনের একশো তেত্রিশটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং টুইটারে ১১০০০০০০ টুইটের সোর্স হিসেবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এই প্রতিবেদনকেই উল্লেখ করা হয়।
সেই প্রতিবেদনে তারা ৯ জন হিন্দু নিহত হবার খবর প্রকাশ করে, কিন্তু
নেত্র নিউজের ১ প্রতিবেদনে দেখানো হয়, এই মৃত্যুর ঘটনাগুলোর নেপথ্যে সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় অভিসন্ধি থাকার কোন স্পষ্ট লক্ষণ নেই।
বরং, ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই রাজনৈতিক সহিংসতা, গণ সহিংসতা এবং বৈষয়িক অপরাধমূলক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। নেত্র নিউজে রিপোর্টে বলা হয়েছে, রংপুরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হারাধন হারার হত্যাকান্ড ও আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের গুলিতে নিহত বিএনপি কর্মী রিপন চন্দ্রশীলকেও সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহত বলে দেখানো হয়।
(সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত) এতেই খামতো হয়নি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকারকারী ভারত ও তার এদেশীয় দোসররা, পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে দুর্গাপূজার সময় নতুন করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করা হয়।
জানুন: ভারত বাংলাদেশের চেয়ে কতটা শক্তিশালী
ভারতীয় প্রোপাগান্ডা ও তথ্যসন্ত্রাস
কিন্তু যাদের মৌলবাদী বলে এতদিন কোন ঠাসা করে রাখা হয়েছিল, তারাই রাত জেগে মন্দির পাহারায় লেগে যায়, রুখে দেয়া হয় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের নীল নকশা।
এরপর, হিন্দু অধিকারের ধূয়া তুলে মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে এনে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ এমন একটা বয়ান তৈরির প্রচেষ্টা চলতে থাকে। এবং সেই বয়ান সামনে রেখে বাংলাদেশে ভারতীয় স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান স্কন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ আর দফার দাবি নিয়ে দেশকে আরো অস্থিরশীল পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা চালাতে থাকে।

এবং, খুব সম্প্রতি বহিস্কৃত স্কননেতা হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করা হলে সেটাকে ইস্যু করে আবারও সারাদেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হয়, এমনকি আদালত প্রাঙ্গণে সরকার পক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে, রায়উড সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে।
সাইক্লোন সার্ভিসের মালিক কে, এ সংক্রান্ত সন্ত্রাসী সোহেল, খুন করলো সে, এখন লাস্ট জন আছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রয়টার্সের বাংলাদেশি প্রতিনিধির রুমা পাল, সাইফুল ইসলামকে উল্টো চীনময়ের আইনজীবী বলে রিপোর্ট করে।
হাসিনার পতনে ভারতের অভ্যন্তনির রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ দেখলেই বোঝা যাবে, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী। আগরতলায় বাংলাদেশের উপহার কমিশনে হামলা চালায়, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর সুস্পষ্ট আঘাত, কিন্তু হাসিনার পতনে ভারতের শরীরে এমন আগুন লাগার কারণ কি হতে পারে?
যে তারা রায়উড সৃষ্টি করে হিন্দুদের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাষ্ট্রপ্রমাণ করতে চায়, বাংলাদেশকে অস্থিরশীল করে ভারতের কি লাভ? তবে কি হিন্দু রক্ষার অজুহাতে ভারত বাংলাদেশ দখল করে নিতে চায়?
ভারত জন্মলগ্ন থেকেই আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র, বস্তুত উনিশশো সাতচল্লিশে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত বিশ্বশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সেই স্বপ্নের ভিশুয়াল মডেল হিসেবে তারা সামনে আনে মর্য সাম্রাজ্যকে, আর সেই নতুন সাম্রাজ্যের কৌতুহলের ভূমিকা অগতির নহান পন্ডিত জবর লাল মেহেরবু, গ্রেটার ইন্ডিয়া তথা ভারতকে বিশ্বশক্তি করার সেই সুপ্ত বাসনা উঠে এসেছে।
পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর নেহেরু ডক্টর ট্রেনে, নেহেরু তার বিখ্যাত বই “দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া”-তে বলেন, ভারত অবসম্ভাবিভাবেই তার আধিপত্য বিস্তার করবে, ভারত মহাসাগরী অঞ্চলে ভারত হবে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র, ছোট জাতিরাষ্ট্রগুলো সাংস্কৃতিকভাবে সায়াত্তর শাসিত অঞ্চল হিসেবে থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকবে না।
সম্রাট যুবাদী ভারতের মুখোশ খসে পড়ে তার জন্মের মাত্র ১ বছরের মাথায় আজকের দিনে ভারতের অংশ হায়দ্রাবাদ, মুঘল সম্রাট আউরঙ্গদেবের মৃত্যুর পর স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
আরও পড়ুনঃ পিলখানা হত্যাযজ্ঞ যেভাবে কারণে ঘটানো হয়
পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে চলে আসে, যখন ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশ থেকে তল্পীতলপাগ গুছানো শুরু করলো, তখন তারা এই অঞ্চলগুলোকে স্বাধীনতা দেবার ঘোষণা করল, উনিশশো ৩৫ সালে গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া একটি হায়দ্রাবাদকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দান করা হয়েছিল।
ভারত বিভাগের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই থাকতে চেয়েছিল চারদিক থেকে ভারত ঘেরা ল্যান্ডলক এই ভূখণ্ড, কিন্তু স্বাধীন হায়দ্রাবাদ ভূখণ্ডের দিকে সম্রাজ্যবাদী ভারতের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যায়। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)
তারই অংশ হিসেবে উনিশশো ৪৭ সালের পনেরোই আগস্ট স্বাধীনতা পাবার পর থেকে নভেম্বের মাস পর্যন্ত ভারত হায়দ্রাবাদের নানা রকম অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে থাকে, রামানন্দ তীর্থ নামক হিন্দু নেতার নেতৃত্বে উস্কে দেয়া হয় সাম্প্রতিক দাঙ্গা।
তৎকালীন হায়দ্রাবাদ সরকার কঠোর হস্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা শুরু করলে রামানন্দ তীর্থ ভারতে পালিয়ে যায় এবং ভারত সরকারের সাথে মিলিত হয়ে হিন্দু রক্ষার নাম করে হায়দ্রাবাদ দখলের নীল নকশা প্রস্তুত করতে থাকে। ভারতের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় শুরু হয় কুখ্যাত তেলেঙ্গানাবিত্র।
ভারতীয় আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা হায়দ্রাবাদের
উনিশশো ৪৮ সালের জুলাই মাসে জহরলাল নেহেরু ঘোষণা করলেন, যখন প্রয়োজন মনে করব তখনই হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে। সেই সালের তেরোই সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী অপারেশন পোলুন নামে হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে।
১৯৪৮ সালের আঠারোই সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি আল ইদ্রুজ, রাজধানী হায়দ্রাবাদের বাইরে গিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জেহেন চৌধুরীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
পাঁচই আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতের ১ উচ্ছত্র আধিপত্য সজোরে ধাক্কা খায়, নিউজপেপার মিডিয়া এবং পোষা বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা তৈরি বয়ান এবং ডিপস্টেইটে থাকার তাবিদারকে দিয়ে সেই বয়ানের বাস্তবায়ন এবং ইম্পোজিশন সম্পন্ন করতে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল ভারতকে।
শেখ হাসিনার চতুর্থ মেয়াদে রেল চাঞ্জির চুক্তি এবং মংলা বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব লাভের মধ্য দিয়েই সেই অপেক্ষার ফল তোলা শুরু করেছিল ভারত, কিন্তু তাতে বাঞ্ছাধে জুলাইয়ের ছাত্র আত্মহত্যা, তিল তিল করে গড়ে তোলা কাঠামো কতগুলো পুঁচকে ১ মাসে তছনছ করে দেয়। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)
শুধু তাই নয়, তাদের তৈরি করা নেগেটিভকে কাউন্টার করাও শুরু হয়, কালচারাল হেজাবনি বিস্তারের প্রধানতম মাধ্যম বাঙালি জাতীয়তাবাদ, যার জন্ম কলকাতার হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের মাথা থেকে।
তার বিপরীতে শাহী বাংলা কথা, বাংলার ইতিহাসের সোনালী সময়ের সভ্যতাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের ধারণা সামনে নিয়ে আসা হয়। তরুণ প্রজন্মের সামনে যেই মোটিফাইড হিস্ট্রি এতদিন তুলে ধরা হয়েছিল, তা নাকোঝ করা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে অর্ধশতাব্দীর চেষ্টায় বাঙালির তো বনাম মুসলমানির তো স্বাধীনতা।
বনাম ইসলামের যেই গুটি সাজানো হয়েছিল তা ১ মাসেই এলোমেলো হয়ে যায়। ভারত খুব ভালো করেই বুঝতে পারে তারা যেই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল, সে বাংলাদেশ সেই অবস্থা থেকে অবধারিতভাবেই সরে দাঁড়াবে। যে স্পিরিট নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, সেই স্পিরিট যদি অটুট থাকে, তবে বাংলাদেশ তার শিরদাঁড়া উঁচিয়ে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলবেই।
আর তাতে করে ভারতের যেই সুপ্ত অভিলাষ, তা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। ভারতের যেই রাজনৈতিক ও সামরিক উচ্ছাবিলাস, তার জন্য বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেজন্যই পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রীয় এবং মংলা সমুদ্র বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চেয়েছিল ভারত।
বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে সমুদ্র যুদ্ধে চীনের সাথে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতো ভারত। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা আর চট্টগ্রাম অংশের জন্যই বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ দরকার ছিল ভারতের। হ্যাঁ, ঠিক এই কারণেই প্রথমে সিকিম স্টাইলে লেন্দুভ দর্জির মত করে হাসিনাকে তৈরি করে ভারত।
কিন্তু হাসিনার পতনের পর, যখন সিকিমের মতো বিনা যুদ্ধেও বিনা বাধায় বাংলাদেশ অস্তান্তর অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তখন হায়দ্রাবাদ স্টাইল অ্যাপ্লাই করে ভারত।
শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া
ঠিক হায়দ্রাবাদে যেভাবে রামানন্দ তীর্থের দ্বারা হিন্দুদেরকে ব্যবহার করে অস্তিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, এবং পরবর্তীতে হিন্দুদের রক্ষাও শান্তি স্থাপনের নাম করে চালিয়েছিল সেনা অপারেশন, একই কায়দায় বাংলাদেশে চীনময় কৃষ্ণের দ্বারা হিন্দুদের ক্ষেপিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, মিডিয়া প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সেনা অপারেশনের সুযোগ সৃষ্টি করায় ভারতের বর্তমান কার্যকলাপের নেপথ্যের কারণ। ভারত অবধারিতভাবেই তার এই আগ্রাসীনিটি বাস্তবায়ন করতে চাইবে।
নেহেরু এই গ্রেটার ইন্ডিয়াতত্ত্ব অবধারিতভাবেই আধিপত্য বিস্তারী। চোদ্দ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার তার সাথে যোগ হয় বিজেপির অখন্ড ভারত দত্ত। নেহেরু প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোর রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করে সাংস্কৃতিকভাবে স্বাধীন থাকার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু আর এসএস এর পলিটিক্যাল উইং বিজেপির অখন্ড ভারততত্তের মূল কথা হচ্ছে হিন্দু ছাড়া সকল ধর্মের স্বাধীনতা হরণ এবং অস্তিত্ব বিলীন করা। তাদের গৃত ভাগোয়া লাভ ট্রাক ও ঘর ওয়াফ সি প্রজেক্ট সেটাই নির্দেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ কি করে এই আধিপত্যবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করবে? উত্তরটা দিয়েছেন ইতালিও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এন্ডথোনি ও গ্রামসী।
গ্রামশি সেগুলো হলো ওয়ার্ক ম্যানুভার আর ওয়ার্ল্ড পজিশন। ওয়ার অফ ম্যানুভার দ্বারা গ্রামশি বুঝিয়েছেন বিপ্লবকে। বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়ানখকে ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার দখলের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করা যায়, যা জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা ইতিমধ্যে সংঘটিত করেছি।
কিন্তু তাদের তৈরি করা মতাদর্শ সাংস্কৃতিক কাঠামো তাবিদা শ্রেণীকে একদিনে ভেঙে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রথম আলো অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে গায়ের জোরে সেই ন্যারেটিভ বন্ধ হবে না, বরং আরো সহানুভূতি পেয়ে শক্তিশালী হবে তারা। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)
আমাদের যা দরকার তা হলো ওয়ার্ল্ড পজিশন, যা আমাদের মননে গেঁথে থাকা স্বৈরাচারী মতাদর্শ, সাম্রাজ্যবাদীদের শেখানো বয়ান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চলা আধিপত্যকে চিরস্থিরতার সাথে সম্মুলি উৎপাদন করবে।
(সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত) ওয়ার্ল্ড অফ পজিশন বাস্তবায়নের জন্য এবং পুনরায় সাম্রাজ্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের সুস্পষ্ট আধিপত্যকে রুখতে আমাদেরকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। সেগুলো হলো: একটি সামাজিক জাতীয় চেতনা, যা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল নির্বিশেষে সবাই ধারণ করবে, যেই চেতনা হবে ঐক্যের মালার সুতার মতো।
রেনেসা তথা বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব, যা নিজস্ব জ্ঞান কাঠামো তৈরিও এই মাটি এবং মানুষের সাথে যায় এমন সমাজ চিন্তা নির্মাণ করবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় জাতির করণীয়
১৯ শতকে যেই বাঙালির রেনেসা হয়েছিলো, সেটা ছিল মূলত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু রেনেসা, তাতে মুসলমানদের জীবনের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। নতুন সংঘটিত বুদ্ধিবিপ্লব হবে বাঙালি মুসলমানদের রেনেসা।
শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা গঠন, যা শত্রু দেশের ইন্টেলিজেন্সের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স হবে। আমাদের একটা বিসিআই আর অনেকগুলো মাসুদ রানা দরকার।
আকর্ষণের শিকার দুর্বল দেশগুলোকে নিয়ে জোট গঠন এবং পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপন, প্রয়োজনে স্যারকে পুনরায় গঠন করা। চীনের মতো শক্তিশালী দেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করা, কারণ পরাশক্তি প্রতিবেশীর আগ্রাসন রুখতে দূরবর্তী পরাশক্তির সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার পলিসি একটি কার্যকর পলিসি।
কেউবা রুশবোলয়ে যাওযা কিংবা জাপান, সাউথ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের মার্কিন বলায় থাকা, তাই প্রমাণ করে। আসার কথা হচ্ছে প্রধান উপদেশটা, যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান, তাতে প্রায় সকল দলই সাড়া দিয়েছে। (সীমান্তের ওপারে আগ্রাসী ভারত)
নিজেদের মধ্যে যতই ভেদাভেদ থাকুক, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সকলে ১ মঞ্চে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এরকম ঐক্য বজায় থাকলে, যেই অভিসন্ধি নিয়ে ভারতে গড়ছে তা বাস্তবায়ন সম্ভবকর হবে না, বরং অদূর ভবিষ্যতে আবারও আমরা শাহী বাংলা গঠনের দিকে ধাবিত হতে পারব।
ভারতীয় আগ্রাসনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভারত, যেভাবে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনাকে ট্রেনিং দিয়ে করে তুলেছিল, আজকের এই দিনের জন্য, ঠিক একইভাবে তারা ভারতের পুতুল হিসেবে হাসিনা কন্যা পুতুলকে তৈরি করছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
তাদের রেখে যাওয়া শেকড় সমলে উৎপাদন করতে না পারলে, অভিশপ্ত শেখ পরিবার বাংলাদেশকে শান্তিতে থাকতে দেবে না, আবারও তারা হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নীল নকশা বানিয়ে বাংলাদেশকে পর্যুদস্ত করতে থাকবে। মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না কখনই।
Comments ২